নীলফামারীতে কালবৈশাখী ঝড়ে নিহত ৭জন আহত ১৫০॥বোরো ধান সহ বিভিন্ন ফসল লন্ডভন্ড

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১১মে॥
প্রচন্ড বেগে বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে নীলফামারীর তিনটি উপজেলা ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকার বিভিন্ন গ্রাম লন্ডভন্ড হয়েছে। গাছ ও ঘর চাঁপায় মা ও শিশু কন্যা সহ ৭ জন নিহত হয়েছে। আহত হয় দেড় শতাধিক ব্যাক্তি। গতকাল বৃহস্পতিবার (১০মে) রাত সোয়া ৯টা  হতে আধা ঘন্টাব্যাপী পর্যন্ত চলা এই ঝড়ে তিন উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ধান, ভুট্টা, বাদাম ও মরিচ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে পড়ে। এ ছাড়া মৌসুম ফল আম লিচু ঝরে পড়েছে। আজ শুক্রবার নিহত ৭ জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম। 

নিহতরা হলোঃ- ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের চিলাহাটি স্টেশনপাড়ার টুকরা মাহমুদের স্ত্রী খোদেজা বেগম (৪০), কেতকীবাড়ি ইউনিয়নের বোতলগঞ্জ গ্রামের মৃত. শাহেরউদ্দিন মুঙ্গুলুর ছেলে আবদার রহমান (৫০), গোমনাতী ইউনিয়নের মৌজা গোমনাতী গ্রামের ধৌলু মাহমুদের ছেলে আব্দুল গনি (৪০), ভোগড়াবুড়ি ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ পিপুলের ছেলে জমিরুল ইসলাম (১২), জলঢাকা উপজেলার পূর্ব শিমুলবাড়ি গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে আশিকুর রহমান (২২), ধর্মপাল খুচিমাদা গ্রামের মোহাম্মদ আলম হোসেনের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (২৮) ও তাদের তিন মাসের শিশু কণ্যা পরীমনি।
এছাড়া নিজের আবাদ করা ধান ক্ষেতের ক্ষতি সহ্য করতে না পেরে আজ শুক্রবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের সাতজান গ্রামের কৃষক জ্যোতিন্দ্রনাথ রায় (৬৫) মারা গেছে। 
ঘর ও গাছ চাপা পড়ে আহতদের মধ্যে ডোমারে ১৩০, ডিমলায় ৩ ও জলঢাকায় ৪ জন বলে জানা গেছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
ডোমার উপজেলার কেতকীবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আমিনুল ইসলাম মাথা চাপড়িয়ে বললেন আমার জমির চারশত মন উঠতি বোরো ধান আর নেই। কাল বৈশাখী ঝড় আমাদের কৃষকদের পথে বসিয়ে দিল।
ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের উত্তর ঝুনাগাছ গ্রামের কৃষক মোতালেব হোসেন বললেন তার ৭ বিঘা জমির উঠতি বোরো ধান বলতে কিছু নেই। জমিতে শুরু ধানের গাছ। এই ক্ষতি কি ভাবে পুষিয়ে নিবো।
জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বললেন আমার বিঘা জমির বোরো ধান হারিয়ে গেল। এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলার ডোমার উপজেলার ৯টি, ডিমলা উপজেলার তিনটি ও জলঢাকা উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন সহ ২২ ইউনিয়নের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।  প্রাথমিক এক হিসাবে কাল বৈশাখী ঝড়ে প্রায় ১৭ হাজার ৭০৫ হেক্টর ফসলি জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে সম্পর্ণ ক্ষতি হয়েছে ১২হাজার ৩৬ হেক্টর জমির ফসল। এর মধ্যে উঠতি বোরো ধান ৯হাজার ২৯৮ হেক্টর, আউশ ধান ৯১ হেক্টর, পাট এক হাজার ৮৩৬ হেক্টর, বাদাম ১২০ হেক্টর, ভুট্টা ৪৭৮ হেক্টর, শাক-সবজি ২১৭ হেক্টর, মরিচ ২৩ হেক্টর ও মুগ ডাল ৩ হেক্টর। 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম জানান, ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকা সমুহ সহ নিহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। নিহত পরিবার প্রতি প্রাথমিক ভাবে ১৫ হাজার করে টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক বলেন ক্ষতিগ্রস্থ্য পরিবার গুলোর তালিকা ও ক্ষতির পরিমান নির্ণয় হলে সরকারী ভাবে সাহার্য্য প্রদান করা হবে।

নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, সরেজমিনে আমি ক্ষতিগ্রস্থ্য এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। কালবৈশাখীর ঝড়ে সীমাহীন ক্ষতিসাধিত হয়েছে। ৮০ ভাগ কৃষি বিনষ্ট হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এই মূহুর্তে সম্ভব নয়।  তিনি বলেন যে মুহুর্তে জমি থেকে ধান ঘরে তোলার সময় সেই সময় এই কালবৈশাখী সব কিছু তছনছ করে দিয়েছে। এখান বোরো চাষীরা এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। যা নীলফামারীর ফসলের এই ক্ষতি জাতীয় পর্যায়েও হানা দিবে।

নীলফামারী ৩ (জলঢাকা-কিশোরীগঞ্জ আংশিক) আসনের আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানান, তার জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে উঠতি বোরো ধানের ক্ষতি এলাকার কৃষকদের কোমড় ভেঙ্গে দিয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা সরকারী ভাবে চেষ্টা করবো।

এ ছাড়া বিভিন্ন সড়কে ভেঙ্গে পড়া বিশাল বিশাল গাছগুলো অপসারনে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন রাত হতে কাজ শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছে। তবে ওই তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা অচল রয়েছে। #



পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7598577765184525368

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item