পীরগঞ্জে সমিতি করে নদী থেকে বালু উত্তোলন!

ভাঙ্গছে জমি, নষ্ট হচ্ছে রাস্তা-ঘাট, মারা গেছে ৩০ জন

মামুনরু রশিদ মেরাজুল,পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে ঃ
পীরগঞ্জের বালুখেকোরা কয়েকটি সমিতি করে করতোয়া নদী থেকে শত শত ট্রাক বালি উত্তোলন করছে। বালিভর্তি যানবাহনের কারণে উপজেলার বেশকিছু এলাকায় জনগুরুত্বপূর্ন কাঁচা ও পাকা গ্রামীন সড়ক ভেঙ্গে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। ভেঙ্গে যাচ্ছে আবাদী জমিও। অদক্ষ চালকদের কারণে বালিভর্তি মাহেন্দ্র-ট্রলির চাপায় শিক্ষার্থী, মানুষ ও বালি শ্রমিকসহ প্রায় ৩০ জন নিহত হয়েছে। পীরগঞ্জে প্রশাসনের নির্দেশ মানছে না ওইসব অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীটি পীরগঞ্জের টুকুরিয়া, বড়আলমপুর, চতরা ও কাবিলপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে। ওইসব ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক স্থানে স্যালোমেশিন ও বোমামেশিন দিয়ে বালুখেকোরা বেশকয়েকটি সমিতি করে ইউনিয়ন ভুমি অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাথে আঁতাত করেই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শত শত মাহেন্দ্র, ট্রলি ও ট্রাকযোগে পীরগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলায় চলে বালু চলে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যেন ‘বালুমহাল’ করা হয়েছে। এতে করতোয়া নদীর দু’পাড়ের পার্শ্ববর্তী আবাদী জমি ভেঙ্গে গেলেও জমির মালিকরা প্রতিবাদ করলেও বালুখেকোরা কথা শুনছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি বালুভর্তি যানগুলোর চাপা ও দুর্ঘটনায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ তাদের চলাচলের রাস্তা ঠিক রাখতে ও দুর্ঘটনায় প্রানহানি নিরসনের লক্ষ্যে ভুমি প্রশাসনের দ্বারস্থ হলেও তেমন প্রতিকার হয়নি। মাঝে মাঝে উপজেলা ভুমি প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে স্যালোমেশিন আটক, ভেঙ্গে দেয়া কিংবা মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাশাপাশি বালিভর্তি মাহেন্দ্রের চাপায় কাদিরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেনীর এক ছাত্রী, জাফরপাড়ার একজন খালাশপীর পেট্রোল পাম্পের কাছে, সন্ন্যাসীর বাজারে দুধিয়াবাড়ীর মমিনুলসহ প্রায় ৩০ জন মানুষ মারা গেছে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বড়আলমপুর ইউনিয়নের ধর্মদাশপুর ও শিমুলবাড়ী গ্রামের ৪৩ জন মানুষ সমিতি করে গ্রাম্য ডাঃ ইছাহাক আলীর নেতৃত্বে, ধর্মদাশপুরের এজাজুলকে সভাপতি করে ২৬ সদস্য বিশিষ্ট সমিতি, ষোলঘরিয়া গ্রামের লুলু পাইকাড় ও শামীম মিয়ার নেতৃত্বে ২০ সদস্যের একটি সমিতি শালপাড়া ও জয়ন্তীপুর ঘাটসহ ১৫ টির অধিকস্থানে করতোয়া নদী থেকে স্যালোমেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও টুকুরিয়া ইউনিয়নের দুধিয়াবাড়ীতে আখতারুল ইসলাম, জয়ন্তীপুর চর থেকে মদনখালী গ্রামের সুলতান মিয়া এবং মফিদুল ইসলাম, রামকানাইপুরে রহেদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে বালু উত্তোলন করছে। বালু ব্যবসায়ীরা প্রতি ট্রলি (মাহেন্দ্র) বালি ৪’শ টাকা থেকে ৭’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে। লাভজনক এ ব্যবসার কারণে ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগের ভিত্তিতে জারি করা উপজেলা ভুমি প্রশাসনের নোটিশ কেউই মানছে না বলে জানা গেছে। তরফমৌজার মতিয়ার রহমান, আলেয়া বেগম, রশিদা বেগম, ফুল মাইসহ কয়েকজন জানান, করতোয়া নদীর জয়ন্তীপুর চর থেকে বালু উত্তোলন করে মাহেন্দ্র দিয়ে নিয়ে যাওয়ায় তরফমৌজা-জয়ন্তীপুর রাস্তাটি চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ওই নদী থেকে বালু উত্তোলনকারী আখতারুল ইসলাম জানান, আমি স্যালোমেশিনের সাহায্যে করতোয়া নদীর ওপারে দিনাজপুর এলাকার বালি আনছি। আর চলাচলের রাস্তা যেন নষ্ট না হয়, তাও মেরামত করছি। কারো জমিও ভাঙ্গছে না। টুকুরিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মন্ডল জানান, করতোয়া নদী থেকে বালু তোলার কারণে নদীর পাড় ভাঙ্গছে, অনেকে জমিও হারাচ্ছে। বালি ভর্তি ট্রাক্টরের কারণে রাস্তাগুলোও চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বড়আলমপুরের ধর্মদাশপুরের গ্রাম্য ডাঃ ইছাহাক আলী বলেন, বালু উত্তোলনে তো সমস্যা নেই। বসে আছি, কাজ নেই, তোলা হচ্ছে। দামও বেশী নেই। ইউএনও কমল কুমার ঘোষ বলেন, বালু তোলা বন্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। করতোয়া থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় স্যালোমেশিন আটক করে রমজান আলীসহ ২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে নোটিশও করা হয়েছে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 3984697764686183957

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item