স্পঞ্জ স্যান্ডেলের সূত্র ধরে নীলফামারীতে নারী শ্রমিকের হত্যাকান্ডের দুই আসামী গ্রেফতার

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ৮ অক্টোবর॥
মরদেহের কাছে পড়ে থাকা পায়ের একটি স্পঞ্জ স্যান্ডেল নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের নারী শ্রমিক মিনু আরা(২২)  হত্যাকান্ডর আসামী চিহিৃত করিয়ে দিয়েছে। অধরা এই হত্যাকান্ডটির মরদেহ উদ্ধারের ছয় দিনের মাথায় দুই হত্যাকারীকে আজ রবিবার ভোরে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
হত্যাকারী দুইজন হলো নীলফামারীর সদরের চড়াইখোলা ইউনিয়নের তেলিপাড়া গ্রামের শাবুল ইসলামের ছেলে সোহান ইসলাম ওরফে স্বাধীন (২৫) ও একই ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে রবিউল ইসলাম রবি(১৮)। হত্যার শিকার মিনু আরা একই ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া গ্রামের মমিনুর রহমানের মেয়ে। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ওই দুইজন পুলিশের কাছে মিনু আরাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার কথা অকপটে স্বীকার করে। সেই সঙ্গে গ্রেফতারকৃত সোহান ইসলাম ওরফে স্বাধীন লুকিয়ে রাখা তার অপর পায়ের স্পঞ্জের স্যান্ডেলটি পুলিশের কাছে স্বেচ্ছায় তুলে দিয়েছে।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, মিনু আরার প্রায় তিন বছর আগে একই গ্রামের গফ্ফার আলীর ছেলে সফিউল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। দুই বছর সংসার জীবনে স্বামীর শারীরিক সমস্যার কারনে বিয়ে বিচ্ছিদ ঘটে। এরপর হতে মেয়েটি তার বাবার বাড়িতে থেকে নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডের একাট কারখানায় নারী শ্রমিকের কাজ করতো। চলতি বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর মেয়েটি তার বাবা অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে বিকেলে ইপিজেড থেকে বাড়িতে ফিরে আসে। এরপর সন্ধ্যায় একটি মোবাইল ফোন  পেয়ে বাড়ি থেকে হাটতে হাটতে বের হবার পর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সেদিন রাতেই মিনু আরার  বাড়ির ৫০০ গজ অদুরে একটি সেচ ক্যানেলের ধারে একটি পায়ের স্পঞ্জ স্যান্ডেল পাওয়া যায়। সেটি মিনু আরার বাড়িতে নিয়ে রেখে দেয়া হয়। পরের দিন সকালে ঘটনাস্থলের অদুরে পাওয়া যায় মিনু আরার পড়নের ওড়না। এরপর নিখোঁজের দুই দিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর বাবা তার মেয়ে নিখোঁজে থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছিল।
এ অবস্থায় নিখোঁজের ১৯ দিনের মাথায় মুসলধারে বৃষ্টির কারনে মাটি সরে যাওয়ায় ২ অক্টোবর (সোমবার) সকালে মিনু আরার অর্ধ গলিত মরদেহ বেরিয়ে আসে স্পঞ্জ স্যান্ডেল উদ্ধারের কাছেই সেচ ক্যানেলের ধারে। পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সি বিভাগে ময়না তদন্ত করে। এতে শ্বাসরোধ করে হত্যার আলামত পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মিনু আরার বাবা সন্দেহজনক ভাবে গ্রামের দুই নারী সহ ৫ জনকে আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেছিল।

পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান, নীলফামারী সদর থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) বাবুল আকতার ও ওসি (তদন্ত) এরশাদ আলমের নেতৃত্বে পুলিশের একটি টিম ঘটনাটি নিয়ে মাঠে তদন্তে নামে। বিভিন্ন দিক তদন্ত করতে গিয়ে ঘটনাস্থলে পাওয়া যাওয়া পায়ের একটি স্পঞ্জ স্যান্ডেলের সুত্র ধরে বেরিয়ে আসে ঘটনার মুল রহস্য।

