সৈয়দপুরে ভিন্নদেশী ফল ড্রাগন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা
https://www.obolokon24.com/2018/06/saidpur_22.html
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালকের বাগান পরিদর্শন
তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :
নীলফামারীর সৈয়দপুরে প্রচুর পুষ্টিগুনসম্পন্ন ভিন্নদেশী ফল ড্রাগন চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের দুইটি কৃষি ব্লকে ড্রাগন ফলের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ড্রাগন ফলের চাষ করে আশানুরূপ ফলনও মিলেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সৈয়দপুর উপজেলার ১ নম্বর কামারপুকুর ইউনিয়নের কামারপুকুর এবং ব্রম্মত্তর কৃষি ব্লকে ৪টি ড্রাগন ফলের বাগান করা হয়েছে। এর একটি ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন কামারপুকুর অসুরখাই গ্রামের সনামখ্যাত সজীব সীড্স এর স্বত্ত্বাধিকারী এলাকার একজন আদর্শ চাষী মো. আহসান-উল-হক বাবু। তিনি তাঁর বাড়ি সংলগ্ন ৬০ শতক উঁচু জমিতে ড্রাগন বাগান করেছে।
বৃহস্পতিবার ড্রাগন ফল চাষী মো. আহসান-উল- হক বাবু’র সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, বিদেশী ড্রাগন ফল প্রচুর পুষ্টিগুন রয়েছে। মূলতঃ ইন্টারনেট কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইড থেকে বিষয়টি আমি জানতে পারি। আর তা জেনেই আমি ড্রাগন ফল চাষে আগ্রহী হয়। পরবর্তীতে কৃষি বিভাগ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ড্রাগন ফল চাষাবাদ সম্পর্কে আরো অবগত হন তিনি।
এরপর যশোরের চৌগাছা থেকে ড্রাগন ফলের চারা সংগ্রহ করেন বাবু। আর আগে তাঁর বাড়ি সংলগ্ন ৬০ শতক উঁচু জমি ড্রাগন ফলের চারা লাগানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। প্রথমে ২৯৯ টি সিমেন্টের পিলার তৈরি করে সে সব ওই জমিতে স্থাপন করেন। পরে এক একটি পিলারের পাশে ৪ টি করে ড্রাগন ফলের চারা লাগানো হয়। গেল ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসের শেষে চারাগুলো লাগানো হয়। এরপর গাছ বড় হয়ে উঠলে পিলারের মাথায় গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার বেঁধে দেয়া হয়েছে। যথাযথ পরিচর্যায় চারা লাগানোর ১১ মাসের মধ্যে গেল বছরে ড্রাগন বাগানে ফল ধরে। তাঁর বাগানে প্রথম ধাপে গত বছর মাত্র ২৫ কেজি ড্রাগন ফল মিলেছে। যা তিনি তাঁর নিকটাত্মীয়-স্বজন ও পাড়া প্রতিবেশিদের মধ্যে খেতে দেন। আর দ্বিতীয় ধাপে অর্থাৎ এ বছর তাঁর বাগান থেকে ৭০ কেজি ড্রাগন ফল পেয়েছেন তিনি। একটি ড্রাগল ফল ৫০০ গ্রাম পর্যন্ত পাওয়া গেছে। সে সব ৪০০ টাকা কেজি দরে ২৮ হাজার টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করেছেন।
বাবু জানান একটি ড্রাগন ফল গাছ ২০/২২ বছর পর্যন্ত ফল দেয়। তাঁর বাগানে প্রায় এক হাজার ২০০ ড্রাগন ফলের গাছ রয়েছে। সে হিসেবে ড্রাগন ফল বাগানে তাঁর যে ব্যয় হয়েছে তা অল্প কয়েক বছরের মধ্যে উঠে আসবে বলে তিনি আশাবাদী। তিনি ড্রাগন ফলের বাগান করে অনেক লাভবান হবে বলে জানান।
আহসান-উল-হক বাবু ছাড়াও উপজেলার কামারপুকুর কৃষি ব্লকে পাকাতিপাড়ার মো. রাশেদুজ্জামান মানিক ও মো. সাজেদুর রহমান লেবু এবং দক্ষিণ অসুরখাই গ্রামে মো. আব্দুর রাজ্জাক ১০ শতাংশ করে জমিতে ড্রাগন ফলের বাগান করেছেন।
ড্রাগন চাষী মো. রাশেদুজ্জামান মানিক জানান, কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পরামর্শ পেয়ে তিনি ড্রাগন চাষ শুরু করেন। তাঁর বাগানে সাড়ে ৮ শ’ গ্রাম ড্রাগন ফল ধরেছে।
সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোছা. হোমায়রা মন্ডল বলেন, সৈয়দপুর উপজেলার আবহাওয়া ও মাটি বিদেশী ফল ড্রাগন চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। ফলে এখানে ড্রাগন ফল চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে এ উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের ২টি কৃষি ব্লকে ৪টি ড্রাগন ফলের বাগান করা হয়েছে। শুরুতেই এ সব বাগান থেকে ভাল ফলন মিলছে। ড্রাগন ভিন্নদেশী ফল হলেও তা চাষের অপারসম্ভাবনা রয়েছে এখানে। তিনি আরো বলেন, এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছে এ ফলের পরিচিত একেবারে কম। তাই ড্রাগন ফল বাজারজাতে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। আমরা কৃষি সম্প্রারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ড্রাগন ফলের বাজার সৃষ্টিতে কাজ করছি। আশা করি, ড্রাগন ফলের বাজারজাতের সমস্যা অচিরেই দূর হবে। চাষীরা এ ফল চাষাবাদ করে লাভবান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (২১ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ড্রাগন ফল চাষী মো. আহসান-উল-হক বাবু’র বাড়ি সংলগ্ন ড্রাফন ফল বাগান পরিদর্শনে করেছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শাহ্ আলম। এ সময় উপ-পরিচালক শাহ্ আলম ড্রাগন চাষী বাবু’র পুরো ড্রাগন ফলের বাগানটি ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং চাষী আহসান-উল-হক বাবু’র সঙ্গে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ নিয়ে বিস্তারিত কথাবার্তা বলেন। এ সময় নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আবুল কাশেম আযাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মনিরুজ্জামান, রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. আফতাব হোসেন, সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোছা. হোমায়রা মন্ডল, কামারপুকুর ইউনিয়নের ব্রম্মত্তর কৃষি ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার বাসুদেব দাসসহ অন্য কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।