ফুলবাড়ীতে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ॥

মেহেদী হাসান উজ্জ্বল,ফুলবাড়ী(দিনাজপুর) প্রতিনিধি-

আগের দিনের মত আর দেশীয় সংস্কৃতি বাদ্যযন্ত্রের তেমন চাহিদা নেই। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে দেশীয় সংস্কৃতি বাদ্যযন্ত্র ঢাক,ঢোল,কর তাল,তবলা। তবে অনেক কষ্ট করে বাপ-দাদার পেশা হাল ধরে রেখেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কাটাবাড়ী গ্রামের স্বপন দাস।
সে জানায়, জন্মের পর থেকে বাবা ঠাকুর দাস এর কাছ থেকে এই বাদ্যযন্ত্র  ব্যবহার করতে শিখে তারা  পরে আস্তে আস্তে এই বাদ্যযন্ত্র তৈরী করতে শিখিয়েছেন। এক সময় দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা অনেক গুনে বেশি ছিল।

বর্তমানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তাল দিতে না পেরে তাদের মুল ব্যবসা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দ্বাড়িয়েছে। প্রথমে বাপ-দাদরাই এ পেশায় দেশীয় বাদ্যযন্ত্র ঢাক-ঢোল,করকা,খোল,তবলা,একতারা,খমর,দো-তারা,ঢোলোকসহ সাইড ড্রাম তৈরী ও মেরামতের কাজ শরু করেন । বাবার বয়স বাড়ার পর থেকে দির্ঘদিন ধরে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে স্বপন দাস, বাবা কিছুদিন হলো মারা গেছে এর পর পুরো দায়ীত্বটাই তাকে নিতে হয়েছে। ফুলবাড়ী বাজারের ননী গোপাল মোড়ে ছোট্র একটি রুম ভাড়া নিয়ে বাদ্যযন্ত্র তৈরী ও মেরামত করেন। বর্তমানে এ পেশায় কাজ করে সংসারের ভরণ-পোষণ কষ্টকর হয়ে পড়েছে। তিনি আরো জানান, বছরে তিন মাস আশ্বিন,কার্ত্তিক,অগ্রাহয়ন মাস কাজে চাপ থাকেও পরের মাস গুলোতে তেমন কোন ব্যবসা হয় না।

এই তিন মাসেই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বিভিন্ন স্থানে  অষ্টপ্রহরসহ প্রতি বাড়ীতে ও মন্দিরে হরিনাম কীর্তন করে বেড়ায় এরাই মূলত দেশীয় সংস্কৃতি বাদ্যযন্ত্রের ক্রেতা । এ ছাড়াও নিজস্ব বাসা-বাড়ীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের লোকেরা কিছু কিছু বাদ্যযন্ত্র তৈরী করে ও মেরামত করে থাকেন। বর্তমানে প্রতিটি খোল নতুন করে তৈরী করে ক্রেতার কাছে বিক্রি করে ২ হাজার ৫ শত টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়।। তবলা বিক্রি করে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা সাইড্রাম তৈরীতে ৪ হাজার টাকা, দো-তারা তৈরীতে ৪ হাজার টাকা,জিপাসি তৈরীতে ৮শত টাকা। । গোপি যন্ত্র(খমক) ৬শত টাকা  বিক্রয় করে থাকি। খোল,সাইড ড্রাম,দো-তারা তৈরীতে সময় লাগে চার থেকে পাঁচ দিন। অন্যন্যা বাদ্যযন্ত্র তৈরী সময় লাগে দুই থেকে তিন দিন।  এসব বাদ্যযন্ত্র তৈরী করতে যে মালামাল লাগে তা বর্তমানে অনেক দামে কিনতে হয়। যার ফলে পুষিয়ে উঠা সম্ভব হয় না।

উপজেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতাদের দেশীয় বাদ্যযন্ত্র তৈরীতে বছরে এই তিন মাস কাজ করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা কোন রকমে আয় হয় ।  বছরের বাকি নয় মাস উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান,নীলা কীর্তন,বিয়ে বাড়ীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাদক(শিল্পী) হিসাবে কাজ করে জীবন-জীবীকা নির্বাহ করি।

ফুলবাড়ী তৈরী বাদ্যযন্ত্র বিক্রেতা দাস মিউজিক্যাল এর কর্নধার কন্ঠ শিল্পী প্রবীর কুমার দাস জানান, গীটার, প্যাড ড্রাম, কি-বোর্ড দিয়ে আগেকার গান গুলোর সঙ্গে তাল মিলেনা কিন্তু যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরাও আধুনিক বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ও বিক্রয় করছি। সে কারনে অনেকটায় দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা কমে গেছে। এখনকার ছেলে/মেয়েরা দোকানে আসলেই প্রথম পছন্দ করে গীটার,কি-বোর্ড আধুনিক বাদ্যযন্ত্র। সেই কারনে আমাদের এই ধরনে বিক্রয় সামগ্রী বেশী রাখতে হয়।

এ ব্যাপারে রংপুর বেতার কন্ঠ শিল্পী খালিদ হাসান বকুল জানান,২৫ বছর ধরে এ পেশায় রয়েছি, বর্তমানে পশ্চিমা সাংস্কৃতির ছোয়া এবং তাদের গান গুলি দর্শক বেশী পছন্দ করে। সে কারনে দর্শকের মন যোগাতে পশ্চিমাদের এই গান গুলি আমাদেরকেও গাইতে হয়। বর্তমান গানগুলির সংঙ্গে তাল মেলাতে তেমন আর দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োজন হয় না, ফলে তা আর তৈরী ও ব্যবহারে তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায় না। দেশিয় বাদ্যযন্ত্রকে লালন পালন করতে আমাদের মনমানষিকতার পরিবর্তন করা অত্যন্ত জরুরী। তা না হলে একদিন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য ঢাক-ঢোল, তবলা,একতারা,দো-তারা,বিলীন হয়ে যাবে।

আমাদের দেশিয় সংস্কৃতিকে ধরণ করেতে হলে অবশ্যই দেশিয় বাদ্যযন্ত্রের প্রতি যতœবান হতে হবে বলে মনে করে এখানকার অনেক প্রবীন গুনি শিল্পীরা। 

পুরোনো সংবাদ

দিনাজপুর 2564975864638782553

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item