সৈয়দপুরে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে দশম শ্রেণীর ছাত্রীকে মারপিটের অভিযোগ

তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:

 সৈয়দপুরে একটি বালিকা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বিরুদ্ধে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে মারপিটের অভিযোগ উঠেছে। শহরের তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতির রেজাউল করিম চৌধুরী রেজার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত বুধবার রাতে বিদ্যালয়ের কোচিং ক্লাসের মডেল টেষ্ট পরীক্ষায় গণিত বিষয়ে কম নম্বর পাওয়ার অভিযোগে বিদ্যালয়ের সভাপতি ওই ছাত্রীকে প্লাষ্টিকের পাইক দিয়ে বেদম মারপিট করেন। সভাপতির বেদম মারপিটে আহত দশম শ্রেণী ছাত্রীর মো. শারমিন ইমু ঘাড়ে মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়। বর্তমানে ওই ছাত্রী গুরুতর অসুস্থ হয়ে নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী রয়েছে। আর এ ঘটনাটির বিষয়ে আহত ছাত্রীর অভিভাবক গত বৃহস্পতিবার রাতে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেছেন।
 অভিযোগে জানা গেছে, সৈয়দপুর শহরের চাঁদনগরস্থ তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য কোচিং ক্লাস শুরু করেছেন। বিকেল ৫টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত বাধ্যতামূলক এ কোচিং ক্লাসে সম্প্রতি গণিত বিষয়ে ৩০ নম্বরের মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া হয়। এতে ওই শ্রেণীর অধিকাংশ ছাত্রী কম নম্বর পান। ঘটনার দিন গত বুধবার রাতের কোচিং ক্লাস চলাকালীন বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মে. রেজাউল করিম চৌধুরী রেজা আকস্মিক বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় তিনি প্রথমে কোচিং ক্লাসের গণিত বিষয়ের মডেল টেস্ট পরীক্ষায় ১০ নম্বরের নিচের কম নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের প্লাষ্টিকের পাইপ দিয়ে বেদম মারপিট করে ক্লাস থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে বিদ্যালয় সভাপতি তাঁর হাতে থাকা প্লাষ্টিকের পাইক দিয়ে শ্রেণী কক্ষে অবস্থানরত ১০ নম্বরের বেশি নম্বর প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদেরও মারপিট শুরু করেন। এ সময় দশম শ্রেণীর মানবিক বিভাগের মেধাবী শারমিন ইমুকেও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় এলোপাতাড়ি মারপিট করা হয়। এতে ওই ছাত্রী ঘাড়ে প্রচন্ড আঘাত পায়। রাতেই বাড়িতে ফিরে ওই ছাত্রী মারপিটের বিষয়টি তার মা-বাবাকে জানায়। কিন্তু তারা বিষয়টিকে তেমনভাবে গুরুত্ব দেননি। পরদিন গত বৃহস্পতিবার সকালে ওই ছাত্রীর ঘাড়ে তীব্র ব্যাথা অনুভব হতে থাকে। সে তাঁর ঘাড় স্বাভাবিকভাবে কোন রকম নড়াচড়াও করতে পারছিল না। এ অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা সঙ্গে সঙ্গে তাকে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে জরুরী বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেন। সেই সঙ্গে ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত ওই ছাত্রীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকে দেখানোর জন্য অভিভাবককে পরামর্শ দেন। বর্তমানে অসুস্থ ছাত্রী ইমু শহরের তাদের নয়াটোলাস্থ নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী রয়েছে। গতকাল (শুক্রবার) সকালে ঘাড়ে আঘাতপ্রাপ্ত ওই স্কুল ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রচন্ড ব্যাথায় কাতর হয়ে পড়েছে। তাঁর কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। সে বিছানা ছেড়ে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে না।  এ সময় সে অভিযোগ করে বলেন, ওই দিন বিদ্যালয়ের সভাপতি ক্লাসে ঢুকে আজ ‘গণধোলাই ’ হবে  বলে আমাদের মারপিট শুরু করেন। মেয়ের শয্যা পাশে বসে তাঁর মা মোছা. সীমা বড় মেয়ের অসুস্থতায় অস্থির উঠেেেছন। মেয়ের অসুস্থতার চিন্তায় তাকে বির্মূর্ষ দেখাছিল। এ সময় কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, মেয়ে রাতেই বাড়িতে এসে তাকে মারপিটে কথা বললেও আমি তেমন গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের ঘাড়ের ব্যাথা বেড়ে যায়। কিন্তু গভীর রাতে চিকিৎসক পাব কোথায় ? তাই ফ্রিজ থেকে রবফ বের করে মেয়ের হাতে ও ঘাতে লাগিয়ে দিয়ে ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করি। কিন্তু তারপর ব্যাথায় সে সারারাত কাতরাতে থাকে। মেয়ের এমন কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছিলাম না। কম নম্বর পাওয়ার অজুহাতে শিক্ষক না হয়েও একজন সভাপতি এভাবে একজন মেয়েকে মারতে পারেন কিভাবে ? তাছাড়া সামনের নভেম্বর মাসে মেয়ের টেষ্ট পরীক্ষা।  তিনি তদন্তসাপেক্ষে ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।
আহত ছাত্রীর বাবা মো. শাকিল অভিযোগ করে বলেন, ওই বিদ্যালয় সভাপতির মুখে ভাষা খুব খারাপ। সামান্য বিষয়ে ছাত্রীদের অকথ্য,অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন বলে আমি জেনেছি।  এমন একজন মানুষ বিদ্যালয়ের সভাপতি থাকেন কিভাবে ? আমার মেয়ের ওপর যেভাবে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে তা মেনে নেওয়ার মতো নয়। আমি বিষয়টি সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মৌখিকভাবে অবহিত করেছি। তারা কি ব্যবস্থা নেয় দেখি ? আমি প্রয়োজনে আইনী ব্যবস্থা নিব।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুর রহমান প্রথমে অস্বীকার করেন। পরে তিনি জানান আমি সৈয়দপুরের বাইরে আছি। আগামীকাল গিয়ে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব।
 অভিযুক্ত তুলশীরাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও তা সম্ভব হয়নি।
 এ নিয়ে শুক্রবার মুঠোফোনে কথা হলে সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ বলেন, ঘটনাটি ওই ছাত্রীর অভিভাবক আমাকে জানিয়েছেন। আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বাইরে অবস্থান করছেন। তিনি এলেই আমি তাকে সঙ্গে নিয়ে ওই ছাত্রীর বাড়ি যাব। ঘটনার বিষয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়টি নিয়ে কথা হয় সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ওই ছাত্রীর বাবা তাঁর মেয়েকে সভাপতি কর্তৃক শারীরিক নির্যাতনের ঘটনাটি রাতেই মুঠোফোনে আমাকে জানায়। আমার কাছে সে এ বিষয়ে কি করবেন পরামর্শ চেয়েছিলেন। আমি ওই অভিভাবককে বিষয়টি ইউএনওকে জানানোর জন্য বলেছি।  

পুরোনো সংবাদ

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন 2531652203494889110

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item