কিশোরগঞ্জে ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ লাভলীহুড প্রকল্পে গরু বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ

মোঃ শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ(নীলফামারী)প্রতিনিধিঃ
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় কিশোরগঞ্জ এরিয়া প্রোগাম অফিস ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ(লাভলীহুড প্রকল্প) থেকে অসহায়, হতদরিদ্র ও দরিদ্র সুবিধাভোগী  পরিবারের মাঝে গরু বিতরনে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অসহায় দরিদ্র সুবিধাভোগী পরিবারের কাছ থেকে  এক হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে গরু বিতরনের অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও  সংশ্লিষ্ট অফিসের  প্রকল্প অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন সুবিধাভোগীরা।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগে ও ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ (লাভলীহুড প্রকল্প) সুত্রে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ এরিয়া প্রোগ্রাম অফিস নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার  কিশোরগঞ্জ সদর, বাহাগিলি, পুটিমারী,নিতাই ও চাঁদখানা ইউনিয়নসহ ৫ টি ইউনিয়নে  ১৬ টি গ্রামে অসহায়, দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝ থেকে ৩০৭০ জন শিশুকে তালিকাভুক্ত করে (আরসি) নিবন্ধন করে। ওয়ার্ড ভিশনের নিয়ম অনুযায়ী এসব নিবন্ধিত শিশুদের পরিবার লাভলীহুড প্রকল্পের আওতায় গরু পাবেন। সে অনুযায়ী ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ পাঁচটি ইউনিয়নের ১৬ টি গ্রামে গিয়ে প্রতিটি গ্রামে ১৫জন সদস্য নিয়ে গ্রাম উন্নয়ন কমিটি গঠন করে। গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা অসহায় দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের তালিকা করে ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ কতৃক নিযুক্ত ইউনিয়ন প্রোগ্রাম অফিসারের কাছে গরু বিতরনের তালিকা প্রদান করে।
ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ প্রোগাম অফিস সুত্র জানায়, ২০১১ সাল থেকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রজেক্ট প্রকল্পের আওতায় কিশোরগঞ্জ উপজেলায় ২০১৩ সাল থেকে  শুরু করে ২০১৭ সাল পর্যন্ত অসহায়, দরিদ্র পরিবারের মাঝে ৬৫০ টি গরু বিতরন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে আরো ৩৭৫ টি গরু এসব পরিবারের মাঝে বিতরন হবে। অভিযোগ উঠেছে এসব অসহায়, দরিদ্র ও হতদরিদ্র পরিবারের মাঝে গরু বিতরনের তালিকা করতে ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ লাভলীহুড প্রকল্প কতৃর্ক গঠিত কমিটির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকরা এসব পরিবারের কাছ থেকে ৫শ থেকে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ও স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজস্ব লোককে তালিকাভুক্ত করে গরু বিতরন করছে।
 নিতাই ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের গ্রাম  উন্নয়ন সমিতির   সদস্য কুসুম বেগম (শিশুর নিবন্ধিত আরসি নম্বর) ৩১৩৮ বলেন, আমার স্বামী একজন ভ্যানচালক।  কমিটির সাধারন সম্পাদক শিল্পী বেগম গরু বিতরনের তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য আমার কাছে ৫ হাজার টাকা দাবী করেছিল । আমি তার দাবিকৃত টাকার মধ্যে ২ হাজার টাকা দিয়েছি বাকী  ৩ হাজার দিতে না পারায় সে তালিকায় আমার নাম দেয়নি।
একই গ্রাম উন্নয়ন সমিতির  অপর সদস্য ( শিশুর আরসি নম্বর ৩১৫১) আদুরী বেগম বলেন, কমিটির দাবীকৃত ৫ হাজার টাকা দিতে না পারায় তারা আমার নাম তালিকায় দেয়নি। তাই আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
নিতাই ইউনিয়নের ২ ওয়ার্ডের গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি আজিজুল ইসলাম ও সাধারন সম্পাদক শিল্পী বেগম বলেন, আমরা কমিটির সিদান্ত অনুযায়ী আরসি সদস্যদের মধ্যে থেকে ২২ জনের নাম অফিসে পাঠিয়েছিলাম। অফিস সেই তালিকা থেকে ৫ জনের নাম বাদ দিয়েছে তারাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। এখানে আমাদের কোন হাত নেই।
ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ লাভলীহুড প্রকল্পের নিতাই ইউনিয়নের প্রোগ্রাম অফিসার মিন্টু বিশ্বাস বলেন, বলেন সদস্যদের কাছ থেকে কমিটি টাকা নিয়ে তালিকায় নাম দিয়েছে এ সংক্লান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি সেটি তদন্ত করে দেখা হবে।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের গদা গ্রামের গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য আশরাফুল ইসলাম (শিশু আরসি নম্বর ১৪৩৬ )বলেন, আমি দিন মজুরী করে সংসার চালাই। গরু বিতরনের তালিকায় নাম দেওয়ায় জন্য আমার কাছেও ২শ টাকা নিয়েছে সমিতির সভাপতি ইলিয়াল হোসেন। এ ব্যাপারে ইলিয়াছ হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কেশবা গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সদস্য ও শান্তপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রী অলাক চন্দ্র (শিশু নিবন্ধন আরসি নম্বর ৫১) বলেন, গরু বিতরনের তালিকায় নাম দেওয়ার জন্য কমিটির সদস্যরা আমার কাছে  মসজিদের কথা বলে ৫ শ টাকা নিয়েছে। আমি গরু পাওয়ার পর তারা আরো এক হাজার টাকা দাবি করেছিল কিন্তু আমি দেইনি। 
 এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কেশবা গ্রামের গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতি আব্দুল হক বলেন , কোন সদস্য মসজিদের নামে ৫ শত টাকা নিয়েছে তা আমার জানা নেই। তবে কেউ মসজিদের জন্য সেচ্ছায় টাকা দিলে দোষের কিছু নেই।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্রোগ্রাম অফিসার আমজাদ হোসেন বলেন, গরু বিতরনে সদস্যদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে এরকম কোন কথা আমি শুনিনি।
এছাড়াও পুটিমারী, বাহাগিলি ও চাঁদখানা ইউনিয়নেও গরু বিতরনে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে টাকা ৩ থেকে ৫ হাজার করে টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশ কিশোরগঞ্জ এরিয়া প্রোগ্রাম অফিসের ম্যানেজার পিকিং চাম্বুগং বলেন, গরু বিতরনে টাকা নেওয়ার অভিযোগে ওয়ার্ড ভিশনের নিবন্ধিত অসহায়,দরিদ্র, ও হতদরিদ্র  পরিবারের সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও আমাদের অফিসে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। আমরা অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যাবস্থা নেব। তিনি আরো বলেন, গরু বিতরনে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মেহেদী হাসান বলেন, ওয়ার্ড ভিশন বাংলাদেশ লাভলী হুড প্রকল্প থেকে গরু বিতরনে টাকা নেওয়ার অভিযোগে একটি লিখিত অভিযোগ  পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 8650814874002329211

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item