নীলফামারী জজ আদালতে দুদকের চার্জশীট জালিয়াতি॥সেরেস্তাদার সহ তিনজন গ্রেফতার

বিশেষ প্রতিনিধি ২৩ এপ্রিল॥
নীলফামারী জেলা জজ আদালতের দায়রা সহকারী (সেরেস্তার) মো. ইসমাইল হোসেনসহ (৩৩) তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তারা নীলফামারী প্রধান ডাকঘরের জালিয়াতি মাধ্যমে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের চার কোটি ৩২ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ের করা মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দাখিল করা আসামীদের বিরুদ্ধে মূল চার্জসিট (অভিযোগপত্র) সরিয়ে দিয়ে ভুয়া চার্জসিট নথিতে সংযোজন করেছে। সেই সঙ্গে ভুয়া ওই চার্জসিট সংযোজনে তিন জন বিচারকের স্বাক্ষর জাল করে তারা। আজ সোমবার দুপুরে নীলফামারী সদর থানা পুলিশ এ ঘটনায় তাদেরকে গ্রেফতার করে।

গ্রেফতার হওয়া অপর দুই ব্যক্তি হলেন, ওই জালিয়াতি মামলার আসামী প্রধান ডাকঘরের সে সময়ের কর্মচারী তছলিম উদ্দিন (৬৫) ও নীলফামারী জজ আদালতের আইনজীবী সহকারী (মুহুরী) আবুল কাশেম (৬০)।
মামলা সূত্রমতে, নীলফামারী প্রধান ডাকঘরে ২০০৫ সালে ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংকের চার কোটি ৩২ লাখ টাকা জালিয়াতি করে আত্মসাতের ঘটনায় দুইটি মামলা দায়ের হয় (মামলা নম্বর জিআর ৮৭/০৫ ও ৯৭/০৫)। পরবর্তীতে মামলা দুইটি দুদকের নিকট হস্তান্তরিত হলে জেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে স্পেশাল কেস নম্বর ০৮/১৬ ও ০৭/১৬ হিসেবে চালু হয়। ওই মামলার তদন্ত শেষে দুদক ২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট পাঁচ জনের নামে চার্জসিট দাখিল করেন।

নীলফামারী জেলা জজ আদালতের দায়রা সহকারী (সেরেস্তাদার) মো. ইসমাইল হোসেন মামলা দুটির চার্জসিটের নথি গ্রহন করে রহস্যজনকভাবে দুই মাস দুই দিন পর  ২০১৬ সালের ৩১ অক্টোবর গ্রহন দেখান। পাশাপাশি দুদকের দাখিল করা মূল চার্জসিট বদলিয়ে একটি ভুয়া চার্জসিট মামলার নথিতে সংযুক্ত করেন। ওই ভুয়া চার্জসিটে ৫ আসামীর মধ্যে তিন জনের নাম রেখে অপর দুই জনের নাম বাদ দেয়া হয়। ২০১৭ সালের ৬ মার্চ মামলা দুটির শুনানী কালে দুর্নীতি দমন কমিশনের সরকারী আইনজীবী নথিতে সংযুক্ত ও দুদকের দাখিল করা চার্জসিটের গরমিল দেখতে পেয়ে আদালতের নজরে আনেন। আদালতের বিচারক নথিতে থাকা ওই চার্জসিট যাচাইয়ের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন সম্বন্বিত জেলা কার্যালয় দিনাজপুরের উপ-পরিচালক বরাবরে পাঠানোর আদেশ দেন। যাচাইয়ে মামলার নথিতে ভুয়া ওই চার্জসিট সংযুক্তের বিষয়টি প্রমানিত হয়।
এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল নীলফামারী থানায় দায়ের করা মামলার আরজিতে বলা হয়, ওই জালিয়াতিতে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট শেখ মো. নাসিরুল হক, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. সামিউল ইসলাম, মুহাম্মদ আকরাম হোসেনের স্বাক্ষর জাল করা হয়েছে। মুল আদেশগুলোতে আদালত পুলিশ কর্মকর্তার হাতের লেখার সঙ্গে সংযুক্ত ভুয়া চার্জসিটে একই কর্মকর্তার হাতের লেখা অমিল পাওয়া যায়।

নীলফামারী সদর থানার ওসি বাবুল আকতার বলেন, ওই নথি জালিয়াতির ঘটনায় জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসির ভারপ্রাপ্ত নাজির সোহেল শাহ্ বাদি হয়ে গত ১৯ এপ্রিল ৪৬৬, ৪৬৮ ও ৪৭১ ধারায় থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় জেলা জজ আদালতের দায়রা সহকারী মো. ইসমাইল হোসেনকে প্রথমে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যে এক আইনজীবীর সহকারী(মুহুরী) আবুল কাশেম ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক জালিয়াতি মামলার আসামী নীলফামারী প্রধান ডাকঘরের সে সময়ের কর্মচারী তছলিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়। বিকালে তাদেরকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সামিউল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়।

নীলফামারী জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অক্ষয় কুমার রায় বলেন, ২০০৫ সালে দায়ের হওয়া মামলাটিতে একটিতে পাঁচ জন আরেকটিতে সাত জন আসামী ছিলেন। দুদক মামলা দুটি তদন্ত করে পাঁচ জনের নামে চার্জসিট দাখিল করেন আদালতে। পরবর্তীতে একটি চক্র ওই চার্জসিটের মূল নথি সরিয়ে দুই জনের বাদ দিয়ে তিন জনের নামের ভুয়া একটি চার্জসিট সংযুক্ত করেন। বিষয়টি জানাজানিতে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তে ওই জালিয়াতির সঙ্গে জেলা জজ আদালতের দায়রা সহকারী মো. ইসমাইল হোসেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1094140941192956437

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item