সৈয়দপুর শহরের পঁচানালা খালের ওপর পুনর্নির্মিত সেতুর নাম পরিবর্তন

তোফাজ্জল হোসেন লুতু,সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

 নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের সামনের সড়কে পঁচানালা খালের ওপর পুনর্নির্মিত সেতুটির নামকরণ পরিবর্তন করা হয়েছে। পঁচানালার খননকারী এলাকার এক সময়ের জমিদার পঁচা সরকারের নামে সেতুটির নতুন নামকরণ করা হয় ‘জমিদার পঁচা সরকার সেতু’। যদিও আগে এটির নাম ছিল ‘পঁচানালা সেতু।’
 সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বিগত ১৮১০ সালে দিকে অখন্ড ভারতে বর্তমানে নীলফামারী সদর উপজেলায় পঁচা সরকার নামে একজন জমিদার ছিলেন। আর এখনকার কাজীরহাট ও ঢেলাপীরহাট এলাকায় তেমন কোন নদনদী ছিল না। ফলে এ এলাকায় ফসলি আবাদি জমিতে ভাল ফসল হতো না। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এ অঞ্চলটি উঁচুতে অবস্থিত হওয়ার শুঁকনো মৌসুমে মরুভূমির মতো বিদ্যমান ছিল। আর বর্ষাকালে এলাকার আবাদি জমিগুলো প্রায় সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকতো। বর্ষা মৌসুম শেষেও পানি নিষ্কাশন হতো না। এ অবস্থায় সব দিক বিবেচনায় নিয়ে এলাকার জমিদার পঁচা সরকার একটি নালা খননের সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। তাঁরই নামানুসারে নালাটির নামকরণও করা হয় পঁচানালা। সে সময় ক্যান্টনমেন্ট এলাকা সংলগ্ন পঁচানালার ওপর একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। ইষ্ট পাকিস্তান ওয়াপদা আমলে সেটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর ইষ্ট পাকিস্তান ওয়াপদা দু’ভাগে বিভক্ত হয়। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম হয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড  (পাউবো) ও বাংলাদেশ বিদ্যূৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)। আর সে থেকে পাউবো পঁচানালাটির পুনঃখনন ও সংষ্কার কাজ করলেও দীর্ঘদিন সংস্কার ও মেরামতের অভাবে এক সময়ে পঁচানালা খালের ওপর সেতুটি জরাজীর্ণ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। কিন্তু এর বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ সেতুর ওপর দিয়ে সব রকম যানবাহন চলাচল অব্যাহত থাকে। জরাজীর্ণ সেতু পুনর্নির্মাণ নিয়ে এলজিইডি, পাউবো ও সৈয়দপুর পৌর কর্তৃপক্ষের মধ্যে চিঠি চালাচালি শুরু হয়। এর এক পর্যায়ে গেল ২০১৬ সালের ১ জুলাই গভীর রাতে বালু বোঝাই দশ চাকা বিশিষ্ট একটি ট্রাকসহ সেতুটি ধসে পড়ে। এতে করে ওই সড়কে সকল প্রকার যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে পড়ে। শহরের মানুষ ওই সড়ক দিয়ে চলাচলে চরম দূর্ভোগে পড়েন। এ অবস্থায়  শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে চলাচলের জন্য সৈয়দপুর পৌরসভার পক্ষ থেকে পঁচানালার ওপর একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি করে দেওয়া হয়। এর প্রায় আট মাস পর ২০১৭- ২০১৮ইং অর্থবছরের ২৭ মার্চ পঁচানালার ওপর সেতু পুনর্নিমাণ কাজ শুরু হয়। পাউবো’র অধীনে এক কোটি ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬৩ টাকা টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় সেতুটির পুনর্নিমাণে। দুই দফায় এটির নির্মাণ কাজ হয়। প্রথম দফা নির্মাণকাজ শেষ হয় গত ২০১৭ সালের ৩০ জুন। এরপর বর্ষার কারণে নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে গেল বছরের ১ অক্টোবর দ্বিতীয় দফায় কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা চলতি ২০১৮ সালের ২৪ জুন। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে প্রায় দু’মাস আগেই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রংপুর শহরের বেতপট্টির “মেসার্স রূপান্তর” সেতুটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। সেতুটির নির্মাণ কাজ চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এর নামকরণ নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। সেতুটির নামকরণ পরিবর্তনের দাবিতে নানা রকম মন্তব্য আসতে থাকে। এ অবস্থায় সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন পঁচানালার প্রকৃত ইতিহাসের সন্ধানে নামেন। খুঁজেও পান পঁচানালা প্রকৃত ইতিহাস ও খননকারী জমিদার পঁচা সরকারের নাম। যেহেতু জমিদার পঁচা সরকার পঁচানালা খনন করেন। তাই তাঁর নামানুসারে এবং জমিদার পঁচা সরকারের গৌরবময় স্মৃতিকে ধরে রাখতে পঁচানালার সেতুটির নামকরণ পরিবর্তন করে জমিদার পঁচা সরকার সেতু রাখার বিষয়ে ফেসবুকে মতামত চাওয়া হয়। এতে সেতুটির নাম পরিবর্তনের পক্ষে ব্যাপক মতামত আসে। অবশেষে সেই জনমতামতের ভিত্তিতে পঁচানালা সেতুর নামকরণ জমিদার পঁচা সরকার সেতু রাখা হয়েছে। 
গত সোমবার (৩০ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে নতুন নামকরণ করা ‘জমিদার পঁচা সরকার সেতুটির‘ শুভ উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সৈয়দপুর সেনানিবাসের মেজর মো. মিজানুর রহমান, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরিমল কুমার সরকার, সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী কৃষ্ণ কমল চন্দ্র সরকার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। সেতুটির উদ্বোধনের আগে এক বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
 সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ জানান, এ সেতুটি পুনর্নির্মাণের ফলে মানুুষের দূর্ভোগ লাঘব হয়েছে।    

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4202147297648769243

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item