কেঁচো খুড়তে সাপঃ পীরগঞ্জ কবি হেয়াত মামুদ শিশু নিকেতন শিশুদের জিম্মি করে অধ্যক্ষের দুর্নীতি!
https://www.obolokon24.com/2018/05/rangpur_28.html
অধ্যক্ষের ৪তলা ভবন, জমি দখল, প্রকাশনীর টাকা ভাগবাটোয়ারা, শিশুদেরকে অবরুদ্ধ করে বেতন আদায়
মামুনুর রশিদ মেরাজুল, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে ঃপীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কবি হেয়াত মামুদ শিশু নিকেতন‘র পরীক্ষার হলে মোমবাতির আগুনে এক শিশুর শরীর ঝলসে যাওয়া ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়েই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে একে একে বেরিয়ে আসছে নানান দুর্নীতির খবর। ওই অধ্যক্ষ শিশুদের জিম্মি ও অভিভাবকদেরকে বাধ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উপজেলা সদরে ৪ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মানসহ অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। পাশাপাশি অন্যের জমিও দখল করে নিয়েছেন। এই ক্ষমতাধর অধ্যক্ষ বরাবরই ইউএনওকে তার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি করে নির্বিঘেœ এই অপকর্ম চালিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ১৯৮৯ সালে স্থানীয় কয়েকজন সমাজ সেবক মহৎ উদ্যোগ নিয়ে সরকারী খাস জমিতে ‘উপজেলা পরিষদ কবি হেয়াত মামুদ শিশু নিকেতন’ কিন্ডার গার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ওই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ হিসেবে মাহবুব রহমানকে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগপ্রাপ্তির পর ওই অধ্যক্ষ এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে তার ভাগ্নে-ভাগ্নি, ভাতিজি, জামাইকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। পাশাপাশি বরাবরই প্রতিষ্ঠানটিতে ম্যানেজিং কমিটিতে ইউএনও কে সভাপতি করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজের আর্থিক দুর্নীতি করতে ম্যানেজিং কমিটিতেও আত্মীয়স্বজনদেরকে সদস্য করে আসছেন। বর্তমান ৯ সদস্য বিশিষ্ট ওই কমিটিতে নিকটাত্মীয় ও সরকারী চাকরীদেরকেও সদস্য করে অনায়াসেই অর্থ লুটপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে নার্সারী থেকে ৫ম শ্রেনী পর্যন্ত মোট ৭’শ ২৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে নার্সারীর ৯৩ জনের প্রতিজনের কাছ থেকে প্রতিমাসে ৫‘শ টাকা, প্লে শ্রেনীর ৮২ জনের কাছ থেকে ৫২০ টাকা, ১ম শ্রেনীতে ১‘শ ৯ জন ও ২য় শ্রেনীর ১‘শ ২৪ জনের কাছে ৫‘শ ২০ টাকা করে, ৩য় শ্রেনীতে ১’শ ৯ জন ও ৪র্থ শ্রেনীর ১‘শ ১ জনের কাছে ৫‘শ ৮০ টাকা করে করে এবং ৫ম শ্রেনীতে ১‘ ২০ জনের কাছে ১ হাজার ১‘শ (ডে-কেয়ার) টাকা করে বেতন আদায় করা হয়। এভাবে প্রতিমাসে ৪ লাখ ৬২ হাজার ৪৬০ টাকা বেতন আদায় করে বছরে মোট প্রায় সাড়ে ৫৫ লাখ টাকা আদায় হয় বলে জানা গেছে। কয়েক বছরে আদায়কৃত কোটি কোটি টাকা কোথায় ব্যয় হয়েছে, তা নিয়েও বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ে বেতন পরিশোধে ব্যর্থ হলে ২০ টাকা হারে জরিমানাও হয়। পাশাপাশি উল্লেখিত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছরই সেশন ফিস বাবদ ৬‘শ ১০ টাকা