দুর্নীতির রায়ের ফলে বিএনপিতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাদের মাঝে বিভ্রান্তির ছাপ স্পষ্ট


জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়ে বেগম খালেদা জিয়ার পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড হয়েছে। তারেক রহমানসহ অন্য আসামিদের ১০ বছর করে কারাদন্ড ঘোষণা করা হয়েছে।

আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ও সামাজিক অবস্থান বিবেচনা করে তাকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। অন্যদের ১০ বছরের কারাদন্ডই বহাল রাখা হয়েছে। সেইসঙ্গে অর্থদন্ড হিসেবে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে আসামীদের।

বৃহস্পতিবার (৮ই ফেব্রুয়ারি) ১টা ৪০ মিনিটে রায় শুনতে গুলশানের বাসা থেকে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসায় স্থাপিত ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ আদালতে পৌঁছান বেগম জিয়া।

এদিকে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে আদালতে পৌঁছান বিচারক ড. আখতারুজ্জামান। এ মামলার অপর তিন আসামি পলাতক রয়েছেন। তারা হলেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান এবং কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী।

উল্লেখ্য, ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই দুদক খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে এ মামলাটি করে।
সাম্প্রতিক রাজনীতি পর্যালোচনা করলে বিএনপিতে ভাঙ্গনের সুর ¯পষ্ট। দলে এখন  ৫ মাথা দৃশ্যমান। নেতাকর্মীরা নেতা মানছেন কেউ খালেদা জিয়াকে, কেউ তারেককে, কেউ ফখরুল, কেউবা মওদুদ আবার কেউবা রিজভীকেও দলের ক্রান্তিকালে একতার  পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছানোর প্রবৃত্তি বিএনপিতে দেখা যাচ্ছে, যা দলের জন্য অশনি সংকেত বলছেন বিশ্লেষকরা। বিএনপি অতীত কর্মকান্ডের জন্য এমনিতেই জনবিচ্ছিন্ন। নির্বাচনে না যাওয়ার মাশুল শেষ হবার আগেই এই অন্তর্দ্বন্দ্ব ও দলীয় কোন্দল বিএনপিকে নাকাল করছে। সামরিক লেবাসে জন্ম নেয়া বিএনপি গণতন্ত্রের পথে ভালভাবে এডজাস্ট করতে পারেনি কখনোই। সামনের কঠিন চ্যালেঞ্জ তারা কিভাবে মোকাবিলা করে সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

খালেদা জিয়ার ভুল সিদ্ধান্ত ও নাশকতামূলক কর্মকান্ডের কারণে বিএনপি’র ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। বিএনপির সাম্প্রতিক রাজনীতি, নেতাদের ঐক্য ভাঙার পথে কাজ করছে। বেগম জিয়া কারাগারে যাবার মাত্র একঘন্টার মধ্যে বিএনপিতে মত বিরোধ প্রকাশ্য আকার নিয়েছে। বিএনপির নেতারা পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন এবং বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদিকে খালেদার অনুপস্থিতিতে কেউ তারেক জিয়া কে দল প্রধান মানছেন আবার অনেকেই এ ব্যাপারে প্রকাশ্যে আপত্তি তুলছেন।

দলীয় ঘোষণায় বিভ্রান্তির ছাপ ¯পষ্ট বিএনপিতে। ৭ ফেব্রুয়ারী সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া রায় পরবর্তী আন্দোলনের কথা বললেও, মধ্যরাত নাগাদ রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিএনপির সিলপ্যাডের একটি ঘোষণায় নেতা কর্মীদের শান্ত থাকতে বলা হয়। দলীয় কমান্ডে বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে বিএনপিতে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও দিয়েছেন বিভ্রান্তিকর নির্দেশনা। দলীয় প্রধানের বিপক্ষে গিয়ে তিনি নেতা কর্মীদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেন।

দলীয় চেয়ারপারসন ও বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণার ফারাকে বিভ্রান্ত ছিল নেতা কর্মীরা। তারা রায় পর্যন্ত ও পরবর্তীতে কোন দলীয় দিক নির্দেশনা পায়নি। তাহলে কি দলে চেয়ারপারসন বিদ্বেষী মনোভাব গড়ে উঠল? বিএনপির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে।
উদ্ভান্ত দিকনির্দেশনার জন্যই দিকভ্রষ্ট ছিল বিএনপির কর্মীরা। একদিকে জনবিচ্ছিন্নতা, অন্যদিকে দিক নির্দেশনার অভাব বিএনপিকে দাঁড়াতেই দেয়নি ৮ তারিখে। ভবিষ্যতে দলের কর্মপরিকল্পনা কি হয় তা দেখার বিষয়। ৯ তারিখের বিক্ষোভ সমাবেশও ছিল বিক্ষিপ্ত। দলীয় মহাসচিব নেতা কর্মীদের ছেড়ে যখন পলায়ন করে তখন দলের রাজনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে। বায়তুল মোকাররমের সামনে তারা ৩-৫ মিনিটের বিক্ষোভ করে, যা ফেলে জিপ নিয়ে চলে যান মির্জা ফখরুল। পরবর্তীতে সেটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। নাশকতা অব্যাহত রাখার প্রয়াসও ছিল বিএনপির। রায় পরবর্তী সহিংসতা তারা দেখিয়েছে। রাস্তায় যানবাহনে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ- এগুলো মিডিয়া ফুটেজে ধরা পড়েছে।

বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিতর্কের পালে নতুন হাওয়া দিয়েছেন। সরকারি দলের সাথে সখ্যতা গড়ে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে চাচ্ছেন এ নেতা। চতুর্মুখী বিতর্কের পালে আবদ্ধ এখন বিএনপি। বারংবারের ভুল সিদ্ধান্ত দলটিকে এখন দেউলিয়া রাজনৈতিক দলে পরিণত করেছে।
দুর্নীতি দেশের উন্নয়ন ও প্রগতির অন্তরায়। কোন ধরণের দুর্নীতিকেই প্রশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই কারণ তাতে আইনের শাসন প্রশ্নবিদ্ধ হয়। খালেদা জিয়াকে কোন রাজনৈতিক দন্ড দেয়া হয় নাই, দেয়া হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহারের সাজা। এ রায় দুর্নীতির দমনের জন্য, দৃষ্টান্ত কায়েমের জন্য। যে দেশে একজন এত প্রভাবশালীর নিরপেক্ষ বিচার হচ্ছে, সে দেশ বিচারিক কাজে দৃষ্টান্ত আকারে থাকবে।

অন্যায়ের সাজা হওয়া বাঞ্চনীয়। মিথ্যা কখনো সত্যের উপর জয়ী হয় না। প্রভাবশালী খালেদা জিয়ার রায় প্রমাণ করে কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অপরাধকে নিরুৎসাহী করতে এই রায় মাইলফলক আকারে থাকবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ জনতার।

সূত্র: অদ্বিতীয় বাংলা ডট কমhttp://odwitiobangla.com/2018/02/10/696/

পুরোনো সংবাদ

নির্বাচিত 2480599001973516477

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item