কিশোরগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মনিটরিং ব্যাবস্থা জোড়ালো না হওয়ায় নতুন গেজেটভুক্ত ৯ টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান বেহাল

মোঃ শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ,নীলফামারীঃ
প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে সবার জন্য শিক্ষাব্যাবস্থা নিশ্চিত করতে বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকার বেসরকারী বিদ্যালয় গুলোকে জাতীয়করণ করছে। কিন্তু বর্তমানে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে গেজেটভুক্ত ৯ টি  সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশ ও শিক্ষার মান অত্যান্ত বেহাল।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য প্রথম ধাপে ৮৪ টি রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয় দ্বিতীয় ধাপে ৮ টি ও তৃতীয় ধানে ১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করন করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরো ১৫ টি রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করার জন্য সুপারিশ করে অনুমোদনের জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান। সরকারী নীতিমালা অনুযায়ী একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  নামে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ জমিতে নিজস্ব ঘর, পর্যাপ্ত শ্রেনীকক্ষ (ক্লাসরুম) আসবাবপত্র, খেলার সরঞ্জাম, রেজিষ্ট্রেশন বা জাতীয়করন হতে কমপক্ষে ১৫০ জন শিক্ষার্থী প্রয়োজন অথচ বিদ্যালয় গুলোতে এর সবই অনুপস্থিত।
গত বৃহস্পতিবার ও শনিবার দুই দিনে উপজেলার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে জাতীয় করণ হওয়া বিদ্যালয় গুলোতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় গুলোতে নেই ভাল অবকাঠামো , আকর্ষনীয় বা শিশু বান্ধব শ্রেণীকক্ষ। বেশির ভাগ বিদ্যালয়ে কাগজে কলমে ১ শত থেকে ১ শত ৩০ জনের উপরে শিক্ষার্থী থাকলে বাস্তবে কোন কোন স্কুলে ২০ থেকে ৩০ জন আবার কোন কোন স্কুলে কোন শিক্ষার্থী চোখে পড়েনি। সবচেয়ে মজার বিষয় হল কোন কোন বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী থাকলে উপস্থিত নেই শিক্ষক। আবার কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা আসেন নিজেদের ইচ্ছেমত। এসবের পিছনে সরকারীভাবে মনিটরিং ব্যাবস্থা জোড়ালে না হওয়া , টাকার বিনিময়ে শিক্ষক নিয়োগ দায়ী বলে জানান সংশিষ্টরা।
গত বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটায় উপজেলার রণচন্ডি ইউনিয়নে বদি শিশু কল্যাণ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০০৮ সালে, জাতীয় করণ হয়েছে ২০১৩ সালের ১ জুলাই। শিক্ষক সংখ্যা ৪ জন। ছাত্রছাত্রী কাগজে কলমে ১০৪ জন। এসময় কোন ছাত্রছাত্রীর দেখা না মিললে একটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা  টিন শেট ঘরে বসে আসেন তিন জন মহিলা শিক্ষক। এসময় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাক্ষাচরন বিদ্যালয়ে না থাকায় সহকারী শিক্ষক নারগিজ আক্তারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, বর্তমানে স্কুলে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা চলছে বাচ্চারা পরীক্ষা দিয়ে চলে গেছে।
এ ব্যাপারে বদি শিশু কল্যান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামাক্ষাচরণ বলেন, আমি ট্রেনিং এ আছি । তবে স্কুলে পরীক্ষা চলছে তাই বাচ্চারা পরীক্ষা দিয়ে একটু আগেই চলে গেছে।
শনিবার বেলা ১২ টার দিকে গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের দলিরাম দোলাপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, ওই বিদ্যালযটি স্থাপিত হয়েছে ২০০৭ সালে। এসময় বিদ্যালয়টির তিন কক্ষ বিশিষ্ট তিনটি কক্ষে মোট ২৩ টি শিশু আলাদা আলাদাভাবে খাতা কলম নিয়ে বসে আছে। বিদ্যালয়টিতে মোট চার জন শিক্ষক থাকলে কোন শিক্ষককে বিদ্যালয়ে উপস্থিত পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয়ে কিছুক্ষন বসে থাকলে লিমন ইসলাম নামে এক কিশোর নিজেকে ওই স্কুলের শিক্ষক বলে জানান, তবে পরে তিনি জানান আমি এবারে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি বর্তমানে প্যারা শিক্ষক হিসাবে বাচ্চাদের পরীক্ষা নিচ্ছি। এর কিছুক্ষন পরে গোলাম রব্বানী নামে এক শিক্ষক এসে বলেন, ভাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন চন্দ্র রায় ট্রেনিং এ আছে আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি আর বাকী দুজনের মধ্যে একজন ছুটিতে অপরজনও ট্রেনিংয়ে আছে।
পুটিমারী ইউনিয়নের পুটিমারী সাতপাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সাতপাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়েছে ২০১২ সালে জাতীয়করণ ২০১৪ সালে । অথচ স্কুলে একটি টিনের ঘর ছাড়া আর কোন অবকাঠামো চোখে পড়েনি।
সাতপাই সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন্নাহার বলেন, আমি ২০১১ সালে বিদ্যালয়ে নিয়োগ পেয়েছি। আগের প্রধান শিক্ষক মারা যাওয়ায় আমি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে আছি। আমাদের  বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রছাত্রী আছে কিন্তু আজকে একটু কম এসেছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদুল হাসান বলেন, আমি বর্তমানে একটি প্রোগামে আছি আপনার সাথে এ বিষয়ে পরে কথা বলব বলে তিনি লাইন কেঁটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মেহেদী হাসানের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলব যে  যে সমস্ত বিদ্যালয়ে কাম্য সংখ্যাক ছাত্রছাত্রী নেই সে সমস্ত বিদ্যালয়ের তালিকা করে ব্যাবস্থা নিতে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ে শিক্ষক উপস্থিত না থাকলে কেউ অভিযোগ দিলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 2687059064557487000

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item