করে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ টাকা আদায় করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, পরীক্ষার সময় একাধিকবার কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে কক্ষে অবরুদ্ধ করেও বেতন এবং পরীক্ষার ফিস আদায়ের পর পরীক্ষা দেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে অভিযোগ হলেও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কোন ব্যবস্থা নেয়নি। অপরদিকে লাখ লাখ টাকা বই বানিজ্য করে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদেরকে বোর্ড বইয়ের বিপরীতে প্রতি শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন প্রকাশনীর ৬/৭ টি সহায়ক বই উচ্চমুল্যে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে। এ ব্যাপারে অনেক অভিভাবক ঘোর আপত্তি তুললেও অধ্যক্ষ তাতে কর্নপাত করেনি বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুকরা জানায়। ওই টাকা অধ্যক্ষসহ অন্যরা ভাগাভাগি করে নেয় বলে জানা গেছে। ওই অধ্যক্ষ উপজেলার ধাপেরহাট মনিকৃষ্ণসেন মহাবিদ্যালয়েও প্রভাষক হিসেবেও চাকরী করছেন। সম্প্রতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেই মোমবাতি জ্বালিয়ে বিদ্যালয়টির পরীক্ষা চলছিল। এ সময় নার্সারীর ছাত্রী ‘জুয়েনা’র শরীর শরীর আগুনে ঝলসে যায়। এর প্রতিবাদে বিদ্যালয়টির কয়েক’শ শিক্ষার্থীর অভিভাবক মানববন্ধন প্রতিবাদ সভা করে ইউএনও’র কাছে অধ্যক্ষের অপসারন চেয়ে স্মারকলিপি প্রদান করে। এরপর থেকেইই অধ্যক্ষের নানান অপকর্মের খবর বের হয়ে আসছে। এ ব্যাপারে জুয়েনার বাবা ওয়ালিউর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছে লাখ লাখ টাকা আদায় করা হলেও বিদ্যালয়টিতে সোলার প্যানেল বা আই.পি.এস’র ব্যবস্থা নেই। অথচ মোমবাতির আগুনে আমার সন্তান পুড়ে গেছে। আমরা স্থানীয় সভাপতি ও ওই অধ্যক্ষের অপসারন ও তার দুর্নীতির বিচার চাই। অনেকেই প্রশ্ন ও অভিযোগ তুলছেন, কিভাবে প্রভাষক হিসেবে বেতন পেয়েও এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যক্ষ হিসেবে বেতনভাতা ভোগ করেন। উল্লেখিত ব্যাপারে অধ্যক্ষ মাহবুব রহমান বলেন, আমি বেতনসহ অন্যান্য টাকা রশিদের মাধ্যমে আদায় করি। আর বিভিন্ন প্রকাশনীর কাছ থেকে নেয়া টাকা আমরা শিক্ষকরা ভাগাভাগি করে নেই। এটা অনেক প্রতিষ্ঠানেই হয়। আমি অনৈতিকভাবে কোন টাকা নেইনি, স্বজনপ্রীতিও করিনি।
সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা সদরের শাপলাপাড়ায় (পীরগঞ্জ বাজারের মাছহাটির কাছে) ওই অধ্যক্ষের জমিসহ এক শিক্ষকের জমি দখল করে কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ৪ তলা ভবন নির্মান করেছেন। অথচ তিনি কোন ঋণ নেননি বলে তিনিই জানিয়েছেন। জমি দখলের ব্যাপারে পৌর মেয়রের কাছে অভিযোগ থাকলেও রহস্যজনক কারণে তার বিচার পাচ্ছে না ভুক্তভোগী শিক্ষক। পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম বলেন, বিষয়টি তদন্ত করতে সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দিয়েছি। বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইউএনও কমল কুমার ঘোষ বলেন, শিগগিরই আমরা একটি অভিভাবক সমাবেশ করে উল্লেখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।