চিরনিদ্রায় শায়িত খ্যাতনামা সংগীত শিল্পী খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়া

মামুনুর রশিদ মেরাজুলঃ

স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কালজয়ী ‘ছোটদের বড়দের সকলের, গরিবের নিঃশ্বের ফকিরের, আমার এ দেশ সব মানুষের’- গানের  সুরকার খাদেমুল ইসলাম বসুনীয়া আর নেই। চলে গেছেন না ফেরার দেশে। খ্যাতনামা এই কন্ঠযোদ্ধা বুধাবার রাত সাড়ে ১০টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নাল্লিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৭৭ বছর।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্রে প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১১টায় রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে দ্বিতীয় এবং বেলা ২টায় গুপ্তপাড়া জামে মসজিদে মরহুমের তৃতীয় জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে বড় নূরপুর কবরস্থানে তাঁকে চিরদিনের জন্য সমাহিত করা হয়।
এদিকে খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়ার মৃত্যুর খবরে রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনজুড়ে মেনে আসা শোকের ছায়া। তাকে শেষবারের মতো দেখতে তার গুপ্তপাড়ার বাসায় ছুটে আসেন তার সহকর্মীরাসহ সংস্কৃতিনুরাগী বিভিন্ন স্তরের লোকজন।খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়া একাধারে সুরকার, গীতিকার, সংগীত শিল্পী, প্রযোজক ছিলেন। বাংলাদেশ বেতারের সাবেক প্রধান সংগীত প্রযোজক হিসেবে দীর্ঘ বছর কেটেছে গানের ভুবনজুড়ে। তিনি সমৃদ্ধ করেছেন রংপুরের ভাওয়াইয়াকে। তার অসংখ্য অমর সৃষ্টি স্থান করে নিয়েছে বাংলা গানে। দেশ ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের সুনাম তুলে ধরেছেন। এ প্রজন্মের সংগীত শিল্পীদের জন্য নিবেদিত প্রাণ হয়ে  থাকার চেষ্টা করেছেন। বসুনিয়া নামে অধিক পরিচিত গুণী এই শিল্পী সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান থেকে সম্মাননা পদকও পেয়েছেন।
খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়া ১৩৪৭ বঙ্গাব্দে ভারতের কলকাতার অলিপুর দুয়ারে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবার পরিজনের সাথে শৈশব কেটেছে নীলফামারীর চিলাহাটিতে। সেখানেই বড় হয়েছেন তিনি। পরবর্তীতে সংগীতের সুর তাকে টেনে নেয় রংপুরে। নগরীর গুপ্তপাড়ায় শুরু করেন বসবাস। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে  ও ২ মেয়েসহ অসংখ্য আতœীয় স্বজন রেখে গেছেন। 
উল্লেখ্য, ১৯৬৭ সালে ২৫ ডিসেম্বর রংপুর বেতার কেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়। ওইদিন খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়া প্রথম সংগীত পরিচালক হিসেবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংগীত পরিচালনা করেন।
সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় তিনি অসংখ্য জনপ্রিয় গানের সুর করেছেন। তৈরি করেছেন নামকরা অনেক শুদ্ধ সংগীত শিল্পী। তিনি বেতারের প্রধান সংগীত প্রযোজক হিসাবে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর পূর্বে মুখ্য সংগীত প্রযোজক হিসাবে ঢাকা বেতারে ১৯৯৩ সাল থেকে ৯৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সব ধরনের সুর সৃষ্টি করে দেশের সংগীত ভারারকে করেছেন সমৃদ্ধ।
খাদেমুল ইসলাম বিখ্যাত কবি শামসুর রাহমানের কবিতা ‘দাউ দাউ পুড়ে যাচ্ছে’ কবি আবু জাফর উবায়দল্লাহর ‘কুমড়ো ফুলে ফুলে’ কবি মাহফুজুল্লাহর ‘শহীদদের স্মৃতি জলে’ কবি ওবায়দুল্লাহর ‘বাংলাদেশের যত নদী’সহ অসংখ্য কবিতার সুর দিয়েছেন।
এদিকে খাদেমুল ইসলাম বসুনিয়া মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, রংপুর সিটি করপোরেশনের নতুন মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা, রংপুরের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক রুহুল আমিন মিঞা, রংপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র একেএম আব্দুর রউফ মানিক, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কাজী মোঃ জুননুন, রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষৎ এর সভাপতি প্রফেসর মোজাম্মেল হক, জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি রংপুরের সভাপতি রকিবুল হাসান বুলবুল, সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন, নাট্যব্যক্তিত্ব মনোয়ার হোসেন, আতোয়ারুজ্জামান লাঞ্চু, রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি আব্দুল হালিম আনছারী, সাধারণ সম্পাদক শাহ্ বায়েজীদ আহমেদ, কোষাধ্যক্ষ ফরহাদুজ্জামান ফারুক, রংপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশীদ, সুজন রংপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আফতাব হোসেন, মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল হাসান বেঞ্জু, সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন টিটো, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডাঃ মফিজুল ইসলাম মান্টু, নাট্য ব্যক্তিত্ব এম এ মজিদসহ রংপুরের সর্বস্তরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশাজীবি, শিল্পী, সাংবাদিকগণ।



পুরোনো সংবাদ

নির্বাচিত 8139724484655056031

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item