কুড়িগ্রামে বুড়িতিস্তা নদীকে ঘিরে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের স্বপ্ন
https://www.obolokon24.com/2018/02/kurigram_41.html
হাফিজুর রহমান হৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:
কুড়িগ্রামের বুড়িতিস্তা তিস্তা নদীর দু’পাশে ইরি-বোরো চাষাবাদ ও
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করতে প্রকল্প তৈরির কাজ করছে
পাউবো। ইতিমধ্যে তিস্তার উৎসমূখ উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুনে সুইজগেট
নির্মানসহ চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ব্রহ্মপূত্র নদ পর্যন্ত প্রকল্প এলাকা
সার্ভে করা হয়েছে। সার্ভে সংশ্লিষ্টদের অভিমত প্রকল্পের উৎসমূখে পাম্প হাউজ
নির্মান করা হলে শুকনা মৌসুমেও বুড়িতিস্তায় পানি সরবরাহ নিশ্চিত হবে। ফলে এ
অঞ্চলের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। যা বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতিকে
সমৃদ্ধ করবে। উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল.নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি
দীর্ঘদিন থেকে বুড়িতিস্তা দখলমুক্তসহ পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে আন্দোলন
করে আসছে। খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, এক সময় বুড়িতিস্তা নদীকে ঘিরে এ
অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে উঠেছিল। সেইসাথে তিস্তা নদী পাড়ের মানুষের জীবন
জীবিকা চলে বুড়িতিস্তা নদীতে মাছ শিকার করে। ১৯৮৮ সালের বন্যার সময় তিস্তা
নদীর ভাঙ্গণে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে গোড়াইপিয়ার গ্রামের সুইজ গেটটি নদী
গর্ভে চলে গেলে পাউবো কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিত ভাবে বুড়িতিস্তার উৎসমুখে বাঁধ
নির্মান করে বন্ধ করে দেয়। ফলে বুড়িতিস্তার স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে
ভরাট হতে থাকে নদীটি। এ কারনে বুড়িতিস্তা পাড়ের শতশত মানুষের পেশা ও
কৃষিতে বিপর্যয় শুরু হয়। এ সুযোগে কিছু দখলদার ভূমিদস্যূ বুড়িতিস্তা দখলের
মহোৎসবে মেতে উঠে। ধীরে ধীরে বুড়িতিস্তা ভরাট হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে
যায়। এ পরিস্থিতিতে গত বছরের শুরু থেকে বুড়িতিস্তা রক্ষায় আন্দোলন করে
আসছিল উলিপুর প্রেসক্লাব ও রেল.নৌ যোগাযোগ ও পরিবেশ উন্নয়ন গণ কমিটি। গত ১৩
মার্চ বুড়িতিস্তা রক্ষায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে উলিপুরের সর্বস্তরের হাজার
হাজার মানুষ অংশ নিয়ে বুড়িতিস্তা রক্ষায় একাত্বতা প্রকাশ করে। গত ২১ মার্চ
বাই-সাইকেল র্যালী ও ১১ এপ্রিল বুড়িতিস্তা পাড়ে স্বরণকালের হাজার হাজার
মানুষ প্রতীকী পানির ঢল কর্মসূচি পালনসহ সভা-সমাবেশ অব্যাহত রাখে। গত ৫ মে
ঢাকাস্থ উলিপুর সমিতি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন
করে। সংগঠন দু’টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরে
বুড়িতিস্তা রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন। এ অবস্থায় বন ও
পরিবেশ মন্ত্রণালয় গত ২৪ মে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বুড়িতিস্তা নদী দখলমুক্ত ও
পরিবেশ সংরক্ষনের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দেন। গত ১৩ জুন পানি
সম্পদ মন্ত্রণালয় বুড়িতিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে কারিগরি কমিটি
গঠন করে। এ কমিটির আহবায়ক ডিজাইন সেল ঢাকা’র সুপারিনটেনডেন্ট প্রকৌশলী
নুরুর রহমান গত ২৯ নভেম্বর বুড়িতিস্তা নদী এলাকা পরিদর্শন করে নকশা তৈরি ও
প্রকল্প দাখিল করেন। এরই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি পাউবো কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে
বুড়িতিস্তার উৎসমূখ উপজেলার দলদলিয়া ইউনিয়নের অর্জুন থেকে চিলমারী উপজেলার
রানীগঞ্জ পর্যন্ত প্রকল্প এলাকা সার্ভে করেন। সার্ভে সংশ্লিষ্ট কুড়িগ্রাম
পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী শরিফুল ইসলাম জানান, সার্ভে করেছি, শীঘ্রই আমরা
একটি প্রকল্প প্রস্তবণা প্রেরণ করবো। অনেক স্থানে নদী দখলসহ
অপরিকল্পিতভাবে ব্রীজ-কার্লভাট নির্মান করায় স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বন্ধ
হয়ে গেছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে, বুড়িতিস্তা নদীকে কেন্দ্র করে এ
অঞ্চলের কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার
তালিম নগরের ন্যায় পাম্প হাউজ নির্মান করা হলে শুকনা মৌসুমেও পানি প্রবাহ
নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। উলিপুর প্রেসক্লাবে সভাপতি আবু সাঈদ সরকার বলেন,
বুড়িতিস্তা দখলমূক্ত ও পানি প্রবাহ নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন
অব্যাহত থাকবে। কুড়িগ্রাম পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম এর
সাথে কথা হলে তিনি জানান, বুড়িতিস্তা দখলমূক্ত ও পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে
প্রকল্প প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হওয়ার পর কাজ শুরু হলে
এলাকাবাসি একটা দৃষ্টিনন্দন বুড়িতিস্তা নদী দেখতে পারবেন।