পীরগঞ্জে চাল নিয়ে চালবাজি! চালকল কাগজে আছে, মাঠে নেই!

মামুনুর রশিদ মেরাজুল ঃ
পীরগঞ্জে সরকারীভাবে চাল সংগ্রহে চালবাজি শুরু হয়েছে। কোন চালকলে (হাস্কিং মেশিন) উৎপাদিত চাল খাদ্যগুদামে দিতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা খাদ্য বিভাগ অটো রাইস মিলের সাথে আঁতাত করে চাল ক্রয় করায় চালকল মালিকরা তাদের চালের বরাদ্দপত্র বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে চাতালের হাজার হাজার কর্মঠ শ্রমিক বেকার হয়ে আছে। অপরদিকে উপজেলার অনেক চালকল কাগজে আছে, মাঠে নেই। সেগুলোও চালের বরাদ্দ পেয়েছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রক চালকলের তালিকাও দিচ্ছে না।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, বোরো সংগ্রহ- ২০১৮ তে উপজেলায় সরকার প্রতি টন চাল ৩৮ হাজার টাকায় ৪ হাজার ৩৬৯ মে. টন চাল সংগ্রহ করবে। বরাদ্দের মধ্যে পীরগঞ্জ খাদ্য গুদামে ৩ হাজার ৫’শ ৬৯ মে. টন এবং ভেন্ডাবাড়ী খাদ্যগুদামে ৮’শ মে. টন সংগ্রহ করা হবে। এ জন্য উপজেলার ২০২ জন চালকল মালিক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে চুক্তি করেছে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি টন চালের মুল্য ২৮ হাজার থেকে ২৯ হাজার টাকা। প্রতি টনে ৯ হাজার টাকা করে লাভের আশায় চালকল মালিকরা এবারে খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেও সরাসরি তারা তাদের চালকলে উৎপাদিত চাল গুদামে দিতে পারছেন না। ফলে চালকল মালিকেরা বাধ্য হয়ে অটো রাইস মিলে চালের বরাদ্দ পত্র বিক্রি করেছেন। এবারে সংগ্রহকৃত ৪ হাজার ৩৬৯ মে. টন চালের প্রতি টনে ৯ হাজার টাকা করে ৩ কোটি ৯৩ লাখ ২১ হাজার টাকা মুনাফা হবে। যার মধ্যে ৮৭ লাখ টাকা থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার মতো চালকল মালিকরা পাবেন। অপরদিকে ২ কোটি ৬০ লাখ টাকা মুনাফা পাবে অটো রাইস মিল ব্যবসায়ীরা। এ ব্যাপারে চালকল মালিকরা নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, হাস্কিং মিলের বরাদ্দ হলেও অটো মিলের চাল নেয়া হচ্ছে। এবারে চালের সংগ্রহ মুল্য বেশী হলেও আমরা লাভের মুখ দেখছি না। কারণ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ও উপজেলা ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা অটো রাইস মিলের চাল ক্রয় করবেন বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। এমন শর্ত জুড়ে দেয়ায় বেকায়দায় পড়ে প্রতি টন চালের বরাদ্দপত্র ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় অটো রাইস মিলের কাছে বিক্রি করেছি। ফলে মোটা অংকের মুনাফা লুটে নিচ্ছে অটো রাইস মিল ব্যবসায়ীরা। তারা আরও জানায়, উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের রাফিন এগ্রো ফুডস্ লিঃ ওই চালের বরাদ্দপত্র ক্রয় করছেন। চাল সংগ্রহের উদ্বোধনী দিনেই রাফিন এগ্রো ফুডস্ লিঃ উপজেলা খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ দিয়েছে। ওই চাল কল এবং হাকিম ফুডস লিঃ সাড়ে ৬’শ মে. টন করে চালের বরাদ্দ পেয়েছে বলে জানা গেছে। চালকলগুলোর (হাস্কিং মেশিন) চাতালে চাল উৎপাদন কার্যক্রম না থাকায় চাতালগুলোর হাজার হাজার কর্মঠ শ্রমিক বেকার হয়ে বসে আছে। খাদ্য গুদামে বছরে দু’মওসুমে চাল একইভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অপরদিকে অনেক চালকল কাগজে আছে, বাস্তবে নেই, সেগুলোও চাল সরবরাহের বরাদ্দ পেয়েছে। চালকলগুলো পরিদর্শনে দেখা গেছে, বেশকিছু চাতালের মাঠে ঘাস গজিয়েছে, গরুও চরছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা জানায়, হামরা হালের গরু হলেও হামাক জবো করি খাওয়া যাইতো। কাম-কাজ না থাকায় বেকার হয়া পড়ি আছি। গরুর চায়াও অধম হছি হামরা।
ব্যবসায়ীদের সুত্রে জানা গেছে, এবারে ৩০ কেজি ওজনের বস্তায় চাল গুদামে সংগ্রহ করা হচ্ছে। উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ৩০ কেজির বস্তায় ৩০ টাকা করে উৎকোচ দাবী করলে পরে দরকষাকষির একপর্যায়ে ২০ টাকা হারে নির্ধারন হয়েছে বলে জানা গেছে। এবারের বরাদ্দে মোট ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩৩ বস্তা চালে ২০ টাকা হারে মোট ২৯ লাখ ১২ হাজার ৬৬৬ টাকা উৎকোচ নেয়া হচ্ছে। ফলে চালের গুনগত মানও দেখা হচ্ছে না। এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা অনিমেষ কুমার উৎকোচ নেয়ার কথা অস্বীকার করে বলেন, অটো রাইস মিলের চালের মান ভাল ও ওজন ঠিক থাকে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাইয়েদুল ইসলাম বলেন, হাস্কিং মিলে (চালকল) উৎপাদিত চাল ভাল হলে নেব। তবে অটো রাইস মিলের চালই নিচ্ছি। পাশাপাশি তিনি চালকলের তালিকা দিবেন না বলে জানান।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 2743612659948670686

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item