ডিমলায় দশদিন ব্যাপী চার বিলুপ্ত ছিটমহল অধিবাসীদের শুমারী শুরু

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়,নীলফামারী ৫ অক্টোবর॥ 
নীলফামারী জেলার অভ্যান্তরে চারটি বিলুপ্ত ছিটমহলে অধিবাসী শুমারী শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে জেলার ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম খড়িবাড়ি নয়াবাংলা গ্রামে ওই শুমারীর শুরু হয়। দশদিন ব্যাপী এই শুমারীর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্ধোধন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজমুন নাহার।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর উদ্যোগে আগামী ১৪ অক্টোবর (শনিবার) পর্যন্ত ওই শুমারী বাস্তবায়ন করবে ডিমলা উপজেলা পরিসংখ্যান দপ্তর।

উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এমদাদুল হক খানের নেতৃত্বে শুমারী কার্যক্রমে তথ্য সংগ্রহকারী হিসেবে রয়েছেন দপ্তরটির কনিষ্ঠ পরিসংখ্যান সহকারী আসাদুল হক। তাদেরকে সহযোগিতা করছেন বিলুপ্ত ছিটমহলের নাগরিক অধিকার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এমদাদুল হক খান জানান, পরিসংখ্যান ব্যুরোর নির্ধারিত ফরমের ছকে একজন ব্যক্তির নাম, বাবা ও মায়ের নাম, ঠিকানা, পেশা, শিক্ষা, অর্থনৈতিক অবস্থা, বৈবাহিক অবস্থা, অবকাঠামো, ঘরর আসবাবপত্র সহ ৮১ ধরণের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, নাগরিকদের একটি ডাটাবেইজ তৈরি করা শুমারীর উদ্দেশ্য। ওই ডাটাবেজ ধরে সকল ধরণের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন সহজ হবে। 

শুমারীতে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পেরে মমিনুর রহমানের স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, সরকারী খাতায় আমাদের বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষদের নাম উঠলো। এতে আমরা আনন্দিত। 
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুন নাহার বলেন, শুমারী থেকে কোন বাসিন্দা যাতে বাদ না পড়ে সেদিকে নজর রেখে তাদের সকল সমস্যা চিহিৃত করে তা সমাধান করা হবে।
উল্লেখ্য, পূর্বের গণনা অনুযায়ী নীলফামারী জেলার বিলুপ্ত চার ছিটমহলের ১১৯ পরিবারের লোক সংখ্যা ৫৪৫জন। এর মধ্যে ২৮১জন পুরুষ এবং ২৬৪জন নারী। তবে অনেক পরিবার বিভক্ত হওয়ায় তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৫৩টি পরিবার হয়েছে। এই পরিবারের মধ্যে নগর জিগাবাড়িতে ৬৩, নয়াবাংলায় ৪৩, শান্তিনগরে ২৬ ও আনন্দপুরে ২১।

সুত্র মতে, উত্তরাঞ্চলের নীলফামারীর পাশাপাশি পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর, কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ী, ভুরুঙ্গামারী, চিলমারি, সদর, রাজিবপুর ও রৌমারি লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা, সদর ও পাটগ্রাম উপজেলায় অবস্থিত বিলুপ্ত ছিটমহল গুলোতে একইভাবে শুমারী শুরু হয়েছে। 

২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্য রাতে দীর্ঘ ৬৮ বছর বন্দী জীবন হতে মুক্তি পাওয়ার পর এই প্রথম বিলুপ্ত ছিটমহলের এই  শুমারির কার্যক্রম শুরু করলো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

সুত্র জানায় ৬৮ বছরের বন্দী জীবন কাটিয়ে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাওয়া বিলুপ্ত ছিটমহল গুলোতে সরকার ইতোমধ্যে ১৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ শেষ করেছে এবং উন্নয়নের কাজ চলছে। এ সকল বিলুপ্ত ছিটমহলে ৩৭ হাজার ৫৩৫ জন নাগরিক। এরমধ্যে ভারতের নাগরিক হতে ৯৮৭ জন নাম লিখালেও  দেশ পরিবর্তনে ভারত চলে যায় ৯২২ জন। বাকী ৬৫ জন ভারতের তালিকা হতে নাম কেটে বাংলাদেশে থেকে যায়। 

প্রসঙ্গতঃ বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থল সীমানা চুক্তি ও ২০১১ সালের প্রটোকল অনুসরণের মাধ্যমে উভয় দেশের স্থল সীমানা চুক্তি চূড়ান্ত ভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতের ১১১ ছিটমহল বাংলাদেশের ভূখন্ড হয়ে গেছে। অন্যদিকে ভারতের অভ্যন্তরে থাকা বাংলাদেশের ৫১ ছিটমহলও এখন ভারতের। ফলে বাংলাদেশের মধ্যে চলে এসেছে ১৭ হাজার ১৬০ একর জমি।এসব ভূখন্ডে অবস্থিত উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সড়কসহ ছোট ছোট কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, হাট-বাজার, কবরস্থান, মন্দির ও শ্মশানঘাট, কমিউনিটি সেন্টার, খাল, ঘাট ও ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করা হবে। গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে স¤পৃক্ত করার মাধ্যমে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য।প্রকল্পের আওতায় রয়েছে- ৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার উপজেলা, ১৭ দশমিক ১৯ কিলোমিটার ইউনিয়ন, ১৬৭ দশমিক ৮২ কিলোমিটার গ্রাম ও ২৩ দশমিক ১৮ কিলোমিটার মাটির সড়ক উন্নয়নের পাশাপাশি ইউনিয়ন সড়কে ২৭ মিটার কালভার্ট ও গ্রাম সড়কে ৬৮৪ মিটার কালভার্ট নির্মাণ। নির্মাণ করা হচ্ছে ১২টি মার্কেট, গ্রোথ সেন্টার, ১৫টি মসজিদ, আটটি কমিউনিটি সেন্টার, সাতটি মন্দির, আটটি পুকুর ঘাট, সাড়ে ১০ কিলোমিটার খাল, চারটি কবরস্থান ও তিনটি শ্মশানঘাটও। ২৩০ কিলোমিটার স্লোপ  প্রটেকশনসহ বিলুপ্ত ছিটমহলগুলোতে তিনটি ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ করা হবে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 691641958649512755

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item