চার বছর ধরে হিমঘরে পড়ে থাকা ডোমারের হোসনে আরার মরদেহ ইসলামি রীতিতেই দাফনের আদেশ হাইকোর্টের

 নিজস্ব প্রতিনিধি-
নীলফামারীর ডোমার উপজেলার হোসনে আরা ইসলামের লাশ ইসলাম ধর্মের রীতি অনুযায়ী দাফনের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বৃহস্পতিবার(১২ এপ্রিল) বিচারপতি মো. মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরীর একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
জানা গেছে,নীলফামারীর ডোমার উপজেলার বামুনিয়া ইউনিয়নের খামার বমুনিয়া গ্রামের অক্ষয় কুমার রায় মাষ্টারের মেয়ে নিপা রানী রায়, ইসলাম ধর্মগ্রহনের পর মোছাঃ হোসনে আরা ইসলামের (২০)  মরদেহ চার বছর ধরে হিমঘরে পড়ে রয়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে মরদেহটি ২০১৪ সালের ১২ মার্চ হতে সংরক্ষনে রয়েছে বলে জানা যায়। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে রংপুর মেডিকেল কর্তৃপক্ষ এতদিন মরদেহটি হস্তান্তর করতে পারছিল না। মেয়েটির বাবা হিন্দুশাস্ত্র মতে মেয়ের মরদেহ সৎকার, অপরদিকে শ্বশুড় জহুরুল ইসলাম মেম্বার ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক পুত্রবধুর মরদেহ দাফন করতে চাইছিল।

মামলা ও ঘটনার বিবরনে জানা যায়, নিপা রানী রায়(২০) এর সঙ্গে একই উপজেলার ডোমার  বোড়াগাড়ি ইউনিয়ন পূর্ব বোড়াগাড়ী গ্রামের জহুরুল ইসলামের ছেলে হুমাউন ফরিদ লাইজু ইসলামে(২৩) প্রেমের সর্ম্পক ছিল। তারা ২০১৩ সালের ২৫ অক্টোবর পালিয়ে যায়। এরপর নিপা রানী রায় ইসলাম ধর্ম গ্রহনপূর্বক মোছাঃ হোসনে আরা লাইজু নাম ধারন করে এবং নীলফামারী নোটারি পাবলিক কাবের এভিডেভিটের মাধ্যমে দুই লাখ ১ হাজার ৫০১ টাকা দেনমোহরে হুমাউন ফরিদ হোসনে আরা লাইজু কে বিয়ে করে। এরপর তারা স্বামী স্ত্রী হিসাবে বসবাস করে আসছিল। এ অবস্থায় মেয়েটির পিতা অক্ষয় কুমার রায় ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর বাদী হয়ে নীলফামারী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি অপহরন মামলা  দায়ের করে।  মামলার পর মেয়ে ও ছেলে স্বামী স্ত্রীর পরিচয়ে সকল কাগজপত্র সহ আদালতে হাজির হয়ে জবান বন্দি প্রদান করে। ফলে আদালত সার্বিক বিবেচনায় অপহরন মামলা খারিজ করে দেয়। এরপর মেয়ের বাবা মামলার খারিজ আপিলে তার মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়স্কা ও মস্তিস্ক বিকৃতি (পাগল) দাবি করে আদালতে কাগজ পত্র দাখিল করে।  আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে শারিরিক পরীক্ষার জন্য  রাজশাহী সেফ হোমে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। এ অবস্থায় মেয়েটি সেখানে অবস্থান করছিল। এ অবস্থায় ২০১৪ সালের  ১৫ জানুয়ারী মেয়েটির স্বামী হুমায়ূন ফরিদ লাইজু ইসলাম বিষপান করে আতœহত্যা করে। এরপর মেয়েটির স্বামী হুমায়ূন ফরিদ লাইজু ইসলাম আতœহত্যা করার বিষয়টি আদালতে উপস্থাপন করে মেয়ের বাবা  মেয়েকে তার জিম্মায় নিতে আদালতে আবেদন করে। আদালত তা মঞ্জুর করলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারী মেয়েকে নিয়ে  বাবা তার বাড়িতে নিয়ে নিজ জিম্মায় রাখেন। তবে মেয়েকে অপ্রাপ্ত বয়স্কো ও মস্তিস্কো বিকৃতি (পাগল) দাবি করে আদালতে দায়ের করা মেয়ের বাবার মামলটি চলমান ছিল।এ অবস্থায় মেয়েটি ২০১৪ সালের ১০ মার্চ দুপুরে বাবার  বাড়ীর নিজ শোয়ার ঘরে সবার অগোচরে কীটনাশক পান করে। তাকে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎষাধীন অবস্থায় ঘটনার দিন রাত ৮টার দিকে মারা যায়। ডোমার থানা পুলিশ হাসপাতাল হতে মেয়েটির মরদেহ রাতেই উদ্ধার করে। এরপরের দিন  ১১মার্চ/২০১৪ নীলফামারী জেলার মর্গে মেয়েটির মরদেহ ময়না তদন্ত করা হয়। ওই দিন পুত্রবধু দাবী করে মেয়েটির শ্বশুড় জহুরুল ইসলাম শরিয়ত মোতাবেক দাফনে ও মেয়েটির বাবা অক্ষয় কুমার রায় হিন্দু শাস্ত্রে সৎকারের জন্য তাৎনিকভাব নীলফামারী জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আবেদন করে। জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (জেলা প্রশাসক) এর আদালতে উভয়পক্ষের শুনানী চলে ওই দিনসন্ধ্যা ৭ টা পর্যন্ত।
মেয়ে পক্ষের আইনজীবী এ্যাডঃ অসিত কুমার ধর জানান ওই শুনানীতে জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট বিষয়টি  ডোমার থানা পুলিশকে একটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ প্রদান করে।এ ব্যাপারে ডোমার থানার তৎকালিক ওসি (তদন্ত) আইউব আলী মেয়ে ও ছেলে পক্ষকে ডেকে বিষয়টি নিজেদের মধ্যে সমাধান পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অনুরোধ করে। কিন্তু উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অটুট থাকায় ডোমার থানা পুলিশ আদালতে ১২ মার্চ/২০১৪ একটি প্রতিবেদন দাখিল করলে আদালত মেয়েটির মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংরক্ষনের আদেশ প্রদান করে। ফলে সেই হতে মেয়েটির মরদেহ সেখানে রাখা হয়।মেয়েটির মরদেহের দাবির মামলায় মেয়েটির শ্বশুড়ের পক্ষে গেলে মেয়ের বাবা তা সাব-জজ আদালতে আপিল করেন। সেখানে ছেলের বাবা জহুরুল ইসলাম হেরে যান। এরপর মেয়েটির শ্বশুড় জহুরুল ইসলাম ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। আজ আদালত বিষয়টির নিষ্পত্তি করেন।আদেশে বলা হয়েছে, রায়ের কপি পাওয়ার পর তিন দিনের মধ্যে মরদেহ দাফন করতে হবে।জেলা প্রশাসককে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিতে দাফন কাজ সম্পন্ন করতে হবে।আদেশে আরো বলা হয়েছে, দাফনের আগে হোসনে আরার (নিপা রানী) লাশ তার বাবার পরিবারকে দেখার সুযোগ দিতে হবে।আদালতে মেয়ের বাবার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সমীর মজুমদার।আর ছেলের বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম বদরুদ্দোজা।

পুরোনো সংবাদ

নির্বাচিত 8316118619804642133

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item