নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন: শপথ কাল

ডেস্ক-
সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে এ সংক্রান্ত কোনো প্রজ্ঞাপন এখনও জারি করা হয়নি। দেশের ২২তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেলেন তিনি।

আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ নেবেন তিনি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদিন এ তথ্য জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব বলেন, ‘নতুন প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবারই নিয়োগ আদেশে স্বাক্ষর করেছেন রাষ্ট্রপতি। হয়তো অল্প কিছু সময়ের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।’

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মো. জয়নাল আবেদিন জানান, আগামীকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে শপথ পাঠ করাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এখন এ অনুষ্ঠানের যাবতীয় প্রস্তুতি চলছে।

প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার ছুটিতে যাওয়ার পর থেকেই আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করছেন। শুরু থেকেই প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পাশাপাশি বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নাম আলোচনায় রয়েছে। তবে এ তিনজনের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হলো।

রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করিবেন।’

সংবিধানে এ ব্যাপারে আর বিস্তারিত কিছুই বলা হয়নি। তবে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রথমে আপিল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন, তার ব্যাপারে সম্মতি দিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়কে জানান। এরপর মন্ত্রণালয় থেকে ওই বিচারপতির ব্যাপারে ফাইল প্রস্তুত করে তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠান। প্রধানমন্ত্রীর স্বাক্ষরের পর বিষয়টি রাষ্ট্রপতির কাছে যায়। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর প্রধান বিচারপতি নিয়োগের গেজেট জারি করে আইন মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, গত বছর ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা সিঙ্গাপুর থেকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এরপর ১৪ নভেম্বর পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে রাষ্ট্রপতির দপ্তর তা পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। পরে আইন মন্ত্রণালয় আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গত বছর ১ আগস্ট উচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিয়ে করা ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় প্রকাশিত হয়। এই রায়ে প্রধান বিচারপতির দেওয়া বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছিলেন মন্ত্রী, দলীয় নেতা ও সরকারইন্থ আইনজীবীরা। তারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিও তোলেন।

সমালোচনার মধ্যেই ১ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা হঠাৎ করেই এক মাসের ছুটির কথা জানিয়ে চিঠি দেন। পরের দিন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞাকে সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।

৯৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতির পদ শূন্য হইলে কিংবা অনুপস্থিতি, অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে প্রধান বিচারপতি তাহার দায়িত্ব পালনে অসমর্থ বলিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে ক্ষেত্রমতো অন্য কোনো ব্যক্তি অনুরূপ পদে যোগদান না করা পর্যন্ত কিংবা প্রধান বিচারপতি স্বীয় কার্যভার পুনরায় গ্রহণ না করা পর্যন্ত আপিল বিভাগের অন্যান্য বিচারকের মধ্যে যিনি কর্মে প্রবীণতম, তিনি অনুরূপ কার্যভার পালন করিবেন।’

সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, বিএসসি ক্যাডার হওয়ার পর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন এলএলবি সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৮১ সালে জেলা জজ আদালতে ও ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে অ্যাডভোকেট হিসেবে তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। পরে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০০১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। পরে ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।

সৈয়দ মাহমুদ হোসেন দুই বার নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গঠিত সার্চ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ টাইব্যুনালেরও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে ১৯৯৯ সালে তিনি সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্ব পালন করেন।

আপিল বিভাগের পাঁচ জন বিচারপতির মধ্যে মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ। জ্যেষ্ঠতা বিবেচনায় আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার পরেই ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। আর এরপরে পর্যায়ক্রমে রয়েছেন বিচারপতি মো. ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।

বয়সসীমা অনুযায়ী আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার দায়িত্বপালন করতে পারতেন ২০১৮ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত। আর বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ২০২১ সাল পর্যন্ত দায়িত্বপালন করতে পারবেন। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন অবসরে যাবেন ২০২৩ সালে। এছাড়া বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর অবসরের তারিখ ২০২৩ সাল এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার অবসরে যাবেন ২০২১ সালে।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 5722640303291657422

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item