নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে অসহায় দরিদ্র নারীদের নিপুণ হাতের তৈরী নকশিকাঁথা নজর কেড়েছে সবার

মোঃ শামীম হোসেন বাবু, কিশোরগঞ্জ,নীলফামারীঃ
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার অসহায় হতদরিদ্র, স্বামী পরিত্যাক্ত,বিধবা, অসচ্ছল পরিবারের নারীদের নিপুণ হাঁতের তৈরী নকশিকাঁথা সবার নজর কেড়েছে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে  এসব নারী নকশিকাঁথায় মনোনিবেশ করেছেন । নিজেদের বাঁচার অবলম্বন নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন নকশি কাঁথা সেলাই প্রশিক্ষনের মাধ্যমে। আর এ কাজে তাদেরকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন উদকনিক প্রকল্প।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বি আর ডিবি) সুত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ উপজেলার অসহায়, দরিদ্র, অসচ্ছল, স্বামী প্ররিত্যক্তা, ও বিধবা, নারীদের  ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটানোর জন্য  সরকারী অর্থায়নে উদকনিক প্রকল্পের মাধ্যমে  এ উপজেলায়  ২০১২ সাল থেকে নকশি কাঁথা, সেলাই প্রশিক্ষন, পাপস বুনন, এ্যামবোডারী, বাটিক বুটিক,সহ মোট ৯ টি ট্রেডে এখন পর্যন্ত ৮৬৪ জন নারীকে প্রশিক্ষন প্রদান করেছে। প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নারীরা তাদের এ সকল প্রশিক্ষন নিয়ে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন।
 গত রবিবার সরেজমিনে  চাঁদখানা ইউনিয়নের কেল্লাবাড়ি গোয়ালপাড়া গ্রামের  কৃষি শ্রমিক গোকুল চন্দ্রের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার স্ত্রী বনিতা রানী (৩০) নিপুন হাতের যাদু দিয়ে একটি নকশি কাঁথা তৈরীতে ব্যাস্ত সময় পাড় করছেন। এসময় তার সাথে কথা বললে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ১২ বছর আগে আমার স্বামী মানুষের জমিতে কৃষি শ্রমিকের কাজ করে । তার আয় দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া ও সংসার চালানো কঠিন। তাই আমার এক প্রতিবেশির মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে পল্লী উন্নয়ন অফিসের আওতাধীন উদকনিক প্রকল্প থেকে নকশি কাঁথার উপর ৬০ দিনের প্রশিক্ষন গ্রহন করি। বর্তমানে আমি নকশি তৈরী করে প্রতিমাসে তিন থেকে চার হাজার টাকা আয় করছি। এত সুন্দর নকশি কাঁথা কোথায় বিক্রি করবেন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন  আগামী ১১ জানুয়ারী থেকে উপজেলা পরিষদ মাঠে তিন দিনের উন্নয়ন মেলা হবে। সেখানে এই নকশি কাঁথা নিয়ে যাবো তাই তাড়াতাড়ি সেটি তৈরী করছি।
পুটিমারী ইউনিয়নের উত্তর কালিকাপুর গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী ওবায়দুর রহমানের স্ত্রী নুরবানু বেগম (৪০) বলেন, আমার দুই ছেলে এক মেয়ে তারা সকলেই পড়াশুনা করে। বড় ছেলে নীলফামারী সরকারী কলেজের রাষ্টবিঞ্জান বিভাগের ফাইনাল ইয়ার, মেজ ছেলে একই কলেজে অর্নাস দ্বিতীয় বর্ষ, ও ছোট মেয়ে সরকারী মহিলা কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমার তিন ছেলে মেয়ের পড়ালেখার খরচসহ সংসার চালাতে খুব কষ্ট হত। বর্তমানে আমি উদকনিক প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারীভাবে প্রশিক্ষন নিয়ে নকশি কাঁথা তৈরী করে মাসে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করছি। আগামীতে আরো বেশি আয় করতে পারব। আর এ টাকা দিয়ে আমার ছেলে মেয়েদের পড়াশোনার জন্য সাহায্য করব।
কালিকাপুর গ্রামের সুফলা বেগম বলেন, আমার বাবা একজন ক্ষুদ্র কৃষক। আমরা তিন বোন সবার মধ্যে আমি বড়। আমি নীলফামারী সরকারী কলেজে পড়ি। আমার বাবা ঠিকমতো পড়াশোনার খরচ দিতে পারেননা তাছাড়া বিয়ের আলাপ আসলে যেীতুকের কারণে আমার বিয়েও হচ্ছেনা। আমার এক প্রতিবেশির মাধ্যমে সংবাদ পেয়ে আমি উদকনিক প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে বর্তমানে নকশিকাঁথা তৈরী করে মোটামুটি ভালই আয় করছি। তা দিয়ে আমার পড়াশোনা ভালই চলছে।
 এ বিষয়ে জানতে চাইলে উদকনিক প্রকল্পের প্রডাকশন ম্যানেজার এইচ এম রায়হান বলেন, উদকনিক প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষন নিয়ে অনেক নারী এখন স্বাবলম্বী। প্রশিক্ষন প্রাপ্ত নারীদের উৎপাদিত পণ্য সমুহ যাতে তারা সঠিক দামে ও ন্যায্য মুল্যে  বিক্রি করতে পারে সেজন্য আমরা সরকারী ও বেসরকারীভাবে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ রাখছি।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার আল মিজানুর রহমান বলেন, পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের লক্ষ্য হচ্ছে স্থানীয় দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে সংগঠিত করে প্রশিক্ষন, মুলধন, সৃজন এবং আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যমান সুযোগ ও সম্পদের সমন্বিত ব্যাবস্থাপনার মাধ্যমে আতœনির্ভরশীল পল্লী গঠন করা। সেই লক্ষ্যে উদকনিক প্রকল্প দরিদ্র নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষন প্রদান , পুজি গঠন এবং স্বল্প সুদে ঋন প্রদান এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করা।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4800415643351144836

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item