দিনাজপুরের দশমাইল হাইওয়ে থানার ওসি আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন
https://www.obolokon24.com/2018/06/dinajpur21.html
তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের দশমাইল হাইওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। আজ (বৃহস্পতিবার) বেলা সাড়ে ১১ টায় নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই অভিযোগ করা হয়। নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে (রংপুর রোড) সংগঠনের নিজস্ব প্রধান কার্যালয়ের হলরুমে ওই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মোজাম্মেল হক।
এতে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, নীলফামারী জেলা পরিবহন মালিকদের সংগঠন হচ্ছে নীলফামারী জেলা বাস- মিনিবাস মালিক সমিতি। এটি মূলতঃ গত ১৯৮৩ সালের গঠিত হয়। শুরুতেই এটির নামকরণ করা হয়েছিল সৈয়দপুর-নীলফামারী মটর মালিক সমিতি। যার নিজস্ব প্রধান কার্যালয় সৈয়দপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত। এ সংগঠনের সদস্যদের বাস, কোচসমূহ সৈয়দপুরের আশপাশের জেলা ছাড়াও রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে পরিবহন সেবা দিয়ে আসছে। ইতোমধ্যে নীলফামারী জেলা বাস -মিনিবাস মালিক সমিতি পরিবহনের মাধ্যমে যাত্রী সেবা দিয়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু বর্তমানে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে দিনাজপুরের দশমাইল হাইওয়ে থানার ওসি মো. আব্দুল মালেকের দৈনন্দিন চাঁদাবাজি ও অপকর্মের কারণে পরিবহন মালিকরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ওসি আব্দুল মালিক দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে দিনাজপুরের দশমাইল হাইওয়ে থানায় দায়িত্ব পালন করছেন। আর তিনি মূলতঃ নীলফামারী জেলার বাস ও কোচগুলোকে চিহিৃত করে মহাসড়কে কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে এবং রিকুইজিশনের ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রতিদিন দেদারছে চাঁদা আদায় করছে। ওসি আব্দুল মালেক রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে বাস, কোচসহ বিভিন্ন যানবাহন থেকে প্রতিমাসে ১০ লাখ টাকার বেশি চাঁদা আদায় করে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়। দূর্ঘটনার শিকার যানবাহন মালিকদের গাড়ি ছাড় করতে নানা রকম ক্রটি বিচ্যূতি দেখিয়ে গাড়ি প্রতি ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত উৎকোচ দাবি করেন ওসি মালেক। তাঁর দাবিকৃত পূরণ না করলে পরিবহন মালিকদের তিনি নানাভাবে হয়রানি করে থাকেন বলে সংবাদ সম্মেলনে বলা করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে বলা হয় বর্তমান সরকার মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি, চাঁদের গাড়ি, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক অবৈধ ঘোষণা দিয়ে চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করেছেন। অথচ সরকারের সে ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে ওসি মালেক ওই সব নিষিদ্ধ ও অবৈধ যানবাহন চলাচলে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা দিয়ে আসছেন। বিনিময়ে তিনি প্রতি মাসে মোটা অংকের অর্থ পকেটস্থ করছেন। ফলে মহাসড়কে একদিকে যেমন তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, তেমনি মহাসড়কে সড়ক দূর্ঘটনার ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। এতে করে মানুষের প্রাণহানি ঘটনা ঘটছে ও জাতীয় সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, বর্তমান সরকার মাদকের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও ওসি মালেক সম্প্রতি রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কের দেবীগঞ্জ বাজারের একটি ধানের চাতাল থেকে তিন মাদকসেবীকে মাদকসহ হাতেনাতে আটক করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আবার রাতের আধাঁরে উৎকোচের বিনিময়ে তাদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আটক ওই মাদক ও তিন আসামী স্থির ছবি সরবরাহ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ওসি আব্দুল মালেকের চাঁদাবাজির ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায় আগামীতে সংগঠনের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচির ডাক দেওয়ার হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়।
নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি তৌকির আহমেদ কেনেডি’র সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আহসানুল হক মুকুল, উপজেলার ৩ নম্বর ফতেজং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ লুনার প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনে নীলফামারী জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি মো. মোফাক্খার আলী স্বপন, সহ-সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম সরকার,সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. নাজির আহম্মেদ, কোষাধ্যক্ষ মো. মারুফ শেখ, সড়ক সম্পাদক -১ মো. তাহ্জিবুল আলম মিন্টু, সড়ক সম্পাদক - ২ মো. মোস্তফা, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সিরাজুল ইসলাম মজনু ও কার্যকরী সদস্য আতাহার হামিদ আরজু উপস্থিত ছিলেন।
ওসি’র বক্তব্য:
দিনাজপুরের দশমাইল হাইওয়ে থানার ওসি মো.আব্দুল মালেকের সঙ্গে মুুঠোফোনে কথা হয় এ প্রতিনিধির। তিনি বলেন তাঁর বিরুদ্ধে নীলফামারী জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সংবাদ সম্মেলনে আনিত অভিযোগগুলোর একটিও সত্য নয়। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি আইনশৃংখলা বাহিনীর লোক। আমি আইনগতভাবেই আমার দায়িত্ব পালন করি। আমার আইনের বাইরে কোন কিছুই করার সুযোগ নেই।
এসপির বক্তব্য:
বগুড়া অবস্থানকারী হাইওয়ে পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল পৌণে ৪টায় তাঁর ০১৭১৩৩৭৩০৯৫ নম্বর মোবাইলে কথা হয়। তিনি বলেন দশমাইল হাইওয়ে ওসি আব্দুল মালেকের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি। আমি বিষয়টি দেখব ।