ক্রমেই বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম

মেহেদী হাসান উজ্জল ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:
দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে দিন দিন বেড়েই চলেছে ঝুঁকিপুর্ণ শিশুশ্রম। পৌর শহরের বাসস্ট্যান্ড, বাজার, ঢাকা মোড়, রেল গুমটি,নিমতলা মোড়, টিটির মোড়, হাসপাতাল মোড় এলাকাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় শিশু শ্রমিকদের দেখা যাচ্ছে । তার মধ্যে কেউ কেউ মোটর সাইকেল ওয়ার্কশপে, গাড়ির গ্যারেজে, স্টিল ও কাঠের ফার্নিচারের দোকান, ভাঙ্গারীর দোকান, হোটেল,ওয়ালিং এর দোকানে, কসমেটিক্স দোকান, ওষুধের ফার্মেসি ও ব্যাটারির দোকানসহ বহুতল ইমারত নির্মাণকাজে তার নিয়োজিত।
ফুলবাড়ী পৌর শহর ঘুরে দেখা গেছে,  গাড়ির গেরেজে , কেউ ট্রাকের চাকার টায়ার পাল্টাতে আবার কেউ স্টিলের বিভিন্ন ফার্নিচার তৈরিতে ব্যাস্ত,আবার কেউ অয়েলিং এর দোকানে লোহা পিটিয়ে  ব্যাস্ত  সময় পার করছে শিশুরা। এদের মধ্যে প্রত্যেকেরই বয়স ৯ থেকে ১০ আবার কারো ১৩ কিংবা ১৪ হবে।

শিশু শ্রমিকদের সঙ্গে কথার বলার এক পর্যায়ে মারুফ জানায়, আমার বয়স (১৩)। আমি ৭ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। আমরা ২ ভাই ১বোন। বাবা গ্রামে মুরুগী কিনে তা বিক্রি করে ৪ সদস্যের পরিবার চালাতে পারেন না। তাই বাধ্য হয়ে আমি পড়ালেখা ছেড়ে স্টিলের দোকানে কাজ শুরু করি। বেতনের কথা জানতে চাইলে সে বলে, আমি প্রতি সপ্তাহে ৪০০ টাকা পাই ২০০ টাকা দিয়ে নিজে চলি আর বাকি ২০০ টাকা বাড়িতে দিই। এটা তো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ, এ কাজ কেন করো- এমন প্রশ্নের উত্তরে সে জানায়, অন্যান্য কাজের চেয়ে এ কাজে টাকা বেশি পাই তাই করি এবং আমিও ভালো করে চলতে পারি ও পরিবারকে কিছু টাকা দিতে পারি। মারুফ এর  মতো অনেক শিশু শহরের বিভিন্ন দোকানে শিশু শ্রমের কাজ করছে।

বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি দেশ শিশুশ্রম বন্ধের ঘোষণা দিলেও , আমাদের দেশে এটি বেড়েই চলেছে। ফলে দিন দিন এই শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ছে। সচেতন মহল মনে করেন বাংলাদেশে শিশু শ্রমের অন্যতম কারণ হলো দারিদ্রতা। আর আমাদের দেশে ৩১ দশমিক ৬ ভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। এসব পরিবারের সদস্যদের মাথাপিছু আয় দৈনিক ৮০ টাকারও কম। এদের বেশির ভাগ পরিবার অসচ্ছল। ফলে এসব পরিবারের শিশুরা তাদের পেটের ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য ছোট থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ শুরু করে। তাই তাদের নিজেদের আর পরিবারের খাওয়ার জন্য শিশুরা লেখাপড়ার পরিবর্তে এ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে পিছপা হচ্ছে না।

এসব ঝুঁকিপূর্ণ কাজের মধ্যে রয়েছে- মোটর ওয়ার্কশপে কাজ করা, ওয়েল্ডিং, গ্যাস কারখানা, লেদ মেশিন, রিকশা চালানো, বাস-ট্রাকের হেলপারি, নির্মাণ শ্রমিক, গৃহশিশু শ্রমিক, ইটভাঙা, ইটভাটা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, স্টিলের আলমারির দোকানের শ্রমিকসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ। ফলে বাড়ছে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম

আব্দুল্লাহ আহাদ (১৩) নামে আরেক শিশু শ্রমিক জানায়, আমার বাড়ি পৌর শহরের পশ্চিম গৌরী পাড়া কাজী পাড়া গ্রামে। আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছি। বাবা মতিয়ার রহমান একজন ট্রাক শমিক। সংসারের অভাব মেটানোর জন্য বাবা আমাকে মেকানিজ এর কাজ শেখার জন্য গেরেজে দিয়ে গেছেন। তাই কাজটা করতে কষ্ট হলেও টাকা রোজগারের জন্য এই কাজটাই করতে হবে।

হোটেলে কাজ করা আরেক শিশু শ্রমিক আরিফ জানায়, বাবা মারা যাওয়ার পর পরিবারের তাগিদে হোটেলে কাজ করি। এখানে যা পাই মা ও ছেলের সংসার চলে যায়। এক সময় আমিও স্কুলে পড়তাম, কিন্তু এখন স্কুলে যেতে পারি না।
সুমন (১১) নামে আরেক শিশু জানায়, শুধু আমি নই, আমার মতো প্রায় অনেক শিশু এই দোকানগুলোতে কাজ করে সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। অনেক সময় কাজ করতে একটু দেরি হলে মালিক মারধর করে।

এক হোটেল মালিক বলেন, অভাবের কারণে অভিভাবকরা এসব শিশুদের কাজে পাঠাচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে বেতনের পাশাপাশী ওরা বকশিশও পায় তা দিয়ে নিজে চলে এবং পরিবারে দেয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সালাম চৌধুরী ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রিতা মন্ডল বলেন মন্ত্রনালয় থেকে সরকারীভাবে শিশু শ্রম পর্যবেক্ষণ কমিটি করে পাঠিয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করা হবে। আমাদের দেশে প্রায় ৩৮ ধরনের শিশুশ্রম অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আজকের শিশুরা আগামীর ভবিষ্যৎ। যেসব শিশুরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে তাদের সচেতনতার  জন্য সরকারের পাশা পাশী বিভিন্ন এনজিও সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে যেসব শিশুরা কম বয়সে এসব কাজে নেমে পড়ছে, তাদের অভিভাবককে সচেতন করতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারা যেন তাদের শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ কাজে না পাঠায়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম থেকে শিশুদের মুক্ত করতে না পারলে শিশুরা শারিরিক ও মানষিক ভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হবে। সেই সাথে তাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। সরকারের একার পক্ষ্যে শিশুশ্রম বন্ধ সম্ভব নয়। তাই শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলার জন্য শিশুশ্রম বন্ধে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।



পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 4832714304087181976

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item