নীলফামারীতে সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত ও আহত পরিবারে ডিসির সহায়তা প্রদান

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১৮জুন॥
নীলফামারীর সৈয়দপুরে রবিবার (১৭ জুন) রাতে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৯ ও আহত ১১ পরিবারের মাঝে জেলা প্রশাসক আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে।
আজ সোমবার বিকালে এই অর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়  নিহত ও আহত পরিবারের কাছে। সরকারী এই অনুদান নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম নিজে পরিবারগুলোর বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই অর্থ তুলে দেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আজাহারুল ইসলাম জানান, নিহতদের পরিবার প্রতি  ২০ হাজার করে টাকা, রংপুর মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ৮জন পেয়েছে ১০ হাজার করে টাকা ও সৈয়দপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩ জন পেয়েছে ৫ হাজার করে টাকা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আবুজার রহমান, নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মামুন ভুইয়া ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যানগণ।
       নীলফামারী জেলা সদরের চওড়া বড়গাছা ইউনিয়নের নতিবাড়ি ও আরাজী দলুয়া পাশাপাশি দুই গ্রাম। ঈদ আনন্দ শেষ না হতেই সড়ক দূর্ঘটনায় ওই দুই গ্রামের ৭ সন্তান হারানোর ঘটনায় চলছে শোকের মাতম। ওই শোকের মাতম সেখানেই থেমে থাকেনি, ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা ও টুপামারী ইউনিয়নের কিষামত দোগাছি গ্রামেও। একই দূর্ঘটনায় ওই দুই গ্রামের নিহত হয়েছেন ১ জন করে। মোট চার গ্রামে নিহতের সংখ্যা ৯ ।
আজ সোমবার দুপুরে এসব গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম। পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি শোকাহত গ্রামবাসী।
উল্লেখ যে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বাইপাস সড়কের ধোলাগাছ নামক স্থানে রবিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে ওই সড়ক দূর্ঘটনায় ৯ জনের প্রাণহানি ঘটে। তাদের সকলের বাড়ি নীলফামারী জেলার সদর উপজেলায়। তাদের মধ্যে রয়েছে কিশোর, তরুণ ও যুবক। প্রত্যেকের সাধ ছিল অনেক।
আনন্দ ভ্রমণে যাওয়ার সময় খায়রুল ইসলাম (১৪) তার মাকে বলেছিল মোবাইলে ভিডিও করে এনে আনন্দের সে সব দৃশ্য তোমাকে দেখাবো মা। এর পর থেকে তুমি যা বলবে আমি তাই শুনবো।
অপর দিকে শামীম হোসেন (২০) তার নববিবাহিত স্ত্রীকে কথা দিয়েছিল আনন্দ ভ্রমন থেকে ফিরে স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি বাবেন। স্ত্রী পথ চেয়ে ছিলেন স্বামীর ফেতর আসার। অবশেষে স্বামী বাড়িতে এলো লাশ হয়ে।
নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, রবিবার সকালে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে একটি পিকআপ (নীলফামারী-ন-১১-০০০৭) ভাড়া করে এলাকার ২৭ জন কিশোর, তরুন এবং যুবক বিভিন্ন দর্শণীয় স্থানে ঘুরতে যায়। ঘুরাফেরা শেষে দিনাজপুরের স্বপ্নপুরী থেকে বাড়ি ফেরার পথে সৈয়দপুর বাইপাস সড়কে  ধলাগাছ নামক স্থানে পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহি বাসের ধাক্কায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের ধারে উল্টে পড়ে পিকআপটি। এসময় ছিটকে পড়ে পিকআপের চাপায় ঘটনাস্থলেই নয় জনের মৃত্যু হয়। আহত ১১ জনকে পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়। তাদের মধ্যে আট জন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং তিন জন সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
পুলিশ জানায়, নিহতরা হলেন জেলা সদরের চওড়াবড়গাছা ইউনিয়নের নতিবাড়ি গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে রুবেল ইসলাম (২৮) জাবেদ আলীর ছেলে শামীম (২০), আনারুল ইসলামের ছেলে রাব্বী (১৪) রবিয়ার রহমানের ছেলে খায়রুল ইসলাম (১৪), আব্দুর রশিদের ছেলে ডালিম (১৯), হাফিজুল ইসলামের ছেলে মাজেদুল ইসলাম (২০), একই ইউনিয়নের আরাজী দলুয়া গ্রামের আব্দুল হান্নানের ছেলে ময়নুল (২০), গোড়গ্রাম ইউনিয়নের ধোবাডাঙ্গা গ্রামের সুবাস চন্দ্র রায়ের ছেলে বিধান চন্দ্র রায় (২৫), টুপামারী ইউনিয়নের কিষামত দোগাছী গ্রামের মাহবুবুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান (২০)।
এসময় খায়রুলের মা পেয়ারা খাতুন কান্না জড়িক কণ্ঠে বলেন,‘আমি নিষেধ করে ছিলাম ছেলেকে। কিন্তু বলেছিল মা এবারের জন্য অনুমতি দাও। কোথায় যাচ্ছি তোমাকে ভিডিও করে এনে দেখাবো। এরপর থেকে তোমার অনুমতিছাড়া আর কোথাও যাবে না।’
অপর দিকে স্বামীকে হারিয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছেন শামীমের স্ত্রী রাশিদা বেগম (১৮)। তিনি অপেক্ষায় ছিলেন স্বামী আসবে, তাকে (স্ত্রী) নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে যাবে। কিন্তু স্বামীর লাশ হয়ে ফেরাটাকে কোনভাবেই মেনে নিতে পারছেন না রাশিদা বেগম।
শামীমের মা মহচেনা বেগম জানান, পাঁচ মাস আগে জেলা সদরের সংগলশী ইউনিয়নের আতিয়ার রহমানের মেয়ে রাশিদার সঙ্গে বিয়ে হয় শামীমের। বিয়ের হলুদের দাগ না মুছতেই হারাতে হলো ছেলেকে। তিনি বলেন,‘অনেক সাধ করে বিয়ে দিয়েছিলাম ছেলেকে। এখন অকালে ঝড়ে পড়ল সেই সাধ।’
নীলফামারী সদর থানার ওসি বাবুল আকতার জানান, দূর্ঘটনার পর নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সৈয়দপুর থানা পুলিশ ওই নয় জনের লাশ নীলফামারী সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে সোমবার ভোরে পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়।
সৈয়দপুর থানার ওসি শাহজাহান পাশা বলেন, এঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। আহত এবং নিহতদের মধ্যে কেউ বাদি না হলে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করবে। চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে। দূর্ঘটনাকবলিত পিকআপটি থানা হেফাজতে রয়েছে।
চওড়াবড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন জানান, আজ সোমবার দুপুরের মধ্যে নিহতদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। নিহত নয় জনের মধ্যে আমার ইউনিয়নের পাশাপাশি গ্রামের সাত জন রয়েছে। ওই সাত নিহতের মধ্যে প্রায় সবার মধ্যেই আত্মীয়তার বন্ধন রযেছে। একসাথে গ্রামের সাত সন্তানকে হারানোর ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।
পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে হতাহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। আজ সোমবার ভোরে পুলিশ নিহতদের মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে। সকাল থেকে দাফনের প্রক্রিয়া শুরু করেন স্থানীয়রা।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম জানান, সোমবার বিকালে হতাহতদের পরিবারের কাছে তিনি নিজে গিয়ে সরকারিভাবে সহায়তা প্রদান করেছেন। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তিনি বলেন, আগামীতে যাতে এ রকম মর্মান্তিক দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4423576606657710496

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item