পীরগঞ্জে বাল্যবিয়ে অপ্রতিরোধ্য!

মামুনুর রশিদ মেরাজুল, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে ঃ
পীরগঞ্জে কোনভাবেই বাল্য বিয়ে থামছে না। এ বিয়ে যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে! পীরগঞ্জে বেশ কয়েকটি স্থানে বিয়ের দাবীতে উঠতি বয়সের ছেলেদের বাড়ীতে মেয়েদের অবস্থান কিংবা তারা পালিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করেছে। বিগত ২০১৫ সালে পীরগঞ্জকে আনুষ্ঠানিকভাবে বাল্যবিয়ে মুক্ত ঘোষনা করা হলেও গত ৩ মাসেই অর্ধশতাধিক বাল্য বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নে নিয়োগপ্রাপ্ত নিকাহ রেজিষ্ট্রারদের স্বার্থান্ধতা, অভিভাবকদের অসচেতনতা, আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও দারিদ্রতা, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পারিবারিক শিক্ষার অভাব, উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের রঙ্গীন স্বপ্ন আর সামাজিক প্রভাবের কারনে বাল্য বিয়ে দিনদিন বেড়েই চলেছে। বিগত ২০১৫ সালে পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নকে পর্যায়ক্রমে বাল্য বিয়ে মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৬ সালে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাল্য বিয়েকে লাল কার্ড প্রদর্শনও করে। কিন্তু তারপরও পীরগঞ্জে এ বিয়েথামছে না। উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রাররাই সরাসরি এ বিয়েতে সায় দেয়ায় বাল্য বিয়ে যেন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। ফলে সরকারী নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিটি ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার (কাজী) তাদের অর্থনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ওয়ার্ডভিত্তিক সাব-কাজী নিয়োগ দেয়ায় বাল্য বিয়ে সংক্রান্ত আইন অমান্য হচ্ছে বলে জানা গেছে। পাশাপাশি এক ইউনিয়নের বিয়ে অন্য  ইউনিয়নেও সম্পন্ন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্ট্রাররা অভিযোগ করে আসছেন।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চৈত্রকোল ইউনিয়নের অনন্তরামপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের মেয়ে অনন্তরামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী রাশেদা খাতুন ও একই গ্রাম ওই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর ছাত্রী সাইফুল ইসলামের মেয়ে সাকিলা খাতুন, ঝাড়-বিশলা গ্রামের রাজা মিয়ার মেয়ে ঝাড়বিশলা মাদরাসার ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী- মনিরা বেগম, একই গ্রামের সাজাহান আলীর মেয়ে শাহাজাদী খাতুন (১৪) এবং কুমেদপুর ইউনিয়নের রসুলপুর মাহতাবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর (“খ” শাখার ৪৭ রোল) ছাত্রী বগেরবাড়ী চকপাড়া গ্রামের মোজাম্মেল হোসেনের মেয়ে - লাবনী খাতুন, একই গ্রামের বাতেন মিয়ার মেয়ে ওই বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী- রুনা খাতুন, পলাশবাড়ী গ্রামের বাসেদ মিয়ার মেয়ে ওই বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণীর (মানবিক, রোল-৪৬) ছাত্রী- ফারহানা আক্তার লিমু, ওই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর (রোল-২৭) ছাত্রী মরারপাড়া গ্রামের নুরুল ইসলামের মেয়ে রুনা খাতুন, ওই বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী মোসলেমা বেগমের মেয়ে লাবনী খাতুন এবং বগেরবাড়ী গুচ্ছগ্রামের লাইজু মিয়ার মেয়ে বিপাশা খাতুন (১৫) গত ৩ মাসের ব্যবধানে বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। কুমেদপুর ইউনিয়নে অর্ধশতাধিক বাল্য বিয়ে সম্পাদনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে শানেরহাট ইউনিয়নের এক ইউপি সদস্যও ১০‘শ শ্রেনীর এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন। উপজেলার অন্য ইউনিয়নেও বাল্য বিয়ের ঘটনা ঘটছে বলে জানা গেছে। রসুলপুর মাহ্তাবিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, বাল্যবিয়ের কারনে অনেক ছাত্রী ঝরে পড়েছে। ইভটিজিং, প্রেম, দারিদ্রতা ও সামাজিক সচেতনতার অভাবে বাল্যবিয়ে হয়ে আসছে। কোনক্রমেই বাল্যবিয়ে ঠেকানো যাচ্ছে না।
সুত্রে জানা গেছে, ২০০২ সালের ৭ আগষ্ট উপজেলার ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার হিসেবে কুমেদপুর ইউনিয়নের পলাশবাড়ী গ্রামের নুরুল ইসলাম নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি সরকারী বিধি উপেক্ষা করে ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নে ৩ জনকে সাব-কাজী নিয়োগ দিয়ে বাল্য বিয়ে সম্পন্ন করে আসছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগপ্রাপ্ত সাব কাজীরা হলেন- ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের পাকুড়িয়া গ্রামের রঞ্জু মিয়া, মিল্কি গ্রামের আব্দুস সালাম ও শাহাজাদপুর গ্রামের মামুন মিয়া। তারাই ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী চৈত্রকোল এবং কুমেদপুর ইউনিয়নে গিয়ে বাল্য বিয়ে রেজিষ্ট্রি করছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীর সুত্রে জানা। ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার নুরুল ইসলাম বলেন- বাল্যবিয়ের বিষয়ে রাষ্ট্রের আইন কঠিন। কিন্তু বিয়েটা অন্যতম সুন্নাত, তাই এফিডেভিট বা জন্ম সনদ দেখেই বিয়ে রেজিস্ট্রি করে সুন্নাত পালন করছি। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রেবেকা ইয়াসমীন বলেন, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর/১৬ থেকে এপ্রিল/১৮ পর্যন্ত উপজেলায় ২৯টি বাল্যবিয়ে রোধ করেছি। নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারদের হীনমানসিকতার কারণেই বাল্যবিয়ে রোধকরা সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা নারী ফোরাম সভাপতি মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবা আক্তার মিথি বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে নারী ফোরাম কাজ করে যাচ্ছে। নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারদের কৌশলগত কারনে বাল্যবিয়ে হচ্ছেই। ইউএনও কমল কুমার ঘোষ বলেন, বাল্যবিয়ে সংক্রান্ত অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডা: হরেন্দ্রনাথ গোস্বামী বলেন ‘উপযুক্ত বয়সের আগেই বিয়ে ও সন্তান ধারন করা হলে ‘মা’ রক্ত শূন্যতাসহ নানা জটিল শারীরিক রোগে আক্রান্ত হয়ে মারাও যেতে পারেন এবং সন্তানগুলোও পুষ্টিহীনতাসহ নানা রোগে ভুগতে থাকে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 5473402837061218593

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item