বিদ্যালয় ভবন তিস্তা নদী গর্ভে বিলীন, টিনশেড ঘরে গাদাগাদি করে চলছে ক্লাস

ফজলুর রহমান, পীরগাছা(রংপুর)

কিছুদিন আগেও এখানে বসতি ছিল, ছিল কোলাহল। ছিল সবুজের সমারোহ। ছিল একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশু শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। অথচ এসব আজ শুধুই স্মৃতি। গত বন্যায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে সবকিছু। এলাকাবাসি ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বালুর বস্তা ফেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। তিস্তা নদী ভাঙ্গণে বিলীন হয়ে গেছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পূর্ব শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। বর্তমানে পাশের বাজারের একটি টিন শেড ঘরে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষার্থীদের ক্লাস।
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীতে পানি কমে যাওয়ায় তিস্তার গর্ভে বিলীন হওয়া বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনটির সামান্য অংশ ভেসে উঠেছে। গত বন্যায় তিস্তার তীব্র ভাঙ্গণের কবলে পড়ে তীর থেকে প্রায় ৩০ ফুট নিচে তলিয়ে যায় বিদ্যালয়টি। এতো দিন এর অস্তিত্ব দৃশ্যমান ছিল না। এখন ভেসে ওঠা বিদ্যালয়ের একাংশ দেখার জন্য উৎসুক দর্শনার্থীদেরও ভীড় লেগেই আছে।
বিদ্যালয় থেকে চেয়ার, টেবিল ও আসবাব পত্র আগেই সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। মাঝে প্রায় ২ মাস বিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে এলাকাবাসির সহযোগিতায় শিবদেব নয়ারহাট বাজারে তরকারি বিক্রির একটি শেডে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু শেডটিতে জায়গা না হওয়ায় শিক্ষকদের নিজস্ব অর্থায়নে পাশেই একটি টিনের শেড ঘর তুলে চারপাশে পুরোনো টিনের বেড়া দিয়ে তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। সেখানেই এখন গাদাগাদি করে বসে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। উপজেলা প্রশাসন ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ২২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়ের দোতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। ২০১৪ সাল থেকে এই ভবনে পাঠদান শুরু হয়। বর্তমানে ৩ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন।
বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আলী বলে, ‘আমাদের চোখের সামনে প্রিয় স্কুলটি নদীতে ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে।’
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী জেসমিন আক্তার বলে, ‘ আগের স্কুল ঘরটি পাকা ছিল। আমরা খুর সুন্দর পরিবেশে পড়াশুনা করেছি। আর এখন ছোট একটা ঘরে কষ্ট করে ক্লাস করতে হয়।’
তৃতীয় শ্রেণির রাশেদা আক্তার বলে, ‘আর কতো দিন আমাদের এতো কষ্ট করে ক্লাস করতে হবে। আমরা আগের মতো নতুন স্কুল চাই।
পূর্ব শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আইয়ুব আলী বলেন, ১২ আগস্ট থেকে বিদ্যালয় ভবনটি ভাঙ্গণের কবলে পড়ে। এক পর্যায়ে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নানা সংকটের মধ্যেও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সুরত জামাল মিয়া বলেন, অনেক চেষ্টার পরেও ভাঙ্গণের হাত থেকে বিদ্যালয়টি রক্ষা করা যায়নি। একটি টিন শেড ঘরে এত শিক্ষার্থীর ক্লাস করা খুবই কষ্টকর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, নদীতে ভেঙে যাওয়া বিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে নতুন করে করা হবে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 2889834100098467536

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item