গল্প দাদুর কথা

আশিকুর রহমান,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি-


বাঘের গলায় বিঁধল কাঁটা,
বাঘ কাশে খক খক।
সামনে দিয়ে যায় উড়ে যায়,
বাঘ ডাকে, ঐ বক।

এভাবেই ছড়া কাটে আর গল্পের জাল বুনে, শিশুদের আনন্দে দিয়ে গল্প বলে চলে, কুড়িগ্রাম সদর ্উপজেলার, হলোখানা ইউনিয়নের, চর সারডব কমিউনিটি রিডিং ক্যাম্প সংলগ্ন নিবাসী, ৮০ বছর বয়সী সদর আলী। এই বছরের জানুয়ারি মাস হতে ইউএসএআইডি এর আর্থিক সহায়তায়, সেভ দ্য চিলড্রেন এর কারিগরি সহযোগিতায় এবং আরডিআরএস বাংলাদশ কর্তৃক বাস্তবায়িত রিড প্রকল্পের আওতায় অত্র এলাকার চর সারডব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যালয়ের বাহিরে স্থাপন করা হয়েছে কমিউনিটি রিডিং ক্যাম্প। এই কমিউনিটি রিডিং ক্যাম্পেই সদর আলী নিয়মিত শিক্ষার্থীদের গল্প শোনান। তিনি এই কার্যক্রমের একজন গল্প বলার অতিথি। কী নাই তার গল্প ঝুলিতে। মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বিভিন্ন সময়ে বন্যায় জীবন বাঁচার গল্প, রাজা-রানি, রাজপুত্র আর রাজকন্যার গল্প, দৈত্য-দানব, জ্বীন-পরীর গল্প আরও কতো কী! অবিরাম ছড়া কাটেন, আর গল্প বলে চলেন এই গল্পকার। তাইতো অত্র এলাকার শিশুরা মজা করে তাকে ডাকেন গল্প দাদু।
এই গল্প দাদুর গল্প শুনতে শিশুরা দল বেঁধে নিয়োমিত রিডিং ক্যাম্পে সময়মতই উপস্থিত হয়। আর গল্প দাদু সদর আলীও তাদের মজা করে, হাত-পা নেচে, অঙ্গভঙ্গী করে গল্প বলেন। শিশুরাও মন্ত্রমুদ্ধের মতো তার গল্প শোনে, আর স্বপ্নের জাল বুনে। তিনি শুধু গল্পই বলেন না, তিনি শিশুদের আচরণগত দিক নিয়েও কথা বলেন, পড়ালেখার বিষয়ে উপদেশ দেন, শপথবাক্য পাঠ করান।
এই মানুষটি সম্পর্কে জানতে হাজির হই অত্র রিডিং ক্যাম্পে। কথা হয় গল্প দাদু সদর আলীর সাথে। তাঁকে জিজ্ঞেস করি আপনাকেতো এলাকার শিশুরা সবাই গল্প দাদু বলেন, আপনার কেমন লাগে? একগাল হেসে গল্প দাদু বলেন, ‘‘ওরা আমাকে খুব ভালোবাসে, ওরা সবাই আমার নাতি-নাতনির মতো, তাইতো ওরা আমাকে দাদু বলে। আর আমি ওদের গল্প শোনাই বলে আমি হয়ে গেছি ওদের গল্প দাদু ’’।  হেসে উঠেন গল্প দাদু। গল্প দাদু আরও জানায়, ‘‘আমাদের সময়তো আর এরকম কোন সুযোগ ছিলনা পড়ালেখা করার। ওদের হাতের কাছে এতো সুযোগ, ওরা যেন এই সুযোগ হেলায় না হারায়, তাইতো আমি ওদের গল্প শোনাই, যেন ওরা এই ক্যাম্পে এসে মনোযোগ সহকারে পড়তে শিখতে পারে। আমি ওদের মনযোগ ধরে রাখার জন্য, আনন্দ দিতে এখানে মাঝে মাঝে এসে গল্প শোনাই। আমি চাই ওরা সবাই পড়ালেখা করুক, মানুষের মতো মানুষ হউক, দেশ ও দশের মুখ উজ্জ্বল করুক”।
গল্প দাদুকে নিয়ে সেখানে কথা হয় রিডিং ক্যাম্পে আগত কয়েকজন শিশুর সাথে, তারা জানায় গল্প দাদুর নিকট থেকে গল্প শুনতে আমাদের খুব ভালো লাগে। আমরা তার কাছে থেকে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক বিষয়ে জেনেছি। তিনি আমাদের ভালো কাজ করতে পরামর্শ দেন, মন দিয়ে পড়ালেখা করতে বলেন। আমাদের অভিভাবকদেরও নির্দেশনা দেন। আমরা যেন নিয়মিত এখানে আসি তারজন্য অভিভাবকদের অনুরোধ করেন। এ প্রসঙ্গে অত্র এলাকার ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও রিডিং ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মো: বাহিনুর রহমান জানান, সদর আলী আমাদের এলাকার একজন বয়োজষ্ঠ্যে শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। তিনি নিয়মিত ক্যাম্পে আসেন, শিশুদের অনেক মজা করে গল্প শোনান। তার গল্প বলার আকর্ষণে শিশুরা নিয়োমিত ক্যাম্পে আসে। তাঁর কাছ থেকে শিশুরা এখন যেমন গল্প বলতে শিখেছে, ঠিক তেমনি সিএলভিদের অক্লান্ত সহযোগিতায় গল্প পড়তেও শিখেছে। আমি এলাকার স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে এ ধরণের কার্যক্রমে খুবই খুশী। আমরা আমাদের এলাকায় এধরণের কার্যক্রমের স্থায়ীত্ব ধরে রাখব। এ কথা শুনতে শুনতেই কানে ভেসে আসে গল্প দাদুর ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠের ধ্বনি:
কইগো দাদু ভাইয়েরা, শোন দিয়া মন
রাজাকে কেমন ভালোবাসে কন্যারা,
এখন আমি করিব বর্ণন।
পরক্ষণেই শিশুদের মুর্হুমূর্হু করতালিতে মুখোরিত চারিপাশ। তখন মনে হতে থাকে আহা! এরকমইতো আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি হওয়া প্রয়োজন। যেখানে শিশুরা শিখবে আনন্দের সাথে। থাকবেনা কোন ভয়, কোন লজ্জা, যেখানে তারা নিজস্ব মত সহজেই ব্যক্ত করতে পারবে। আর তাহলেই না তাদের শিখন হবে স্থায়ী। 

পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 585386721604147657

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item