কিশোরগঞ্জে কর্মসৃজন প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজে অনিয়ম- কর্মসৃজনের শ্রমিক দিয়ে চলছে এলজিএসপির কাজ

মোঃ শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ,(নীলফামারী)সংবাদদাতাঃ
তদারকি কর্মকর্তার দায়িত্বে অবহেলার কারনে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় চলতি অর্থ বছরের অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন প্রকল্পের (ইজিপিপি) দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডে কিছু সংখ্যাক শ্রমিক কাজ করলে বেশির ভাগ শ্রমিক কাজ না করেও দিনের পর দিন  কাজে অনুপস্থিত থাকলে তাঁদেরকে  কাগজে কলমে উপস্থিত দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করে ভাগ বাটোয়ারা করে নিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে,  দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধিনে  ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসুচী (ইজিপিপি) ২য় পর্যায়  উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের  ৮১ টি প্রকল্পে ১৮১৬ জন  তালিকাভুক্ত শ্রমিকের বিপরীতে  ১ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সে অনুযায়ী গত ৭ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করে চলতি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি কর্মদিবস সকাল ৮ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত শ্রমিকদের নিদিষ্ট  প্রকল্প এলাকায় কাজ করার কথা থাকলে তদারকি কর্মকর্তার কোন তৎপরতা না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানগণ তাদের ইচ্ছামতো প্রকল্প এলাকা বাদ দিয়ে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে এলজিএসপি প্রকল্পের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। এছাড়াও কোন কোন প্রকল্পে ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ, ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা, দলীয় নের্তাকমী সহ প্রকল্পের শ্রমিকের তালিকায়  নাম থাকলেও তারা কাজ না করে দিনের পর দিন হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা উত্তোলন করে আতœসাৎ করছেন। সোমবার থেকে বুধবার বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ ধরে  নিতাই ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্কুলপাড়া অতেলার বাড়ি  থেকে আজানুরের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার করার কথা থাকলে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রকল্প চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম  রাস্তার সংস্কার কাজ না করে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের দিয়ে এলজিএসপি প্রকল্পের কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।
প্রকল্প এলাকার জাহেদুল ইসলাম, শফিকুল, এয়াকুল সকলে অভিযোগ করে বলেন, প্রতিদিন বৃষ্টির কারণে রাস্তায় কাঁদা জমে থাকায় এলাকাবাসীর চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু মেম্বার রাস্তা সংস্কার না করে কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে এলজি এসপি প্রকল্পের  কাজ করাচ্ছেন।
এ ব্যাপারে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, ভাই আমি না জেনে ভুল করে কর্মসৃজন শ্রমিকদের দিয়ে এলজিএসপির কাজ করছিলাম। আজ থেকে আর করাব না।
নিতাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফারুক জানান, কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিক দিয়ে এলজিএসপি প্রকল্পের কাজ করার কোন নিয়ম নেই। বিষয় আমি মেম্বারকে অবহিত করব।
চাঁদখানা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের এমদাদুলের বাড়ি হতে হরিশ চন্দ্র ডাক্তারের বাড়ী পর্যন্ত ভায়া নুর আলমের বাড়ি হতে বুলবুলের বাড়ী পর্যন্ত রাস্তা মেরামত ভায়া ছয়আনী ইদগাঁহ মাঠে মাটি  গিয়ে দেখা গেছে সেকানে ১৯ জন শ্রমিকের বিপরীতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে এক লাখ ৫২ হাজার টাকা। শ্রমিক সংখ্যা ১৯ জন। সেখানেও ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের এলজিএসপি প্রকল্পের কাজে মাটি ভরাট করছেন। মাত্র ১০ জন শ্রমিক। এসময় প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান লালচাঁন মিয়ার সাথে কথা বললে তিনি জানান, অনুপস্থিত  ৯ জনের মধ্যে একজন জাতীয়পার্টির ওয়ার্ড সভাপতি ও বাকিগুলো চেয়ারম্যানের আতœীয় স্বজন। তারা কোন দিন কাজে আসেননা। কিন্তু হাজিরা খাতায় উপস্থিত দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করেন।
একই ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের  এমদাদুল মেম্বারের বাড়ি হতে শুরু করে মিস্টুলের দোকাল পর্যন্ত ভায়া সয়রা বাড়ি হতে বদিয়ারের দোকান পর্যন্ত ভায়া তাছেরের বাড়ি হতে আকবরের বাড়ি পর্যন্ত ভায়া কামিনের বাড়ি হতে রামের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা মেরামত প্রকল্পে বরাদ্দ দুই লাখ ৫৬ হাজর টাকা। শ্রমিক সংখ্যা ৩২ জন। কিন্তু বাস্তবে শ্রমিক কাজ করছে ১৬ জন । বাকি ১৬ জন শ্রমিক কই জানতে চাইলে প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান সংরক্ষিত মহিলা সদস্য(১,২,৩) মনোয়ারা বেগম বলেন, শ্রমিকরা চেয়ারম্যানের আস্থাভাজন তাই তারা আসেননা। এ বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে বলেছি কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি।
চাঁদখানা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন, কিছু কিছু শ্রমিক অসুস্থ এবং বাকি শ্রমিকরা ধান ও ভুট্টার কাজ করার কারনে কাজে আসতে পারেনাই। আপনার আস্থাভাজনরা কাজে আসেননা বললে তিনি বলেন, তিনি কোন মন্তব্য করেননি।
পুটিমারী ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডের মন্থনা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের  স্কুলের সামনে রাস্তা সংস্কার প্রকল্পে গিয়ে দেখা যায়। সেখানে কাগজে কলমে ১৯ জন শ্রমিক থাকলে বাস্তবে কাজ করছে ৯ জন শ্রমিক। কিন্তু হাজিরা খাতায় ১৯জনকেই উপস্থিত দেখানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে পুটিমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু সায়েম লিটন বলেন, ভাই গরিব মানুষ মাটি কাটার কাম করে। তাছাড়া এসময় ধান কাটামারি চলেছে এইজন্য কাহো আইসে কাহো আইসেনা।
এ ব্যাপারে কাজের তদারকি কর্মকর্তা  প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মির্জা আবু সাইদ বলেন, আমি প্রতিদিন প্রকল্প এলাকায় গিয়ে যেসব শ্রমিক কাজে আসেনা তাদের অনুপস্থিত লিখে দেই। কিন্তু প্রতিদিনতো একটি প্রকল্পে যাওয়া যায়না তাই একটু সমস্যা হতে পারে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোফাখারুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।



পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4305309201473771213

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item