বীরাঙ্গনা হয়েও স্বীকৃতি পাননি রেজিয়া বেগম

হাফিজুর ররহমান হহৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

১৯৭১ সালে পাকবাহিনীর হাতে সম্ভ্রম খুইয়ে বীরাঙ্গনা হয়েও স্বীকৃতি পাননি রেজিয়া বেগম। তালিকাভুক্তির আবেদন নিয়ে ঘুরেছেন দ্বারে দ্বারে।
১৯৭১ সলের ৬ জুন রাত ৮টায় পাকবাহিনীর একটি দল সন্তোষপুর ইউনিয়নের আয়চাঙ্গা গ্রামে প্রবেশ করে তাণ্ডব চালায়। এদের মধ্য থেকে তিনজন পাকসেনা ওই গ্রামের মিলন মিয়ার বাড়িতে যায়। একজন বাইরে থাকলেও দুজন ঘরে ঢুকে পড়ে। এ সময় ওই ঘরে অবস্থান করছিল মিলন মিয়ার একমাত্র ছেলে যুবক আবু হানিফ ও তার সদ্য বিবাহিত স্ত্রী রেজিয়া বেগম। একজন পাকসেনা হানিফ আলীকে গুলি করতে উদ্যত হলে সে রাইফেলের নল ধরে ফেলে। অপর পাকসেনাও গুলি করার জন্য রাইফেল তাক করতেই নববধূ রেজিয়া স্বামীকে বাঁচাতে দ্রুত ওই রাইফেলের নল ধরে। টানা-হেঁচড়ার এক পর্যায়ে বিছানার বালিশের নিচে রাখা দা দিয়ে হানিফ আলী খানসেনাকে কোপ দেওয়ার চেষ্টা করতেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা পাকসেনা দ্রুত এসে তাকে গুলি করে হত্যা করে। চোখের সামনে স্বামীর মৃত্যু দেখে চিত্কার করে উঠলেও খানসেনারা তাকে টেনে-হিঁচড়ে তাদের ক্যাম্প রায়গঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রাতভর পাশবিক নির্যাতন শেষে তারা রেজিয়াকে অজ্ঞান অবস্থায় ভোরে নাগেশ্বরী-ভূরুঙ্গামারী সড়কের পাশে ফেলে রেখে যায়। এলাকাবাসী সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছে দেয়। ছেলে হানিফের জীবন বাঁচাতে চেষ্টা করায় রেজিয়াকে কন্যা স্নেহে গ্রহণ করে শ্বশুর মিলন মিয়া।
একদিকে ধর্ষিতা হওয়ার মানসিক যন্ত্রণা, অপরদিকে মাত্র ৯ মাসের বিবাহিত জীবনে স্বামীকে হারানোর কষ্ট তাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছিল। কিন্তু শ্বশুর মিলন মিয়া তার ভেতরের সকল কষ্ট-যন্ত্রণা চেপে রেখে তাকে পুত্রবধূ হিসেবে রেখে দেওয়ার ভাবনা নিয়ে স্বাধীনতার দুই বছর পর ভাতিজা আব্দুল আজিজের সঙ্গে পুনরায় তার বিয়ে দেন। এ সংসারে তার প্রথম কন্যা সন্তান জন্ম নেয়ার পরে তাকে শুনতে হয় প্রতিবেশীদের নানা কটূক্তি। এসব ভর্ত্সনা থেকে নিজেকে রক্ষা ও সন্তানের ভবিষ্যত্ ভেবে সে স্বামী-সন্তানসহ আশ্রয় নেয় পার্শ্ববর্তী ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের খামার আন্ধারীঝাড় গ্রামে বাবার বাড়িতে। এখানে এসে তার আরও তিন কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। চার মেয়ের মধ্যে তিন মেয়েরই বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তিনি এক কন্যা আর অসুস্থ স্বামী আব্দুল আজিজকে নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন।
এবারে যখন মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই ও নতুন তালিকা প্রণয়নের কাজ চলে তখন এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কাছে অনেকবার গিয়ে আবেদন-নিবেদন করেও ওই তালিকায় বীরাঙ্গনা হিসেবে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করাতে পারেননি। সেই কষ্ট নিয়ে বীরাঙ্গনা রেজিয়া বেগম বলেন, যারা এই যাচাই-বাছাই কমিটির নেতৃত্বে ছিলেন তাদের অনেকেই আমার এ বিষয়টি জানেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি আমাকে যেন বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
যাচাই-বাছাই কমিটি অন্যতম সদস্য এবং উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবু বকর সরকারের কাছে জনতে চাইলে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত হতে প্রায় সাড়ে ১২শ’ আবেদন জমা পড়েছিল। কে কখন সাক্ষাৎ করতে এসেছিল আমার মনে নেই।

পুরোনো সংবাদ

নিবিড়-অবলোকন 7216644422924243144

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item