বদলে যাচ্ছে চিলাহাটি হলদিবাড়ি, রেললিঙ্ক কাজ শুরু

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১২ নবেম্বর॥
  ভারতের কুচবিহার জেলার হলদিবাড়ি ও  বাংলাদেশ উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর চিলাহাটির মধ্যে রেলের ব্রডগেজ ইন্টারচেঞ্জ লিংক চালুর নির্মান কাজ শুরু হয়েছে।  ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগিতায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া পুরানো সীমান্ত রেলওয়ে সংযোগের আওতায় এই পুর্নস্থাপনের কাজ শুরু করা হয়।  চিলাহাটি-হলদীবাড়ি ইন্টারেচঞ্জ লিংক চালু হলে বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় উন্নয়নের দুয়ার খুলে যাবে। এতে লাভবান হবে উভয় দেশ। প্রজন্মের মধ্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন আরও সুদৃঢ় হবে। সেই সঙ্গে বদলে যাবে চিলাহাটি হলদিবাড়ির চেহারা।
            উভয় দেশের রেলযোগাযোগের ক্ষেত্রে হলদিবাড়ি ও চিলাহাটি রেলষ্টেশন পুরোদমে দুইটি চালু রয়েছে। চিলাহাটি হতে ঢাকা,খুলনা,রাজশাহী পথে ও অপর দিকে হলদিবাড়ি হতে ভারতের বিভিন্ন রুটেও নিয়মিত ট্রেন চলাচল করছে। শুধু মাত্র সীমান্ত এলাকা বাংলদেশের চিলাহাটি ও ভারতের হলদিবাড়ির মধ্যে ট্রেণ চলাচল থমকে রয়েছে। যা চালুর পথে কাজ এগিয়ে চলছে।


সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এই রেলপথ নির্মানে তাদের অংশে ৩১ কোটি রুপি বরাদ্দ দিয়েছে। সেই বরাদ্ধে ঠিকাদার নিয়োগ করে হলদিবাড়ি অংশের প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার রেলপথের এই কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এর সঙ্গে রয়েছে হলদিবাড়ি রেলষ্টেশনকে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেশনে পরিণত করার কাজ। এখানে ফুডপ্ল¬াজা, পার্ক সবকিছু নির্মাণ করা হবে। ্ এ জন্যে স্টেশন বিল্ডিং, প্ল¬্যাটফর্ম সবকিছু নতুন করে তৈরি করা হবে।
       এদিকে বাংলদেশের চিলাহাটি রেলষ্টেশন হতে ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত, অংশের প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটার রেলপথ নির্মানের  প্রকল্পে ব্যয়ের প্রাক্কলন ধরা হয়েছে ৭৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এই বরাদ্দকৃত অর্থে সাড়ে ৭ কিলোমিটার রেলপথ, ব্রীজ, চিলাহাটি রেলষ্টেশনকে আন্তর্জাতিক মানের স্টেশনে রূপান্তর করা হবে।
ভারতের অংশের কাজ শুরু হওয়ায় অতিদ্রুত বাংলাদেশের অংশের কাজ শুরু করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।

              সুত্রমতে উভয় দেশের পক্ষে হলদিবাড়ি -চিলাহাটি ব্রডগেজ ইন্টারচেঞ্জ লিংক রেলপথ নির্মানের শেষ করার সময় নির্ধারন করা হয়েছে ২০১৯ সালে।
 

 চিলাহাটি হতে ভারতের হলদিবাড়ি সীমান্ত এলাকা সরেজমিনে গেলে দেখা যায়  ভারতের অংশের  সে দেশের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান  পুরানো পরিত্যক্ত হয়ে থাকা রেলপথের ব্রীজগুলো বুলড্রেজার দিয়ে ভেঙ্গে ফেলছে। এসব ভেঙ্গে ফেলা শেষ হলে পরিত্যাক্ত রেলপথের মাটি ফেলে উঁচু করা কাজ শুরু করবে তারা । ্এরপর ব্রীজ নির্মান শেষে রেললাইন পাতানো হবে। গত ৫ নবেম্বর হতে ভারতের অংশের কাজ শুরু করা হয়।
এলাকাবাসী জানায় এই কাজ পরিদর্শন এসেছিলেন ভারতের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহারের ডিআরএম উমাশঙ্কর সিংহ যাদব।

