কেউ নির্বাচনে না এলে করার কিছু নেই: প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক-
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নির্বাচন না করলে কারও কিছু করার নেই, গতবারও করেনি। নির্বাচনে যদি না আসে, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। নির্বাচন সময় মতোই হবে।

আজ সোমবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর ইতালি ও ভ্যাটিকান সফর নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর দলটির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা কেউ কি বিএনপির গঠনতন্ত্র দেখেছেন? সেখানে দলীয় চেয়ারপাসনের অনুপস্থিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানকে ভারপ্রাপ্ত করার কথা উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু যাকে করা হয়েছে তিনিও একজন ফেরারি আসামি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এতিমের টাকা মেরে খেলে শাস্তি, এটা আদালতও দেয়, আল্লাহর তরফ হতেও দেয়। আমাদের তো কিছু করে নাই।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘রায়টা তো আমি দিইনি, রায়টা দিয়েছে কোর্ট। মামলাটা করেছে কে? ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীন সরকার। ফখরুদ্দীনকে গভর্নর করেছিল। নয়জনকে ডিঙ্গিয়ে মইন উ আহমেদকে সেনাপ্রধান করেছিল। আর ইয়াজউদ্দীন তো তাদের ছিলই। মামলাটা তারা দিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই মামলাটা ১০ বছর চলেছে। এই মামলায় তিন বার জজ পরিবর্তন হয়েছে, সময় চেয়েছে ১০৯ বার। বহু টালবাহানা আপনারা দেখেছেন। ২৬১ দিনের মতো তারিখ পড়ল। আপিল বিভাগে ২২ বার  রিট করা হয়েছিল। এত কিছুর পর তিনি মাত্র ৪৩ দিন কোর্টে হাজির হয়েছিলেন।’

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। গাড়িতে পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছে। ২০১৩-১৫ পর্যন্ত তারা পাঁচশর মতো মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমাকে যখন জেলে নিয়ে গেল আমি জিল্লুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করলাম। আমি আমার বোনকেও করিনি, ছেলেকেও করিনি। আর আমি কিছু বলতে চাই না। আমরা কিছু বললে তো অনেক দোষ।

খালেদা জিয়ার রায় এবং বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোর্ট রায় দিয়েছে, আমাদের কিছু করার নেই। এরপরও দোষ আসে আমাদের উপর।’

‘দেখুন কোর্টের রায়ের আগে ৭ ধারা সংশোধন করে ইসিতে সাবমিট করেছে’-যোগ করেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপির একটি গঠনতন্ত্র আছে, ওটার কোনো খোঁজও পাওয়া যায় না। বিএনপিতে সব ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে, আমাদের গঠনতন্ত্রে তা নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে কেউ তাদের দলে থাকতে পারবে না, তারা সেটা সংশোধন করে নিল। এটা ঠিক চেয়ারম্যান না থাকলে এক নম্বর ভারপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান হবেন চেয়ারম্যান। কিন্তু তিনিও আবার ফেরারী আসামি। আমার প্রশ্ন বিএনপিতে কি এমন কোনো নেই, যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা যেত। একটা লোক কি খুঁজে পাওয়া গেল না, যাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা যেত।’

একাত্তর টিভির ফারজানা রূপা বলেন, জিয়া এতিমখানা ট্রাস্টের তহবিলে এখন ২৯ লাখ টাকা আছে, এখন সরকার কি তা এতিমদের কাছে বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে কি না?

কারাগারে খালেদা জিয়ার জন্য ব্যক্তিগত গৃহকর্মী রয়েছে, অন্যদের ক্ষেত্রে তা হবে কি না- সেই প্রশ্নও করেন রূপা।

শেখ হাসিনা বলেন, অনেকে আছেন শুধু দিতেই পারে। আমরা দুই বোন, আমাদের একটা মাত্র বাড়ি। আমার আব্বা সারাজীবন জনগণের জন্য কাজ করেছেন, ওই বাড়িটি তাই জনগণের জন্য দিয়ে দিয়েছি। আমরা ট্রাস্ট করে ১৭০০ থেকে ১৮০০ জনকে সহায়তা করি। আমরা এটা নিয়ে খুব একটা প্রচারও করি না।

কেউ যদি এতিমের টাকা আসার পরও মায়া ত্যাগ করতে না পারে, তা নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। আমি বলতে গেলেই তো..।


শেখ হাসিনা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে আমাকে শ্যাওলা ধরা একটি ভবনে রাখা হয়েছিল, খাট ছিল ভাঙা। তাকে রাখা হয়েছিল স্পিকারের বাড়িতে, তার সঙ্গে এই ফাতেমাকে দেওয়া হয়েছিল। এটা গোপন ছিল। ডিআইজি হায়দার (সামছুল হায়দার সিদ্দিকী)  সাহেবকে জিজ্ঞাস করলেই জানতে পারবেন।

আদালত দিয়েছেন। বেশি কিছু তো দেওয়ার নেই, একজন মেইড সার্ভেন্ট দিয়েছে। যদি আরও কিছু ডিমান্ড করে।

রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার নানা টালবাহানা করেছে। তারা আট হাজার নিতে বলেছে এখন, আমরা বলছি আট হাজার আগে নিক। তারপর আমরা দেখব, তারা এদের সঙ্গে কী ব্যবহার করে।

শেখ হাসিনা বলেছেন, নেওয়ার আগে রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য ভাসানচরে ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। প্রথমে এক লাখ মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে।

এটিএন বাংলার জ ই মামুনের রোহিঙ্গাদের আবাসস্থল নিয়ে প্রশ্নে শেখ হাসিনা প্রথমেই বলেন, রোহিঙ্গারা এখন বালুখালীতে আছে। আমরা চাচ্ছি এদের একটা অস্থায়ী ক্যাম্প করে রাখতে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বলছি, সমস্যা সৃষ্টি করেছে মিয়ানমার, সমাধান তাদেরই করতে হবে। এখন একটা সমঝোতা হয়েছে, এখন তারা আট হাজার পরিবারের তালিকা তৈরি। তালিকা সবই তৈরি। এজন্য আমাকে ধন্যবাদ দিতে পারেন, যখন ঢোকা শুরু হল, তখনই প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা দিয়ে তালিকা, বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করেছি। যারাই ঢুকেছে, তাদের ছবি নিয়ে তাদের আইডি কার্ড করিয়ে রেখেছি। এখন মিয়ানমার অস্বীকার করতে পারবে না যে এরা তাদের না।’

প্রশ্ন ফাঁস
শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন, ‘কোনো দিকে দোষ না পেয়ে একটা নিয়ে খোঁচাখুঁচি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তাইলে বলেন যে টিক মার্কটা (নৈব্যক্তিক) বন্ধ করে দেব, আপনারা লেখেন আমরা বন্ধ করে দেব।’

শেখ হাসিনা প্রশ্ন করেন, ‘পরীক্ষা শুরুর ২০ মিনিট আগে প্রশ্ন দেয়, এটা তো  জানা কথা। এখন সবার হাতে ফোন, কেউ ছবি তুলে দিতে পারে। কিন্তু আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা দেন, কেউ কি এটা দেখে উত্তর পড়ে লিখে দিতে পারবে? এত ট্যালেন্টেড কে আছে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মন্ত্রী কি নিজে প্রশ্ন পত্র ফাঁস করতে গেছে, না কি সচিব গেছে? কে প্রশ্ন করেছে খুঁজে দেন আমরা শাস্তি দিয়ে দেব।’

প্রশ্ন ফাঁসের জন্য ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না- মাছরাঙা টেলিভিশনের রেজওয়ানুল হক রাজার প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রশ্ন ফাঁস নতুন কিছু না, কখনও প্রচার হয়, কখনও প্রচার হয় না।

প্রশ্নগুলো কতদিন আগে ফাঁস হয়েছে, তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। উত্তর পেয়ে বলেন, ‘২০ মিনিট আগে প্রশ্ন ফাঁস হলে আপনি কি করবেন?’

তিনি বলেন, ‘আর আমাদের এখানে এত বেশি ট্যালেন্টেড কে আছে, আধা ঘণ্টা আগে, ২০ মিনিট আগে ওই প্রশ্ন অনুযায়ী বই খুলে উত্তর মুখস্থ করে খাতায় লিখবে, এত ট্যালেন্টেড কে আছে?’

তিনটি সুখবর
সংবাদ সম্মেলনে তিনটি সুখবর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘একটা সুখবর দিয়ে নেই’ বলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আজ থেকে ফোরজির যুগে প্রবেশ করেছি। আমরা ইতোমধ্যে ফোরজির নিলাম সম্পন্ন করেছি। আজ থেকে ফোরজির যুগে প্রবেশ করেছি।


এ সময় আগামী মার্চ মাসের কোনো এক সময় বঙ্গবন্ধু স্যাটালাইট উৎক্ষেপণ হবে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আপনারা জানেন ব্রিটেন দীর্ঘদিন যাবৎ কার্গো পরিবহন নিষিদ্ধ করে রেখেছিল, এখন তারা তা তুলে নিয়েছে। এটাও আমাদের জন্য একটা সুখবর।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ওয়েজ বোর্ড
সাংবাদিকদের মধ্যে শুরুতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগের আশঙ্কার কথা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন সাংবাদিক ইউনিয়ন নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল। সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড দেওয়ার ঘোষণার জন্য সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনটি সুখবর দিলাম; আরেকটি আছে, সেটা পরে দেব।

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অনেক আইন যুগোপযোগী করেছি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। অপকর্ম না করলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে শঙ্কার কিছু নেই।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘চালের দাম বাড়ানোয় মিডিয়ারও একটু অবদান আছে। ব্যবসায়ীরা যখন চালের দাম বাড়ায়, তখন আপনারা যারা বলেন, তাতে ব্যবসায়ীরা বলেন, আরেকটু বাড়িয়ে নিই।’

সংবাদ সম্মেলনে কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়াও বিভিন্ন মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিক, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 9164329636680477200

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item