ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের ফাঁসির আদেশ হওয়ায়- সুন্দরগঞ্জে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ

নুরুল আলম ডাকুয়া, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধিঃ

মানবতা বিরোধী অপরাধে গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সাবেক এমপি জামায়াত নেতা আবু সালেহ্ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়ামারা আজিজসহ ৬ জনের ফাঁসির রায় ঘোষণা হওয়ায় গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় স্বাধীনতার স্বপক্ষের সর্বদলীয় জনসাধারণ আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করেছেন।
    জানা গেছে, উপজেলার তারাপুর ইউনিয়নের চাচীয়া মীরগঞ্জ গ্রামের মৃত বানেছ মুন্সির কণিষ্ঠ ছেলে জামায়াত নেতা আবু সালেহ্ মুহাম্মদ আব্দুল  আজিজ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বাধীনতা বিরোধী আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে পাক-হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করার লক্ষ্যে রাজাকার ও আলবদর বাহিনীতে যোগ দিয়ে হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে পরেন। তার বর্বরতার শিকার উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর ধর্মপুর গ্রামের ইউপির সাবেক সদস্য আকবর আলী, পাঁছগাছী শান্তিরাম গ্রামের ইউপির সাবেক সদস্য মনসুর আলী, ছাপড়হাটী ইউনিয়নের ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান নবী বকশ, একই ইউনিয়নের ইউপির সাবেক সদস্য গিয়াস উদ্দিন, আ’লীগ নেতা বয়েজ উদ্দিন, শান্তিরাম ইউপির সাবেক সদস্য পচা মামুদ ব্যাপারীসহ অনেককে সুন্দরগঞ্জ পাক হানাদার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। তার হাতে অনেক নর-নারীর ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়। মু্িক্তযুদ্ধ চলাকালে তিনি (আব্দুল আজিজ) তার বাহিনী নিয়ে মাঠের হাট নামক স্থানে ব্রীজ পাহারা দিতেন। ব্রীজের পাশ্বেই ছিল আখ ক্ষেত। একদিন সেই ক্ষেত নড়েচড়ে উঠতে দেখে ভয় পেয়ে যায় তারা। মুক্তিযোদ্ধারা হামলা চালাতে এসেছে ভেবে তারা আখ ক্ষেতে এলোপাতারি গুলি করে। কিছু পরে তারা পরিস্থিতি বুঝতে ক্ষেতের ভিতরে যায়। তখন সেখানে তারা একটি ঘোড়াকে মরে পড়ে থাকতে দেখে। এরপর থেকেই এলাকায় সবাই তাকে ঘোড়ামারা আজিজ বলে ডাকতে শুরু করে।
মামলা দায়েরঃ
    স্বীধনতার ৩৮ বছর পর শহীদ আকবর আলীর ছেলে আনিছুর রহমান স্বাধীনতার যুদ্ধের সমর্থকদের বাড়ি-ঘর লুটপাট, জ্বালানো, ধর্ষণ, নৃংশসভাবে খুনের ঘটনায় নেতৃত্বদানকারী আব্দুল আজিজ (ঘোড়ামারা আজিজ)সহ ১৩ জনকে আসামী করে জি-আর ৩১৭ মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্থান্তারিত হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তদন্তে ও স্বাক্ষী প্রমাণে ১৩ জনের মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ২৬ জুন অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে বিচার কার্য শুরু করে ট্রাইব্যুনাল। অভিযুক্তরা হলেন- চাচীয়া মীরগঞ্জ গ্রামের মৃত- বানেছ মুন্সির ছেলে সাবেক এমপি জামায়াত নেতা আবু সালেহ্ মুহাম্মদ আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ, ধর্মপুর গ্রামের মৃত- আব্দুল জোব্বারের ছেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন মনজু, পাঁচগাছী শান্তিরাম গ্রামের মৃত ফইম উদ্দিন ব্যাপারীর ছেলে মোঃ আব্দুল লতিফ, পূর্ব ঝিনিয়া গ্রামের মৃত দছিম উদ্দিনের ওরফে ছলিম উদ্দিনের ছেলে আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী, শান্তিরাম গ্রামের মৃত রইচ উদ্দিন সরকারের ছেলে নাজমুল হুদা ও পশ্চিম বেলকা গ্রামের মৃত- সিদ্দিকুর রহমানের ছেলে আব্দুল রহিম মিয়া।

এলাকাবাসির প্রতিক্রিয়াঃ
    গতকাল বুধবার মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে সকল আসামীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির আদেশ হওয়ায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বোত্রই স্বাধীনতার স্বপক্ষের সর্বস্তরের জনগণ আনন্দ মিছিল করেন। এছাড়া পৌর শহরে বিশাল আনন্দ মিছিল শেষে পৌর শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বরের মিষ্টি বিতরণ ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা উপজেলা সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম, জেলা আ’লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাজেদুল ইসলাম, উপজেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মনজু, নদী বাঁচাও দেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহবায়ক ছাদেকুল ইসলাম দুলাল, পৌর আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, আনিছুর ইসলাম চঞ্চল প্রমুখ। বক্তারা অবিলম্বে ফাঁসির রায় কার্যকর করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানান এবং উপজেলায় মানবতাবিরোধী অপরাধ কারী যারা আছেন তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমুলক শাস্তিরও জোর দাবী জানান।
    বাদীর প্রতিক্রিয়াঃ
    ফাঁসির রায় ঘোষনার পর মামলার  বাদী আনিছুর রহমান সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, আমিসহ আমার পরিবার এ রায়ে খুঁশি তবে অবিলম্বে পলাতক আসামীদের গ্রেফতারসহ এর রায় কার্যকর করা হলে আরোও খুঁশি হব। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, রায় ঘোষণার পর তার ও তার পরিবারসহ স্বাক্ষীদের উপর স্বাধীনতা বিরোধী চক্র যে কোন মহুর্তে হামলা চালিয়ে জীবন নাশের ন্যায় ঘটনা ঘটাতে পারে। তাই  এ রায় যতদিন কার্যকর হয়নি ততদিন পর্যন্ত বাদী ও স্বাক্ষী পরিবারের লোকজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণের দাবীও জানান তিনি।
    প্রশাসনের বক্তব্যঃ
      ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সুন্দরগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আতিয়ার রহমান ফোর্সসহ বাদী ও স্বাক্ষীদের বাড়িতে যান এবং তাদের খোঁজ খবর নেন। তিনি জানান, বাদী ও স্বাক্ষী পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে আমরা সবসময় প্রস্তুত রয়েছি।
    মু্িক্তযোদ্ধাদের বক্তব্যঃ
    উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সাবেক কমান্ডার এমদাদুল হক বাবলু অশ্রু সিক্ত নয়নে বলেন- সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যে বর্বরতা হয়েছে সাবেক এমপি মাওলানা আব্দুল আজিজ  (ঘোড়ামারা আজিজ)সহ ৬ জন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির আদেশ হওয়ায় আজ থেকে যেন মনে হচ্ছে সুন্দরগঞ্জ কলঙ্ক মুক্ত হল। এ রায় অবিলম্বে কার্যকর করার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আমি সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি।

পুরোনো সংবাদ

গাইবান্ধা 2355336606121830639

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item