একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-ঠাকুরগাঁও-২ আওয়ালীগের আসন দখলে নিতে মরিয়া বিএনপি-জামায়াত

জে.ইতি হরিপুর ঠাকুরগাও প্রতিনিধিঃ

ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর, বালিয়াডাঙ্গী ও রানীশংকৈল উপজেলার কাশিপুর ও ধর্মগড় ইউনিয়ন নিয়ে ঠাকুরগাঁও-২ আসন। দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে আসনটি অব্যাহবভাবে ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের এমপি দবিরুল ইসলাম।
একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁও-২ আসনে কে হচ্ছেন কোন দলের প্রার্থী তা নিয়ে নানা গুঞ্জন শুরু চলছে। আওয়ামী লীগ থেকে বর্তমান এমপি দবিরুল ইসলাম ছাড়াও আরো তিনজন এ আসনে মনোনয়ন চাইছেন। এরই মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু তৃণমুল পর্যায়ে নির্বাচনী মাঠ বেশ শক্ত অবস্থান তৈরি করে ফেলেছেন । অপর দুই জনের নির্বাচনী মাঠে অবস্থান নীরব হলেও ভিত কিছুটা শক্ত। আর বিএনপিতে একাধিক প্রার্থী থাকলেও জামায়াত আবারো মরিয়া এ আসনে তাদের প্রার্থী নিশ্চিত করতে।
বর্তমান এমপি দবিরুল ইসলাম পরপর ৬বার এ আসনটি ধরে রেখেছেন আওয়ামী লীগের পালে। আর বিরোধী পক্ষ জামায়াত বারবার সামান্য ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি দবিরুল ইসলামের কাছে পরাজিত হচ্ছে। বারবার জামায়াতের প্রার্থী সামান্য ভোটের কারণে হেরে যাওয়ার ফলে বিএনপির নেতাকর্মী জামায়াতের প্রার্থীর প্রতি অনিহা প্রকাশ করছে। এ আসনে  জামায়াতের পরিবর্তে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ধানের শীষ মার্কা হলে এ আসনটি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সহজে উদ্ধার করতে পারবে বলে বিএনপির একাধিক নেতা মনে করেন। এবারও দবিরুল ইসলাম এ আসনে টিকিট পেতে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু, জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান এমপি দবিরুল ইসলামের বড় ছেলে মাজারুল ইসলাম সুজন এবং বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার রায়।
অপরদিকে বিএনপি’র ২০দলীয় জোটের মনোনয়নের প্রধান দাবিদার জেলা জামাতের আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম। তবে এবার বিএনপি এ আসনে ছাড় দিতে নারাজ। এ কারণে বিএনপির মনোনয়ন পেতে একাধিক প্রার্থী মাঠ চুষে বেড়াচ্ছে। এরা হলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও সাবেক এমপি জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা ও ড্যাব নেতা ডাঃ আব্দুস সালাম।
তবে বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলার তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামকে এ আসনে প্রার্থী হিসেবে চাইছেন বলে জানা গেছে। মির্জা ফখরুল ইসলামকে প্রার্থী হলে দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের দখলে থাকা এ আসনটি উদ্ধার করতে সম্ভব হবে বলে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা মনে করেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য ও সাবেক এমপি জেড মর্তুজা চৌধুরী তুলা বলেন, আমি দীর্ঘ দিন থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। এই এলাকায় আমার বাড়ি। ১৯৯৬ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারী ৬ষ্ঠ সংসদ নির্বাচনের এ আসনের ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করেছিলেন। আমি ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। জোটের কারণে এরপর থেকে জামায়াতকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল কিন্তু জামায়াত প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিম একবারও জয় লাভ করতে পারেন নাই। তাই এ এলাকার মানুষ আর জামায়াতের প্রার্থী চাইনা তারা চায় ধানের শীষ মার্কার প্রার্থী। বিএনপি থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এ আসনটি উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এ আসনে ভোট যদি নিরপক্ষ ও সুষ্ঠ হয় তাহলে এলাকার ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে আশা করছি।
এদিকে জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুল হাকিম ২০০৮ সালের নির্বাচনে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হওয়ায় এবারও মনোনয়ন চাইবেন ২০দলীয় জোটের কাছে। হাই কমান্ড কি করবেন  সে  দ্ব›দ্বে ভুগছে বিএনপি-জামায়াত।
জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিম বলেন, পরপর এ আসনে দুইবার আমি সামান্য ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছি তবে এ আসনে সুষ্ঠ ও অবাধ নির্বাচন হলে ভোটাররা আমার পক্ষেই গণরায় দেবেন। অপরদিকে বিএনপির তৃণমুল নেতাকর্মীরা বলছেন, জামায়াত পরপর দুবার নির্বাচন করে জয়ী হতে পারেনি।এবারও তাদের প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এবার বিএনপির প্রার্থী দিয়ে দীর্ঘদিন বেদখলে থাকা আসনি দখল করতে চায় বিএনপি। এজন্য বিএনপি থেকে দুই নেতাই মনোনয়ন পেতে তবদির করছে দলীয় হাইকমান্ডে। এ অঞ্চলের মানুষ আওয়ামী লীগের দুঃশাসন ও নির্যাতন থেকে মুক্তি চায়। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে এ এলাকার মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণরায় দেবে বলে মনে করেন তারা। এজন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান বালিয়াডাঙ্গী ও হরিপুর উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তবে এ আসনটিতে ৯ম সংসদ নির্বাচনে মাত্র সাড়ে ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরে যাওয়া জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল হাকিম এবারও মনোনয়ন পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তবে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তিনি এবার নিজ দল থেকে নির্বাচন করতে পারছেন না।
এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মোস্তাক আলম টুলু এই আসনে এবার মনোনয়ন চাইছেন। দলে শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি দীর্ঘ এক যুগ ধরে স্থানী দলীয় নেতাকর্মী ও সাধারণ ভোটারদের পাশে থেকে নিজ অর্থায়নে বিভিন্ন উন্নয়নমুলক সেবা দিয়ে আসছেন।
আওয়ালীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রবীর কুমার রায়। তিনিও নৌকার ব্যানারে মনোনয়ন চাইবেন। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালিন সময়ে জনগণের কাছাকাছি থেকে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। এলাকায় তিনি সচ্ছ্য ও পরিছন্ন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে পরিচিত। প্রবীর কুমার রায় বলেন একাদশ সংসদ নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চাইছি। যদি দল আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমি নির্বাচিত হবো আশা করি। যদিও এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ৬বারের এমপি দবিরুল ইসলাম শক্ত প্রার্থী। তারপরেও দবিরুল ইসলাম এমপির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ তুলেছেন নিজ দলের নেতাকর্মী। এ ব্যাপারে দবিরুল ইসলাম এমপি বলেন, একটি বিরোধী পক্ষ আমার বিরুদ্ধে নানা ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে। সে সব অভিযোগের ভিত্তি বা কোন সত্যতা নেই। আমার দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক জীবনের ইমেজ নষ্ট করতে তারা উঠে পড়ে লেগেছে। আমি এ আসন থেকে ৬বার এমপি নির্বাচিত হয়েছি। এ অঞ্চলের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। সব সময় এলাকার মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থেকে রাজনীতি করে আসছি এবং ভবিষ্যতেই থাকবো ইনশাল্লাহ।
অপরদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছে, বর্তমান এমপি দবিরুল ইসলামের বড় ছেলে ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাজারুল ইসলাম সুজনও দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন।
১৯৮৬ সালে ৭ মে ৩য় সংসদ নির্বাচনে দবিরুল ইসলাম নৌকা মার্কা নিয়ে ৩৪ হাজার ৬২ ভোট পেয়ে প্রথম এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে ২৭ফেব্রুয়ারী ৫ম সংসদ নির্বাচনে দবিরুল ইসলাম (নৌকা মার্কা) ভোট পান ৪৬ হাজার ৪৫২,নিকটতম বিএনপির  প্রার্থী আলতাফুর রহমান পান ১৭ হাজার ৭০৭, ১৯৯৬ সালে ১২ই জুন ৭ম সংসদ নির্বাচনে দবিরুল ইসলাম (নৌকা মার্কা) ভোট পান ৪৮ হাজার ৩৪৪, নিকটতম ছিল জাতীয় পাটির প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবু। তিনি পান ২৮ হাজার ৭৫৭ ভোট। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৮ম সংসদ নির্বাচনে দবিরুল ইসলাম (নৌকা মার্কা) ভোট পান ৬২ হাজার ৪৮৩, নিকটতম জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিম পান ৫৭ হাজার ১৯৬ ভোট। ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর ৯ম সংসদ নির্বাচনে দবিরুল ইসলাম (নৌকা মার্কা) ভোট পান ১ লাখ ২ হাজার ৮৩৩, নিকটতম জামায়াতের প্রার্থী মাওলানা আব্দুল হাকিম পান ৯৮ হাজার ৪৫৬ ভোট। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী ১০ম সংসদ নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত ভোট বর্জন করলে দবিরুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৬ষ্ঠ বারের মত এমপি নির্বাচিত হন।
সেই হিসেবে সব মিলিয়ে কখনো জামায়াত,কখনো বিএনপি আর কখনো জাতীয় পাটির প্রার্থীর সঙ্গে লড়েছেন তিনি। প্রতিবারেই তিনি জয়ী হয়েছেন।
দবিরুল ইসলাম এমপি বলেন, এলাকার স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট, ব্রীজ, বিদ্যুতায়নসহ ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। এবারও দলীয় মনোনয়ন পেলে এলাকার ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করবে এবং মনোনয়নের বিষয়ে হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত রয়েছে।
অপরদিকে একাদশ সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পাটি ৩০০ আসনে একক প্রার্থী দিলে এ আসনে মনোনয়নের জন্য তোড়জোড় করছেন কেন্দ্রীয় মহিলা পাটির সহ-সভাপতি নুরুন নাহার বেগম। তিনিও এলাকায় নির্বাচনী মাঠ তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

পুরোনো সংবাদ

নির্বাচন 7079056853550130310

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item