আজ নীলফামারীর রামগঞ্জ ট্র্যাজেডির চার বছর

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১৪ ডিসেম্বর॥
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) নীলফামারীর রামগঞ্জ ট্র্যাজেডির চতুর্থ বছর। ২০১৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর নীলফামারী সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ হাটে সংস্কৃতিমন্ত্রী ও নীলফামারী সদর আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূরের গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগের চার নেতা ও এক পথচারীসহ পাঁচজনকে হত্যা করেছিল জামায়াত-শিবির।

মানববতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসীর রায় কার্যকর হওয়ার পর সেই রাতে (১২ ডিসেম্বর/২০১৩) জামায়াত শিবির নীলফামারী জেলা সদরের বিভিন্ন গ্রামে তান্ডবলীলা চালায়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসাবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে জ্বালিয়ে দেয়। এ সব ঘটনা সরেজমিনে দেখতে সংস্কৃতিমন্ত্রী ১৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে পলাশবাড়ির তরুনীবাড়ি, হরতকীতলা, লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের কাছারীবাজার, শীশাতলী ও লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্যাম চরন রায়ের বাড়ি পরিদর্শন ও পথসভা শেষে বিকাল সাড়ে ৪টার দিয়ে নীলফামারী শহরে ফিরছিল। এ সময় জেলা সদরের টুপামারী ইউনিয়নের রামগঞ্জ ব্রীজের কাছে পেছন দিক থেকে জামায়াত শিবির ও বিএনপির নেতা কর্মীরা তার গাড়ী লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এরপর সামনে দিক থেকে জামায়াত শিবিরের আরেকটি দল এগিয়ে আসতে থাকে। এ সময় হামলাকারীরা হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৪০ টি মটরসাইকেল ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতাকর্মীদের বাসাবাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তাদের হাতে নিহত হয় আওয়ামী লীগের ৪ নেতা কর্মী সহ ৫ জন।
সেদিনের হত্যা কান্ডের শিকার যারা হন তারা হলেন টুপামারী ইউনিয়নের কৃষকলীগের সভাপতি খোরশেদ চৌধুরী, দুই ভাই ওই ইউনিয়নের যুবলীগের সাংগঠনিক স¤পাদক ফরহাদ শাহ ও ছাত্রলীগ কর্মী মুরাদ শাহ ও আওয়ামী লীগ কর্মী লেবু মিয়া। এদের ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং হাত পায়ের রগ কেটে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ সময় পথচারী বাঁশ বিক্রেতা আবু বক্কর সিদ্দিকও রক্ষা পায়নি হামলাকারীদের হাত থেকে। তিনিও হত্যার শিকার হন। এ ছাড়া ওই ঘটনায় আহতদের মধ্যে হাত বা পা, চোখ অচল হয়ে পঙ্গত্ব বরন করে বেঁচে আছেন ছাত্রলীগ কর্মী রাসেল আমিন স্বপন, রুহুল আমিন শিপন, যুবলীগ নেতা মানিক হোসেন, ছাত্রলীগের জাহাঙ্গীর ওয়াসী, জ্যোতিস চন্দ্র রায়, বাদশা সহ অনেকে। অপর দিকে গুরুত্ব আহত যুবলীগ নেতা মাহাবুল তিন বছর দুই মাস আগে মৃত্যু বরন করেন।
রামগঞ্জহাট এলাকায় জামায়াত শিবিরের ওই হামলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ১৪১ রাউন্ড সট গান,৩৭ রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেছিল বলে পুলিশের খাতায় লিপিবন্ধ করা হয় ।
এ ঘটনায় তৎ সময়ের নীলফামারী থানার ওসি (তদন্ত ) বাবুল আকতার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।  আদালত সুত্রে জানা যায় ওই ঘটনায় পুলিশ ২০১৫ সালের ১১ মার্চ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী প্রভাষক খায়রুল আনাম, জেলা জামায়াতের সাবেক সহকারি সেক্রেটারী অধ্যাপক আবু হেলাল, টুপামারী জামায়াতের নেতা মালেক কাজী, আ,ন,ম মতিউর রহমান,বিএনপি নেতা খালেক মহাজন সহ ২১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালতে ওই মামলাটি বর্তমনে বিচারাধীন।
ওই ঘটনায় নিহত ওই ৫ পরিবারের মাঝে ইতো মধ্যে বর্তমান সরকারের পক্ষে ৪৫ লাখ টাকার অনুদান প্রদান করা হয়।

রামগঞ্জ র্ট্যাজেডির চার বছর স্মরনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) টুপামারী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ও তার সকল অঙ্গসংগঠন রামগঞ্জ হাট এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে কোরানখানি, মিলাদ মাহফিল ও দোয়া, মৌনমিছিল স্মরণসভা। এসব কর্মসূচীতে অংশ নেবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর এমপিসহ জেলা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, সকল অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। এছাড়া হত্যার শিকার পাঁচ পরিবারের পক্ষেও নিজ নিজ বাসভবনে চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হবে।
আজ বুধবার দুপুরে নিহত মুরাদ ও ফরহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় ওই বাড়িতে চলছে চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর প্রস্তুতি। এই দুই ভাইয়ের মা মেরিনা বেগম দুই ছেলের শোকে এখনও কাতর। দুই ছেলের ছবি হাতে নিয়ে চলছে তার আহাজারি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, একটা মুরগী মারলে বিচার হয়, আমার দুইটা ছেলেকে জামায়াত-শিবির মেরে ফেলল কিন্তু চার বছরেও কোন বিচার পাইলাম না। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুলিশ বলে তাদের খুঁজে পায় না। আমি সরকারের কাছে আমার দুই ছেলের হত্যার বিচারের মাধ্যমে ফাঁসি দেখে যেতে চাই।



পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1373721411149769456

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item