সৈয়দপুরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন-২ প্রকল্প- নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :

সৈয়দপুরে আশ্রয়ন প্রকল্প - ২ এর আওতায় সুবিধাভোগীদের জন্য ঘর নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম ও তুঘলকি কারবার শুরু হয়েছে। যদিও প্রকল্পের মেয়াদ গত ৩০ জুলাই শেষ হয়। কিন্তু এখনও প্রকল্পের একটি ঘরও তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে চলছে ঘরের জন্য সিমেন্টের আরসিসি পিলার ও কাঠের দরজা-জানাজা তৈরির কাজ। আর এসব কাজে প্রকল্পের নীতিমালা ও সিডিউল  যথাযথভাবে মানা হচ্ছে না। প্রকল্পের সৈয়দপুর উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) সভাপতি ও  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বজলুর রশীদ নিজের ইচ্ছে মাফিক কাজগুলো করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।  সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ন- প্রকল্প- ২ এর অধীনে সৈয়দপুর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৩০০ ঘর নির্মাণের জন্য তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। দুঃস্থ অসহায় মুক্তিযোদ্ধা, বিধবা মহিলা, স্বামী পরিত্যক্তা মহিলা, শারীরিকভাবে পঙ্গু ও আয় উপার্জনে অক্ষম, অতি বার্ধক্য এবং পরিবারে আয় উপার্জনক্ষম সদস্য নেই এমন ব্যক্তি যাদের ১ থেকে ১০ শতাংশ জমি আছে তারাই হবেন এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী। ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ’ করে দেয়ার জন্য এই প্রকল্পের সুবিধাভোগী বাছাইয়ে উপজেলা পর্যায়ে একটি  বাস্তবায়ন কমিটি রযেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ওই কমিটির সভাপতি। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) হচ্ছেন পিআইসি কমিটির সদস্য সচিব। কমিটিতে সদস্য হিসেবে আরো রয়েছেন উপজেলা  সহকারি কমিশনার (ভূমি), এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান। প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী সুবিধাভোগী বাছাইয়ে এলাকায় মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে দরখাস্ত আহবান করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। ফলে অনেক স্বচ্ছল পরিবার এমনকি ভিন্ন উপজেলার পরিবারও এই সুবিধাভোগীর তালিকায় ঠাঁই পেয়েছে।  বঞ্চিত হয়ে প্রকৃত দুস্থ,অসহায় মানুষ। এদিকে নীতিমালা অনুযায়ী  গেল ৩০ জুন ঘর নির্মাণ কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখন পর্যন্ত এখানে একটি ঘরও তৈরি হয়নি। বর্তমানে তিন শ’ ঘরের জন্য সিমেন্টের আরসিসি পিলার ও কাঠের দরজা-জানাজা তৈরির কাজ চলছে। পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির) কমিটির মাধ্যমে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির নিয়ম থাকলে পিআইসি’র সদস্যদের অন্ধকারে রেখে সভাপতি একক ক্ষমতাবলে তাঁর পছন্দের লোককে সাব কন্ট্রাক্ট দিয়ে ওই কাজগুলো করাচ্ছেন। ফলে পিলার তৈরিতে সৈয়দপুরের উৎপাদিত ননগ্রেড রড ও নিম্নমানের ইটের খোঁয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।
 উপজেলার বাঙালিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান প্রণোবেশ চন্দ্র বাগচী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছি ঠিকই। কিন্তু এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। প্রকল্পের কোন রকম নীতিমালা ও সিডিউল আমাকে দেওয়া হয়নি। এর বেশি কিছু আর  বলতে রাজী হননি তিনি।
অপর সদস্য সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশলী এফ এ এম রায়হানুল ইসলাম এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজী হননি।
সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন বলেন এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাকে অফিসিয়ালভাবে কেউ বিষয়টি জানায় নি। আমি স্থানীয় ঠিকাদারদের মাধ্যমে আশ্রয়ণ প্রকল্প - ২ এর কাজের বিষয়ে জানতে পারি। এ নিয়ে স্থানীয় ঠিকাদাররা ক্ষিপ্ত আছেন। আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ঘর নির্মাণ কাজে নিম্নমানের রড ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তিনি কাজের মান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
 সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বজলুর রশীদ বলেন, যথাযথভাবে সিডিউল মেনে এবং নকশা মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে। এতে কোন অনিয়মের সুযোগ নেই। বাইরের ঠিকাদার দিয়ে সাব কন্ট্রাকের মাধ্যমে কাজ করার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।

পিলার ঢালাই শেষে ১৪ থেকে ২১ দিন কিউরিংয়ে চট ব্যবহার করে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দেওয়া কথা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। দায়সারাভাবে কাজ সমাপ্ত করার চেষ্টা চলছে। এছাড়া দরজা-জানাজা তৈরিতে শাল, গর্জন, জামরুল, কড়ই, শিশু, আকাশমনি, গাছের কাঠ ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও বাস্তবে অল্প বয়সী অসাড় ইউক্যালিপ্টাস গাছের কাঠ ব্যবহার করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় ঘরের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে সুবিধাভোগীসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। কাজে নিয়োজিত দিনাজপুরের বিরলের ঠিকাদার মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, ইউএনও স্যারের সঙ্গে মৌখিক চুক্তিতে আমি কাজগুলো করছি। প্রতিটি ঘর তৈরিতে  আমার সঙ্গে চুক্তি হয়েছে মজুরি বাবদ ১৭ হাজার টাকা।আর  ইউএনও স্যার সব মালামাল সরবরাহ করছেন।




পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 2293172816473323335

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item