সৈয়দপুরের স্থানীয় শহীদ দিবস শোকাবহ ১২ এপ্রিল কাল

 তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

কাল ১২ এপ্রিল। নীলফামারীর সৈয়দপুরের স্থানীয় শহীদ দিবস। সৈয়দপুরবাসীর জন্য অত্যন্ত শোকাবহ একটি দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনীর বুলেটের আঘাতে প্রাণ দিয়েছিলেন সৈয়দপুর শহরের দেড় শতাধিক বিভিন্ন বয়সী মানুষ। তাই সৈয়দপুরবাসী আজ সেই সব শহীদদের স্মরণ করবেন গভীর শোকে- শ্রদ্ধাভরে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের মধ্যদিয়ে।
’৭১-এর ২৫ মার্চ গোটা দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। কিন্তু উর্দূভাষী (বিহারী) অধ্যূষিত সৈয়দপুর শহরে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়েছিল দু’ দিন আগে অর্থাৎ ২৩ মার্চ। ওইদিন এখানে শুরু হয়েছিল প্রত্যক্ষ লড়াই। গভীর রাতে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা সৈয়দপুর শহরের নিরীহ বাঙ্গালীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চালায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ। ফলে সেদিন অনেকে সর্বস্ব ফেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে পালিয়ে যান সৈয়দপুর শহর থেকে। আশ্রয় নেন শহরের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে। কিন্তু সেদিন অনেকে আবার আটকা পড়ে যান শহরে। সেদিন আটকেপড়া বাঙ্গালীদের ফেলে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) ডা. জিকরল হকসহ অনেকেই সৈয়দপুর শহর ছাড়তে রাজি হননি। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাদের একটি কনভয় ডা. জিকরুল হকসহ প্রায় ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় সৈয়দপুর সেনানিবাসে। এরপর ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সেখানে এদের ওপর দীর্ঘ  প্রায় ১৯ দিন যাবৎ চলে নির্মম শারীরিক অত্যাচার নির্যাতন। ১২ এপ্রিল স্বাধীনতাকামী এ সব মানুষকে নিয়ে যাওয়া হয় সৈয়দপুর শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে রংপুরে। সেদিন এদের রংপুর সেনানিবাসের দক্ষিণে উপশহর নিসবেতগঞ্জ এলাকায় ঘাঘট নদীর বালুচরে চোখমুখ বেঁধে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে মেশিন গানের ব্রাশ ফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) ডা. জিকরুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা ডা. শামসুল হক, ডা. বদিউজ্জামান, জহুরুল হক, আমিনুল হক, কুদরত-ই- এলাহী, আশরাফ আলী, ডা. আব্দুল আজিজ, ডা. মোবারক হোসেন, সমাজকর্মী তুলশীরাম আগরওয়ালা, রামেশ্বর আগরওয়ালা ও রেলওয়ে হিসাব বিভাগের কর্মকর্তা আয়েজ উদ্দিনসহ নাম না জানা আরো অনেকেই।
 স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ নয় মাসে সৈয়দপুরে পাকস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে কতোজন শহীদ হয়েছিলেন তার সঠিক হিসাব না মিললেও বিভিন্ন সূত্রেমতে এদের সংখ্যা দেড় সহ¯্রাধিক। এই শহরে এমনও অনেক পরিবার রয়েছে যাদের কোনো সদস্যকে সেদিন প্রাণে বাঁচতে দেওয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের ১২ এপ্রিলের শহীদ সাবেক প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য (এমপিএ) ডা. জিকরুল হককে ২০০২ সালের সরকার স্বাধীনতা পদক (মরণোত্তর) প্রদান করেন।
এদিকে, কাল বছর ঘুরে আবারও ফিরে এসেছে সেই শোকাবহ ১২ এপ্রিল। সৈয়দপুরের স্থানীয় শহীদ দিবস। দিবসটি নানা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে গভীর শোকে- শ্রদ্ধাভরে পালন করবেন সৈয়দপুরবাসী। দিবসটিতে শহীদদের সন্তানদের সংগঠন প্রজন্ম ’৭১  সৈয়দপুর জেলা শাখার উদ্যোগে গ্রহন করা হয়েছে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি। এ সবের মধ্যে জাতীয় ও কালো পতাকা উত্তোলন, কালো ব্যাজ ধারণ, শোক র‌্যালী, মানববন্ধন, স্মরণ সভা এবং মিলাদ-মাহফিল ও বিশেষ দোয়া। এদিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথে শহরের সকল বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প,কল-কারখানায় উড়ানো হবে জাতীয় ও কালো পতাকা। শহীদ স্মরণে কালো ব্যাজ ধারণ করবেন সকলেই। সকাল সাড়ে ১০ টায় শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় থেকে বের হবে একটি শোক র‌্যালী। বেলা ১১টায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হবে শহরের শহীদ স্মৃতি অম্লান চত্বরে। একই স্থানে স্মরণ সভা বেলা সাড়ে ১১টায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর বাদ জোহর শহরের জামে মসজিদে মিলাদ-মাহফিল ও বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও শহরের সকল মন্দির, গীর্জায় স্ব স্ব ধর্মাবলম্বীরা বিশেষ প্রার্থনা করবেন।      

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 7071693251381390700

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item