গ্রেফতারকৃত দুইজন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের নিকট অকপটে স্বীকার করে জানায়, ঘটনার দিন অপর আরেকজন ও তারা দুইজন সহ তিনজন যৌন উত্তেজনা ভেজষ ঔষধ সেবন করে এলাকার এক পতিতা বাড়িতে যায়। সেই পতিতাকে না পেয়ে তারা তিনজন ফিরে আসছিল। পথে তারা দেখতে পায় মিনু আরা সেচ ক্যানেলের ধারে বসে মোবাইলে কথা বলছে। তারা মিনু আরার কাছে গিয়ে তাকে ধর্ষনের চেষ্টা করে। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় মিনু আরা তাদের সর্ম্পকে চাচা বলে ডাকতো। এতে মিনু আরা তাদের বাধা দিয়ে এ কথা গ্রামে প্রকাশ করে দেয়ার হুমকী দেয়। এ সময় মিনু আরা তার বাড়ি পথে দৌড় দেয়ার চেষ্টা করলে ঘটনা প্রকাশের ভয়ে তারা তিনজন মিনু আরাকে জাপটে ধরে সেচ ক্যানেলের ধারে পানির নিচে ফেলে দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর সেচ ক্যানেলে খালের নিচে মাটি চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় সোহান ইসলাম ওরফে স্বাধীনের পায়ের একটি স্যান্ডেল খুলে পড়ে ঘটনাস্থলে।

স্বাধীন আরো জানায়, ওই স্যান্ডেলটি সে উদ্ধারে ঘটনার দিন (১৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ও পরের দিন (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্যান্ডেলটি খুঁজে পায়নি। এরপর বাজার হতে একটি চাপড়ার স্যান্ডেল কিনে সে পড়ে বেড়াচ্ছিল। এ সময় গ্রামের লোকজন তাকে তার নতুন চাপড়ার স্যান্ডেল পড়া নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। এতে তার মনে ভয় চলে আসে। ফলে তার অপর স্যান্ডেলটি সে তার বাড়ির ঘরে মাটি খুঁড়ে পুঁতে রেখেছিল।

অপর গ্রেফতারকৃত রবিউল ইসলাম রবি জানায়, স্বাধীনের পায়ের স্যান্ডেল ঘটনাস্থলে খোয়া যাওয়ার কারনে আজকে তারা ধরা পড়ে গেলো। সেও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে।

নীলফামারী সদর থানার ওসি (অফিসার ইনচার্জ) বাবুল আকতার বলেন, ওই স্যা্্ন্েডলের সুত্র ধরে আজ রবিবার ভোরে প্রথমে সোহান ইসলাম ওরফে স্বাধীনের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। তাকে গ্রেফতারে পর তার আরেকপাটি স্যান্ডেল অনুসন্ধ্যানে স্বাধীন নিজেই স্যান্ডেলটি বের করে দেয়। পাশাপাশি তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী অপর আসামী রবিউল ইসলাম রবির বাড়িতে অভিযান চালালে তাকেও গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু তারা আরো একজনের নাম বলেছে। তার বাড়িতে অভিযান চালালে তাকে পাওয়া যায়নি। তদন্তের কারনে তার নাম প্রকাশ করছিনা বলে তিনি জানান।

একই সুত্র মতে, গ্রেফতারকৃত এই দুইজনকে আজ রবিবার বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি জবানবন্দী প্রদানে প্রেরন করা হয়। সন্ধ্যা সারে ৭টায় আদালতে তারা হত্যাকান্ডের স্বীকারোক্তি জবানবন্দী প্রদান করেছে।

পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খান বলেন, মিনু আরা হত্যাকান্ডটি রহস্য সৃষ্টি করেছিল। কোন কুলকিনারা পাওয়া যাচ্ছিলনা। পরে পায়ের একটি স্যান্ডেলের সুত্র ধরে আজ (রবিবার) আমরা এই হত্যাকান্ডের মুল কাহিনী সহ আসামীদের গ্রেফতারে সক্ষম হলাম।নীলফামারীতে নিখোঁজের ২০দিন পর মিললো উত্তরা ইপিজেডের এক নারী শ্রমিকের মরদেহ
গত ২ সেপ্টেম্বর অনলাইন অবলোকান২৪ডটকম-এ “--” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করা হয়।নীলফামারীতে নিখোঁজের ২০দিন পর মিললো উত্তরা ইপিজেডের এক নারী শ্রমিকের মরদেহ

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 4154736454801481827

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item