কুড়িগ্রামে অন্ধকারে আলো ছড়াচ্ছে হেলালের আশার আলো শিশু শিক্ষা কেন্দ্র

হাফিজুর রহমান হৃদয়, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে অন্ধকারে আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছে হেলালের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আশার আলো শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। শত বাধা আর অভাব অনটনের মাঝেও সকল প্রকার প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়ে এ আলোর মশাল হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হেলাল আহমেদ। উপজেলার টালানাপা, হাসনাবাদ এলাকার দরিদ্র পিতা আব্দুল জলিলের ছেলে সে। এমনই এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া হেলাল হোসেন স্কুলে পড়ত খেয়ে না খেয়ে। এক বেলা খেলেও জোটেনি আর এক বেলা খাবারের। দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করেই প্রতিনিয়ত চলত তার পড়াশোনা। রাতে পড়াশোনা করার জন্য বাতির তেলটুকু কিনে দেয়ার সাধ্যও ছিলো না দরিদ্র পিতার। অন্যের ঘরের জানালার ফাঁক দিয়ে বাইরে বেড়িয়ে আসা আলোয় বসে পড়তে হতো পাঠ্য বই। এভাবেই অভাব অনটনকে সঙ্গী করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তির্ণ হয়। স্বপ্ন ছিলো ভার্সিটিতে পড়ার। কিন্তু অর্থের কাছে হার মানতে হয় তাকে। দারিদ্রের কষাঘাতে নি®পষিত হয়ে যায় তার সে স্বপ্ন। হেলাল জানায়, তার এলাকার কোনো দরিদ্র ঘরের সন্তান যাতে এমন কোনো সন্তান যাতে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে ঝরে না যায় সে লক্ষ্যেই এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন আশোর আলো শিশু শিক্ষা কেন্দ্র। নিজের টিউশনি করা টাকায় চালায় এ প্রতিষ্ঠান এমনকী পারিবাড়িক যাবতীয় খরচ। কথাগুলো বলতেই দু’চোখ দিয়ে পানি গড়তে থাকে হেলালের। তবে মনোবল হারায়নি কখনও। বর্তমানে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে অনার্স শেষ বর্ষে অধ্যয়নরত সে। একদিকে নিজের পড়াশোনা অন্যদিকে নিজ হাতে গড়া শিশু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সবমিলে যোদ্ধার মতোই কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সে আরো জানায় শিক্ষা কেন্দ্র করলেও এখানে নেই পর্যাপ্ত বেঞ্চ, চেয়ার টেবিল, নেই প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র এমনকী নির্দিষ্ট অফিসকক্ষ। হাসনাবাদ ইউনিয়নের বিগত চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান সরকার শুধু ১বার এখানে মাত্র ৭টি বেঞ্চ দিলেও এছাড়া আর কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনাপ্রকার সহায়তা পায়নি কখনও। তবুও থেমে থাকেনি তার পথচলা। শিক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমেই বিভিন্ন সমাজ সচেতনতামূলক কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন থেকে। একজন সমাজকর্মী হিসেবেও এখন বেশ পরিচিতি আছে নিজ এলাকায়। এবারের ভয়াবহ বন্যাকালীন সময়েও বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করেছে পানিবাহিত রোগের ওষুধপত্র। শীতকালে শীতার্থদের দিয়ে থাকে শীত বস্ত্র। পালন করছেন জাতীয় দিবসগুলোও। শিশুদের পাঠ্য বইয়ের শিক্ষা দেয়া ছাড়াও এ প্রতিষ্ঠিানের আওতায় চলে শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য ক্রিড়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতাসহ সকল প্রকার বিনোদন ব্যবস্থাও। প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের দিয়ে থাকে পুরস্কারও। সে জানায়, ২০১৪সালে মাত্র ২০জন শিশু দিয়ে যাত্রা শুরু করেন এ শিক্ষা কার্যক্রমের্ষে এখন এখানে রয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী। শিশু থেকে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত চলে পাঠদান। সচ্ছল প্রকৃতির শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতি মাসে নেয় মাত্র ১শ টাকা। এ টাকা থেকেই বহন করে ৫জন শিক্ষকের সম্মানী আনুসঙিক ব্যয়। অনেকেই ফ্রিতেই পড়াশোনা করে। শুধু শিক্ষা ব্যবস্থাতেই ক্ষ্যান্ত নয় মহিলাদের আÍবিশ্বাসী করে সাবলিস্বিতা অর্জনের জন্য দিয়ে যাচ্ছে শেলাই প্রশিক্ষণ সেবাও। বাল্য বিয়ে, মাদক ও যৌতুক বিরোধে গড়ে তুলেছে স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন যুব ফোরাম। এলাকাসহ নিজ ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে করেছেনে যুব ফোরামের শাখা কমিটি। যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত বাল্য বিয়ের হাত থেকে রক্ষা করছে কিশোর-কিশোরিদের। এসব সমাজকর্মের জন্য আর.ডি.আর.এস কর্তৃক ২০১১ ও ২০১২সালে অর্জন করেছেন উদ্যোমী তারুণ্য স্বীকৃতি সনদ এবং যুব নেতৃত্ব বিকাশ ও যুব সংগঠন ব্যবস্থাপনা সনদ-২০১৭। এ বিষয়ে উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসার মনজুর আলম বলেন, আমি হেলালের এ সংগঠন স¤পর্কে জানি। কয়েকবার তার প্রতিষ্ঠানে গেছি। সে দীর্ঘদিন থেকে অনেক ভালো ভালো কাজ করছে। আমরাও চেষ্টা করছি তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করার।

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 7618904012674826046

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item