নীলফামারীতে ৩ দিনব্যাপী রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন শেষ

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১১মার্চ॥
তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মেলন ও সাঁইত্রিশতম বার্ষিক অধিবেশন শেষ হয়েছে।
আজ রবিবার সন্ধ্যায় সমাপনী দিনে নীলফামারী হাইস্কুল মাঠে আয়োজিত মঞ্চে  রবীন্দ্রপদক দিয়ে গুণী-সম্মাননা জানানো হয় রাজশাহীর প্রবীণ উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী মঞ্জুশ্রী রায় ও রংপুরের লোকসঙ্গীত শিল্পী উপেন্দ্রনাথ রায়কে।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। সমাপনী অনুষ্ঠানে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি ড. সনজীদা খাতুনের সভাপতিত্বে পরিষদের সাধারণ স¤পাদক বুলবুল ইসলাম, জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ নীলফামারীর সভাপতি আহসান রহীম মঞ্জিল বক্তব্য রাখেন। 
এ সময় পরিষদের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানে প্রবীণ উচ্চাঙ্গসঙ্গীত শিল্পী মঞ্জুশ্রী রায় ও  লোকসঙ্গীত শিল্পী উপেন্দ্রনাথ রায়কে প্রধান অতিথি ও সভাপতি  উত্তরীয়, মানপত্র এবং গুণী সম্মাননা ও রবীন্দ্র পদক প্রদান করেন। পরে সন্ধ্যায় প্রদীপ প্রজ্জ্বলন, রবিরশ্মি, আবৃত্তি, নৃত্য এবং সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
 সম্মেলনের  সমাপনীতে প্রস্তাব  পাঠ করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি লাইসা আহমেদ লিসা। সম্মেলনের প্রস্তাবনায় উল্লেখ করা হয় বাংলাদেশ আগের চেয়ে সংস্কৃতি চর্চ্চায় এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি দেশের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটছে। এ উন্নয়নে এবার যোগ হয়েছে পদ্মাসেতু।
শোক প্রস্তাব পাঠ করেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি মইনুদ্দিন নাজির। শোকপ্রস্তাবে দেশের ও আর্ন্তজাতিক সংস্কৃতিকর্মী গত এক বছরে প্রয়াত হয়েছে এমন ৯৪ জনের নাম। শোক প্রস্তাব পাঠের পর এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

এর আগে সকালে নীলফামারী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রতিনিধি সম্মেলন এবং প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়।
তিনদিন ব্যাপী এই অধিবেশন ঘিরে নীলফামারীতে রবীন্দ্র ভক্তদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছিল। সারা দেশের সহ¯্রাধীক প্রতিনিধি ছাড়াও এই তিনদিনের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন প্রায় ৫০ হাজার দর্শক। নীলফামারী পরিনত হয়েছিল সঙ্গীতভক্তদের মিলন মেলায়।
সংস্কৃতির পথ শুধু মানুষকে টেনে আনা নয় নিজেদেরও উত্তরণ ঘটায়। সেই টানেই  সারাদেশের শত সহস্র শিল্পী এসে মিলিত হয়েছেন আসরে।শুধু বড়রাই নয় গানের টানে, গাওয়ার টানে, প্রতিযোগিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে অংশ নেয় প্রায় পাঁচশ শিশু-কিশোর। এ ছাড়া নীলফামারীর ৫০ জন শিশু শিল্পীরা বোধন সঙ্গীতটি পরিবেশন করেছিল।
উল্লেখ যে, গত শুক্রবার (৯ মার্চ) “সংস্কৃতির আলোয় সা¯প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী উচ্চারণে- “চল রে টেনে আলোয় অন্ধকারে Ñ এই সেøাগান নিয়ে এবং  “উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে- ওই-যে তিনি,ওই-যে বাহির পথে---”রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতানের এই গানটির কথাকে সামনে রেখে বোধন সঙ্গীতটি পরিবেশনের মাাধ্যমে তিনদিনের এই বার্ষিক অধিবেশন শুরু হয়েছিল।
জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ এর আয়োজনে বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটে সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর,প্রদীপ প্রজ্বলন  শেষে আর্শীবাণী প্রদানের মাধ্যমে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেছিলেন। তিনদিনের এই অধিবেশনটি চমৎকার ভাবে সঞ্চালনা করেছিলেন অভিনেতা,নির্দেশক ও আবৃত্তিশিল্পী ড. ভাম্বর বন্দ্যোপাধ্যায়।
তিনদিনের এই অধিবেশটি উৎসাহ উদ্দিপনায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রকার সহযোগীতা করেন সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়, বেঙ্গল গ্রুপ লিমিটেড ও ব্রাক। সেই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে সার্বক্ষনিক অনুষ্ঠানের  খবর রেখে এবং উপস্থিত থেকে সহায়তা করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, পৌর মেয়র দেওয়ান কামাল আহমেদ।
এ ছাড়া  আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে পুলিশ ও র‌্যাবের ৫ শতাধিক সদস্য। সম্মেলনস্থলে ছিল তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অনুষ্ঠানস্থলের প্রবেশ পথের প্রত্যেকটিতে আর্চওয়ে বসানো হয়। ছিল সিসি ক্যামেরার আওতায়।
উল্লেখ যে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের সাঁইত্রিশতম বার্ষিক অধিবেশন/১৪২৪ এর আয়োজক জেলা হিসাবে নীলফামারীতে প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যার প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর এমপি। আহবায়ক ও সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে নীলফামারী সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ দেবী প্রসাদ রায় ও ডাঃ মুজিবুল হাসান চৌধুরী শাহীন। এ ছাড়া সার্বিকভাবে কাজ করে ১৮টি উপ-কমিটির ৫শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক।
প্রসঙ্গতঃ-দেশজুড়ে ৮৪টি সক্রিয় শাখা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ। সংগঠনটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮০ সালে। সেসময় এর নাম ছিল জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ। শাখাগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে এক বছর ঢাকায় ও পরের বছর অন্য জেলায় সম্মেলনের আয়োজন করেন তারা।  সম্মেলনের ৩৫তম অধিবেশন বসেছিল পটুয়াখালীতে। ৩৬ তম ছিল ঢাকায়, নিয়ম অনুযায়ী ঢাকার বাহিরের জেলা নীলফামারীতে ৩৭তম বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলো। এরপর ৩৮ তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে ঢাকায়।#

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 155960011307118858

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item