           ১৪৯ বছর আগের কথা। আজকের বাংলদেশের উত্তরের  নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শুরুটা ছিল আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েকে ঘিরে।  পলাশীর যুদ্ধে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হওয়ার পর ব্রিটিশরা এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স¤পদ আহরণের জন্য নির্মাণ করতে থাকে রেলপথ। আর সেই রেলপথগুলো পুরো ভারত উপমহাদেশকে একসঙ্গে বেঁধেছিল। সেই সময়ে ইংরেজ বেনিয়ারা সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠা করে বিশাল রেলওয়ে কারখানা, যা আজো বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা হিসেবে পরিচিত। আসাম-বেঙ্গল রেলপথকে ঘিরে ততকালীন ব্রিটিশ সরকার ১১০ একর জায়গার ওপর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিল।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট ভারত ভাগের পরও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি  মধ্যে এই ইন্টারচেঞ্জ চালু ছিল। সে সময় চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি স্টেশনের উজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করে এখনও গর্ববোধ করেন এলাকার বাসিন্দারা। ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত হলদিবাড়ির সঙ্গে তদানীন্তর পাকিস্তানের রেল যোগাযোগ ছিল। ১৯৪৭ সালের ভারতের স্বাধীনতার আগে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি দিয়ে সরাসরি কলকাতার যোগাযোগ ছিল। দার্জিলিং মেল ট্রেনটি তখন এই পথে যাতায়াত করতো।

সেই সময় চিলাহাটি হলদিবাড়ির গুরুত্ব অনেক বেশি ছিল। এলাকার প্রবীন ও অভিজ্ঞ মানুষজন এ সময় জানায় কেশব সেন কলকাতা থেকে তাঁর মেয়ে সুনীতিদেবীকে নিয়ে চিলাহাটি হয়ে হলদিবাড়ি স্টেশনে নেমে কোচবিহারে গিয়েছিলেন। সুনীতিদেবীর সঙ্গে কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের বিয়ে হয়। সুনীতিদেবীই হন কোচবিহারের মহারানি। এখনও সে সব গল্প চিলাহাটি ও হলদিবাড়ির মানুষজনের  মুখে মুখে ফেরে। পুনরায় চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ট্রেন চলবে। এই ট্রেণ চলাচলাচলে তারা ফিরে পেতে চায় পুরনো দিনের ইতিহাস এমন কথাই বললেন আব্দুল রাজ্জাক বসুনিয়া(৭০)।
তিনি বললেন দেশ ভাগের পরে-চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি তার গুরুত্ব হারিয়ে ফেলে। ততকালিন পাকিস্তানের চিলাহাটি থেকে একটিমাত্র ট্রেন হলদিবাড়ি স্টেশনে এসে দাঁড়াতো। আবার ফিরে যেত। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তাও বন্ধ হয়ে যায়।এরপর এটি আর চালু হয়নি। তিনি জানালেন বাংলাদেশ স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর চিলাহাটি-হলদীবাড়ি রেল সংযোগ চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু ৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারের নিহত হওয়ার পর সেই উদ্যোগ বাতিল করে দেয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে চিলাহাটি-হলদীবাড়ি ইন্টারচেঞ্জ লিংক চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়।
এই রেলপথ চালু হলে ইন্টারচেঞ্জ ব্যবস্থায় রেল যোগাযোগে ঢাকা থেকে কোচবিহার শিলিগুড়ি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে।




পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 6697463040052816522

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item