গোবরের ঘুটি

মামুনরু রশিদ মেরাজুল,পীরগঞ্জ(রংপুর থেকেঃ):

গোবর দিয়ে তৈরী এক প্রকারের জ্বালানীর নাম ঘুটি। এলাকা ভেদে এ ঘুটিকে লাকড়িও বলা হয়। একটা সময় পাড়া গ্রামে  বনজঙ্গলের অভাব ছিলনা। আর ওইসব বন-জঙ্গল থেকে সংগৃহিত ডাল পালা বা খড়ি সংগ্রহ করে হাট-বাজারে বিক্রি করে জীবীকা চালাতো দরিদ্র জনগোষ্ঠির অনেকেই। সেখান থেকে বিভিন্ন গাছের  শুকনো ডাল পালা ,পাতা সংগ্রহ করে নিম্ন আয়ভুক্ত পরিবারের গৃহবধুরা রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করতো। এ সব সংগ্রহে পরিবারের ছোট-ছোট শিশুরা ছাড়াও পরিবারের কর্তারাও সহায়তা করতো। বন জঙ্গল না থাকায় এখন আর সে সুযোগ নেই ।
 দিনে-দিনে জনসংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় গ্রামীণ বন-জঙ্গলগুলো কেটে কৃষি জমিতে পরিনত করার পাশাপাশি জনবসতি গড়ে ওঠায় ধীরে-ধীরে বন-জঙ্গল উজাড় হওয়ায় বর্নিত পরিবারগুলো পারিবারিক জ্বালানী সংকটে  পড়ে । ফলে সময় ও চাহিদার প্রয়োজনে গ্রামীণ জনপদের নিম্ন আয় ভুক্ত পরিবারের গৃহবধূরাও নিজেকে বদলাতে শুরু করে। তারাও বিকল্প হিসেবে গবাদী পশুর গোবরকে ভিন্নরুপ দিয়ে জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার শুরু করে। গোবরের এই ভিন্ন রু দেয়াকে ঘুটি বা এলাকা ভেদে লাকড়ী বলা হয়ে থাকে। অতিদরিদ্র পরিবারের লোকজন যাদের গরু নেই, তারা  রাস্তা-ঘাট ও মাট থেকে  গোবর  কুড়িয়ে ঘুটি তৈরী করে বাড়িতে জ্বালানীর কাজে ব্যবহার ও বিক্রি করে বাড়তি রোজগার করে থাকেন।
 গ্যাস-বিদ্যুৎ,  গাছের খড়ি অপেক্ষা  কম খরচে সাস্রয়ী  জ্বালানী হিসেবে গরুর গোবরের তৈরী জ্বালানী বা ঘুটি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার গরীব মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার মিঠাপুকুরের গোপালপুরে যাবার পথে পীরগঞ্জের প্রত্যন্ত জনপদ চৈত্রকোল ইউপির ভাদুরাঘাট  গ্রামে বেশ ক’জন গৃহবধূকে রাস্তা সংলগ্ন বাড়ির খুলিতে গোবরের ঘুটি তৈরী করতে দেখে মোটর বাইকের গতি থেমে যায়। এ সময় কথা হয় ঘুটি তৈরীতে ব্যাস্ত থাকা  গৃহবধু শান্তী রানী,সাধনা রানী ও গোলাপী রানীর সাথে। তাঁরা জানান, বাড়িতে কারেন্ট আছে , রান্না করলে বিল বেশী আসে, গ্যাস ও খড়ি কেনার মত সামর্থ আমাদের নেই। তাই আমরা  ঘুটি বানাই। আশ্বিন মাস থেকে শুরু করে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত এ ঘুটি বানা (তৈরী করা) যায়। বর্ষার সময় শুকানো যায় না , তাই ঘুটিও বানানো হয় না। এ সময় আমরা সংসারের জ্বালানীর অভাব পুরনে ঘুটি বানিয়ে পরিবারের কর্তাদের সহায়তা করে থাকি। সংসারে যখন কাজের চাপ থাকে না তখন  এ কাজটি বেশী করা হয়। ঘুটি তৈরীতে ১ থেকে দেড় হাত লম্বা পাট কাঠি,বাঁশের কঞ্চি, বাতি বা অন্যান্য শলা জাতীয় বস্তু এবং সামান্য খড়ের কুচি বা গাছের শুকনো পাতা ও কাঁচা গোবর লাগে। ওইসব কাঠিতে পরিমান মত গোবর লাগিয়ে রোদে শুকাতে হয়। শুকাতে সময় লাগে ৩ থেকে ৪ দিন। শুকানোর পর রোজদিন রান্নার কাজে ব্যবহারের পাশাপশি বর্ষাকালের জন্য মজুদ করে রাখা হয়। ফলে আমাদের মতো নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে জ্বালানী কিনতে হয় না।  ২ সন্তানের জননী গৃহবধূ গোলাপী রানী বলেন,এসএসসি পাশের পর পরেই বিয়ে হয়েছে।  বাড়িতে সাংসারিক ফাকে সকাল-বিকেলে ঘুটি বানানোয় পরিবারে জ্বালানীর টাকাটা সাশ্রয় হয়। যা দিয়ে সংসারের অন্যান্য চাহিদা কিছুটা হলেও মেটাতে পারেন পরিবারের প্রধান কর্তা। এতে নিজেও আনন্দ অনুভবকরি ।
একই গ্রামের নারায়ন চন্দ্র জানান, আমাদের গ্রামে প্রায় ৬০টি পরিবারের গোবরের ঘুটি তৈরী করে। তিনি আরও বলেন,ঘুটি তৈরীর কাজটি সাধারন্ত আমাদের গৃহবধুরাই বেশী করে থাকেন। শুধু আমাদের গ্রামেই নয়, অন্যান্য গ্রামেও হয়। ঘুটির চাহিদা আছে বাজারে। একটি ঘুটি ২/৩ টাকা করে বিক্রি হয়। বর্ষার সময় দাম দ্বিগুন হয়।  গ্রামের অশিক্ষিত বেকার যুবকদের সামান্য পুজিঁতে  কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রায়েছে গোবরের ঘুটিতে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 4972395216498756814

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item