ধর্ষণের ভিডিও ধারণের অপমানে আত্মহত্যা করেছে তেঁতুলিয়ায় স্কুল ছাত্রী সোনিয়া?

 মুুহম্মদ তরিকুল ইসলাম, তেঁতুলিয়া প্রতিনিধিঃ
পঞ্চগড় জেলাধীন তেঁতুলিয়া উপজেলার ৩নং সদর ইউপির গত ১০ অক্টোবর/১৭ রোজ মঙ্গলবার কালারামজোত গ্রামের রহিমা আক্তর সোনিয়া (১৪) নামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর আত্মহত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। পরিবারের দাবি অব্যাহত ধর্ষণ আর তা ভিডিও ধারণ করে ভয়ভীতি দেখানোর অপমানে আত্মহত্যা করেছে সোনিয়া।
তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওয়ার্ড বয় ও তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের মোমিনপাড়া গ্রামের মৃত সোলেসান আলীর ছেলে মনসুর আলম রাজন (৩২) এবং ক্ষুণিয়াভিটা গ্রামের বাসিরউদ্দিনের ছেলে তেঁতুলিয়া বাজারের বিকাশ এজেন্ট আতিকুর রহমান আতিক (৩৪) নামের দুই যুবক সোনিয়াকে অব্যাহত ধর্ষণ ও তা ভিডিও ধারণ করে প্রকাশ করার ভয়ভীতি দেখিয়ে ব্লাকমেইল করেছে বলে দারি করেন সোনিয়ার পরিবার।
অপমান সইতে না পেরে গত মঙ্গলবার (১০অক্টোবর) সকালে কোচিং-এ না গিয়ে রাস্তা থেকে বাসায় ফিরে এসে আত্মহত্যা করে সোনিয়া। বুধবার ময়নাতদন্তে শেষে পরিবারের কাছে সোনিয়ার মরদেহ হস্তান্তর করে পুলিশ। ঐ রাতেই ধর্ষণ এবং আত্মহত্যার অভিযোগে সোনিয়ার পরিবারের লোকজন থানায় মামলা করতে গেলেও এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ মামলা রথিভুক্ত করেনি। ঘটনার পর পরই ওঁই দুই যুবক গাঁঢাকা দিয়েছে। মেধাবী স্কুল ছাত্রী সোনিয়ার এই মৃত্যুতে বিদ্যালয় ও ঐ এলাকায় শোকের বন্যায় ছায়া নেমে এসেছে।
পরিবার ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, সোনিয়া তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল এ্যান্ড কলেজের মেধাবী শিক্ষার্থী ও উপজেলার কালারাম জোত গ্রামের পাথর শ্রমিক জাহেরুল ইসলামের কন্যা। অসুস্থ্য মায়ের ওষুধ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-এর ওয়ার্ড বয় রাজন ও পরে আতিক তাকে ধর্ষণ করে এবং ভিডিও ধারণ করে। অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সেই ভিডিও ফুটেজ প্রচার করা ও কাউকে জানালে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে গত ৩ মাস ধরে তারা সোনিয়াকে ধর্ষণ করে আসছে। গত ৯ অক্টোবর সোনিয়া ঘটনাটি তার মা ও মামাকে জানায়। অতঃপর সোনিয়ার মা সেলিনা বেগম ও মামা ফারুক ধর্ষকদের সঙ্গে কথা বলে। সোনিয়া বিষয়টি মা ও মামার কাছে প্রকাশ করায় রাজন ও আতিক মোবাইল ফোনে সোনিয়াকে অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ধর্ষণের ভিডিও ফুটেজ প্রচারের ভয় দেখায় এবং নানা রকম হুমকি দিতে থাকে। ফলে এ অপমান সহ্য করতে না পারায় অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হয় সোনিয়া। সদা হাসিখুশি সোনিয়ার আত্মহত্যায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সোনিয়ার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশিরা। দেশের  সর্বোত্তরের শান্তিপূর্ণ উপজেলা শহর তেঁতুলিয়ায় এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন স্থানীয়রা।
সোনিয়ার মা সেলিনা বেগম জানান, রাজন ও আতিক আমার মেয়েকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য করে। আমি মেয়ের হত্যাকান্ডের সু-বিচার চাই।
সোনিয়ার বাবা জাহেরুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে ধর্ষণ এবং আত্মহত্যায় প্ররোচণার অভিযোগে রাজন ও আতিকের নামে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় মামলা করতে যাই। কিন্তু পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করেনি আসামীও ধরেনি।
তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক নাজিমউদ্দিন জানান, রাজন ও আতিক ব্লাকমেইল করে দীর্ঘদিস ধরে ধর্ষণ করে আসছে। সোনিয়া সে পথ থেকে সরে আসার চেষ্টা করেছিল কিন্তু বার বার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে তাকে বাধ্য করেছে আত্মহত্যা করতে। পুলিশ এ ঘটনায় ভালো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। আসামীদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি। স্থানীয় প্রতিবেশি রওশনারা বেগম জানান, ১৪ বছরের শিশুকে তারা ফুসলিয়ে বিপদে ফেলেছে। আামারও মেয়ে আছে। তারা আর কোনো শিশুকে এমন করতে পারে। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন তিনি।
তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার জানান, ইতোপূর্বে এমন নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেনি। যারা এই ঘটনাটা ঘটিয়েছে তাদের বিচার চাই। মেয়েটা চলে গেছে, কিন্তু উপযুক্ত বিচার পেলে দেশে আইন আছে বিচার আছে এ শান্তনাটুকু নিয়ে বাঁচতে পারবো।
এ ব্যাপারে তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, সোনিয়া আত্মহত্যা করেছে সংবাদ শুনে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে প্রেরণ করে। এ বিষয়ে একটি ইউডি মামলা রেকর্ড করেছি। পরিবারের পক্ষ থেকে কারো যদি কোনো সুনিদির্ষ্ট অভিযোগ আসে লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পরে আমরা যথাযথ আইনী ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

পুরোনো সংবাদ

পঞ্চগড় 5905772479128883738

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item