ঠাকুরগাঁওয়ে হাটে অবাধে বিক্রি হচ্ছে পাখি

আব্দুল আউয়াল, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্ত এলাকা থেকে নির্বিচারে বন্যপাখি শিকার করছে একশ্রেণীর পাখি শিকারি। প্রকাশ্যে পাখি শিকার করে বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয় বাজারে। আর বাজার থেকেই খাঁচাবন্দি পাখি কিনছেন মধ্যবিত্ত-উচ্চ মধ্যবিত্তরা। 

উপজেলার চাড়োল ইউনিয়নের ‘লাহিড়ী হাটে’ গড়ে উঠেছে বন্যপাখি বিক্রির হাট। সপ্তাহের সোমবার ও শুক্রবার এখানে পাখির হাট বসে। অথচ হাটটি ইজারার মাধ্যমে সরকার রাজস্ব আদায় করছে। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে বলা হয়েছে, পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদ- বা উভয় দ-। একই অপরাধ পুনরায় করলে দুই লাখ টাকা জরিমানা, দুই বছরের কারাদ- বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু এসব আইন কেউ মানছেন না।

সরেজমিনে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে লাহিড়ী হাটে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির দেশি পাখি খাঁচায় করে বিক্রি করতে এসেছেন পাখি শিকারিরা। এ সকল পাখির মধ্যে ছিল টিয়া, গাড়োল টিয়া, ঘুঘু, শালিক, বক, জালালি ও লাকখা কবুতর, পানকৌড়ি ও ওয়াক্কাসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। এগুলোর মধ্যে প্রতি জোড়া টিয়া পাখি ৮০০ টাকা, ঘুঘু ৪৫০ টাকা, বিভিন্ন প্রজাতির বক জোড়া ৩০০ টাকা, জালালি ও লাকখা কবুতর জোড়া ১২০০ টাকা। এ ছাড়াও ছোট আকৃতির বিভিন্ন পাখি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা জোড়া। শিকারিরা জানান, দেশি প্রজাতির এসব পাখির প্রচুর ক্রেতা রয়েছে। তাই তারা বাড়তি আয়ের আশায় পাখি শিকার করছেন। উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের শালডাঙ্গা গ্রামের পাখি শিকারি মো. হৃদয় বলেন, সীমান্ত এলাকায় পোষা টিয়া পাখি দিয়ে ‘লেঠা ফাঁদে’ ফেলে ৮টি টিয়া পাখি ধরেছি। আর এসব পাখি লাহিড়ী হাটে প্রতিজোড়া ৮০০ টাকা করেছি।

একই উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের কুশালডাঙ্গী গ্রামের পাখি শিকারি দবিরুল ইসলাম বলেন, ধানক্ষেতে ফাঁদ পেতে ১০টি ঘুঘু ধরেছি। বাজারে সেগুলো প্রতি জোড়া ৪৫০ টাকা করে বিক্রি করেছি। আরেক পাখি শিকারি নজরুল ইসলাম বলেন, ফাঁদের মাধ্যমে তিনি ৭টি বক ও ১০টি শালিক ধরেছেন। সেগুলো নিয়ে এসেছেন লাহিড়ী হাটে। এর মধ্যে চারটি বক ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছেন।

পাখি শিকার অপরাধ জানেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপরাধ তো জানি, কিন্তু পেটের দায়ে পাখি শিকার করি। পাখি কিনতে লাহিড়ী হাটে এসেছেন আরমান হোসেন। তিনি বলেন, লাহিড়ী হাটে পাখি কেনার জন্য এসেছি। এখান থেকে দুটি টিয়া ৮০০ টাকায় কিনলাম। আরেক পাখি ক্রেতা হাফিজুল ইসলাম তানভীর বলেন, লাহিড়ী হাট থেকে দুই জোড়া বক কিনলাম ৫৫০ টাকা দিয়ে। পাখিপ্রেমী রেজাউল হাফিজ রাহী বলেন, নির্বিচারে পাখি নিধনের কারণে পরিবেশ ভারসাম্য নষ্টের পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কারণ পাখিরা ফসলের জন্য ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফসলকে রক্ষা করে। নির্বিচারে নিরীহ পাখি নিধন করা হলে ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি প্রকৃতির খাদ্যশৃঙ্খলের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।

লাহিড়ী হাটের ইজারাদার মো. আফজারুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান বলেন, পাখি শিকার ও বিক্রি করা দ-নীয় অপরাধ। লাহিড়ী হাটে পাখি বিক্রির বিষয়টি জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমেই বিষয়টি জানলাম। অচিরেই পাখির হাট বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পুরোনো সংবাদ

ঠাকুরগাঁও 3117780859298390154

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item