তিস্তায় উজানের ঢল অন্য দিকে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়॥এক মিনিটে উড়ে গেছে ৩৪ বসত ঘর॥ আহত ২২

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ৩জুলাই
ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে ঢল নেমেছে। পানি বৃদ্ধি থাকায় তিস্তাপাড়ের মানুষজন যখন দুঃচিন্তাগ্রস্থ ঠিক সে সময় হঠাৎ হানা দিয়েছে ঘুর্ণিঝড়। আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তাপাড়ের পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ফুলছড়িপাড়ায় এক মিনিটের স্থায়ী ঘুর্ণিঝড়ে ওই পাড়ার ১৯ পরিবারের ৩৪ বসতঘর উড়ে গেছে। লন্ডভন্ড করে দিয়েছে ওই পাড়াকে। এ সময় ঘরচাপা পড়ে আহত হয় নারী সহ ২২ জন। ফুলছড়িপাড়ার আজিমুদ্দিন (৪৫) জানান, বৃস্টি ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি বাড়তিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। আমরা নদীর পানি বাড়তি দেখে দুঃচিন্তায় আছি। তার উপর বৃস্টি হচ্ছিল। এ অবস্থায় মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে হঠাৎ করে নদী হতে সৃস্টি হয় ঘুর্ণিঝড়। এক মিনিটের মধ্যেই ঘুর্ণিঝড়টি আমাদের ফুলছড়িপাড়ার হানা দিয়ে লন্ডভন্ড করে বসত ঘর। তখন ঘরচাঁপা পড়ে কমপক্ষে ২২ জন আহত হয়েছে। এ সময় তাদের আতœচিৎকারে পাশ্ববর্তি এলাকার শত শত লোকজন ছুটে এসে ঘরের ভেতর আটকা পড়া পরিবারের লোকজনকে উদ্ধার করে। আহতদের মধ্যে গুরুত্ব এমন ৭জনকে ইউনিয়ন স্থাস্থ্যকেন্দ্র ও ডিমলা হাসপাতালে নেয়া হয়।
আহতরা হলো সরবেশ আলী (৫৫), ছমির উদ্দিন (৩০), মোমেনা বেগম (২৮), হাজেরা বেগম (৭০), জহুরা বেগম (৫৫), রাবেয়া বেগম (৫০), আজফর আলী (৫৫)।
পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দেয়ায় আমরা চর ও নিচু এলাকায় বসবাসকৃত মানুষজনকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করছিলাম। এ সময় হঠাৎ ১ মিনিটের হঠাৎ ঘুর্ণিঝড়ে ফুলছড়ি পাড়ার ১৯টি পরিবারের ৩৪ট ঘরবাড়ী দুমড়েমুচরে গেছে। কারো ঘরের টিনের চালা উড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রদান করা হয়।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, ক্ষতিগ্রস্থদের সরকারীভাবে সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এদিকে উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। নদীর তীরবর্তি চর ও চর গ্রামগুলোর বসতঘরে নদীর পানি প্রবেশ করেছে।
আজ মঙ্গলবার নীলফামারীর ডালিয়ার অবস্থিত দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের বাইশপুকুর পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সেই সঙ্গে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ মিটার। ফলে নদীর পানি ৫২ দশমিক ৫৬ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় তিস্তা বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে এবং শোঁ শোঁ শব্দ আর গর্জন তিস্তা নদী অববাহিকা কাঁপিয়ে তুলেছে। উজানের ঢল ও ভারী বৃস্টিপাতের কারনে তিস্তার পানি হু-হু করে বৃদ্ধির কারনে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল আলম। জনপ্রতিনিধি ও এলাকাবাসী জানায়, উজানের ঢলের বন্যায় তিস্তার চরের টেপাখাড়িবাড়ি, খালিশা চাপানী, ঝুনাগাছ চাপানী, খগাখড়িবাড়ি, পূর্ব ছাতনাই, নাউতারা, ডাউয়াবাড়ি, গোলমুন্ডা, শৌলমারীসহ আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের বসবাসরত পরিবারগুলোক নিরাপদে সরে যেতে বলা হয়েছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, তার ইউনিয়নের ঝাড়সিংশ্বের এলাকায় বসবাসরত ৫শতাধিক পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়।
টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন বলেন, চরখড়িবাড়ি এলাকার বাড়ীতে বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেেছ। সেখানকার সহ¯্রাধীন পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রন পুর্বাভাস ও সর্তকীকেন্দ্র তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায় আজ মঙ্গলবার সকাল ৬টায় ডালিয়ার তিস্তা ব্যারাজ বাইশপুকুর পয়েন্টে তিস্তার পানি ৫২ দশমিক ৪০ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিন ঘন্টা পর সকাল ৯টায় ওই পয়েন্টে তিস্তার পানি আরো ৫ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় আরো ১০ সেন্টিমিটার এবং বেলা তিনটায় আরো ১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার চার সেন্টিমিটার নিচে ৫২ দশমিক ৫৬ মিটার দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।  এছাড়াও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। 
এদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক খালেদ রহীম, জেলা ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা এটিএম আখতারুজ্জামান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার, পূর্ব ছাতনাই ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান, টেপাখড়িবাড়ি ইউপির চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ফেরদৌস আলম টেপাখড়িবাড়ি বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।







পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 5024015073340446740

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item