রংপুরে হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ঘটনায় ২ মামলায় আসামি ২ হাজার, আটক ৫৩

মামুনুর রশিদ মেরাজুল, রংপুর থেকে ঃ

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ‘মহানবীকে (সাঃ) ব্যঙ্গ করে ধর্মীয় অবমাননাকর’ স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে রংপুরের পাগলাপীর শলেয়াশাহ এলাকার ঠাকুরবাড়ি গ্রামে হিন্দু বাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গঙ্গাচড়া ও কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। দুই মামলায় ২৫-৩০ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত দুই হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এ সব মামলায় গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ ও সদর উপজেলায় শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে পুলিশ ৫৩ জনকে গ্রেফতার করেছে। সংবাদমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) জাকির হোসেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেন (বিশেষ শাখা) জানান, পুলিশ বাদী হয়ে গঙ্গাচড়া ও কোতয়ালি থানায় পৃথক দুটি মামলা করেছে। এখন পর্যন্ত ৫৩ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে হামলার ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান জানান, শনিবার থেকে এ কমিটি কাজ শুরু করেছে। তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এর আগে ঘটনার দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় এবং পরের দিন সকালেও স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতাদের নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হিন্দু পরিবারের খোঁজখবর নেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি। এসময় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
রংপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউর রহমান বলেন, শুক্রবার রাত থেকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে তাদেরকে দুই বান্ডেল করে টিন ও তিন হাজার করে টাকা দেওয়া হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্থদের বাড়িঘর তৈরির জন্য প্রশাসন সব খরচ বহন করবে। সেখানে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করে ক্ষতিগ্রস্থদের পুনর্বাসনের কাজ অব্যাহত রয়েছে।
শনিবার সকালে পাগলাপীর, শলেয়াশাহ, ঠাকুরবাড়িসহ কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, পুলিশের অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশের ৪-৫ গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকায় থমথমে ও ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে টিটু রায়ের মা জীতেন বালাসহ অন্য স্বজনদের দাবি, টিটু অশিক্ষিত। সে লেখাপড়া জানে না। কীভাবে ফেসবুক চালাতে হয় তাও সে জানে না। টিটুকে ফাঁসাতে কেউ পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটাতে পারে। তারা এর সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষিদের শাস্তির দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, রংপুরের সদর উপজেলার ঠাকুরপাড়া গ্রামের মৃত খগেন রায়ের ছেলে টিটু রায় ফেসবুকে ‘ধর্মীয় অবমাননাকর’ ছবিযুক্ত একটি স্ট্যাটাস দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে গত ২৯ অক্টোবর ওই এলাকার লালচাঁদপুর গ্রামের মুদি দোকানি আলমগীর হোসেন অভিযুক্ত হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পরে ওই যুবককে গ্রেফতারের দাবিতে গত ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার এলাকাবাসী বিক্ষোভও করেন। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১০ নভেম্বর শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর থেকে দু’দফায় কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী সমবেত হয়ে রংপুর-দিনাজপুর মহাসড়কে অবস্থান নেয়। পরে তারা সাড়ে ৩টার দিকে খলেয়া ইউনিয়নের শলেয়াশাহ ও বালাবাড়ি গ্রাাম এবং পাশের মমিনপুর গ্রামের ৮ থেকে ১০ হাজার লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে টিটু রায়ের বাড়ি অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায়। এসময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বৃষ্টির মতো ইট ও লাঠি ছুড়তে থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ছররা গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সংঘর্ষ চলাকালেই হামলাকারীদের একটি বড়অংশ ঠাকুরপাড়ায় গিয়ে একচি গোডাউনঘরসহ কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গুলি ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছুড়ে। সেসময় কমপক্ষে ২০ জন আহত ও একজন নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম হাবিবুর রহমান, তিনি শলেয়াশাহ এলাকার একরামুল হকের ছেলে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 5314898103762159117

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item