সৈয়দপুরে কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা

 তোফাজ্জল হোসেন লুতু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি :

  সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দিয়ে এক কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে ওই প্রধান শিক্ষকের নামে সৈয়দপুর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষক গা ঢাকা দিয়েছেন। আর এ ঘটনাটি  বর্তমানে নীলফামারী জেলার শিক্ষা নগরী হিসেবে খ্যাত সৈয়দপুরে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
 থানায় দায়েরকৃত মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ডিগ্রী কলেজের এইচএসসি’র একাদশ শ্রেণির ছাত্রী (১৬)। সে (ছাত্রী) কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে গত ২০১৭ সালের স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (এসএসসি) পাশ করে ওই কলেজে ভর্তি হয়। কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন। এর এক পর্যায়ে চলতি বছরে গত ৩ মে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন স্ত্রী’র অনুপস্থিতির সুযোগে ওই ছাত্রীকে তাঁর সৈয়দপুর শহরের নতুনবাবুপাড়াস্থ বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন প্রেম ভালবাসার সুযোগ নিয়ে ওই ছাত্রীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এ সময় ওই কলেজ ছাত্রী সেখানে কান্নাকাটি করতে থাকলে প্রধান শিক্ষক তাকে বিয়ের প্রলোভন দেয় এবং ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য নিষেধ করেন। এরপর থেকে ওই কলেজ ছাত্রী ঘটনাটির বিষয়ে সম্পূর্ণ চুপচাপই থাকে। কিন্তু গত ৯ সেপ্টেম্বর বিকেলে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের স্ত্রী আসমা বেগম কয়েকজন অপরিচিত লোকজনকে সঙ্গে নিয়ে ওই কলেজ ছাত্রীর উপজেলার কামারপুকুর দলুয়া চৌধুরীপাড়ার বাড়িতে যায়। আর সেখানে গিয়ে তিনি (আসমা বেগম) ওই কলেজ ছাত্রী ও তাঁর বাবা-মাকে নানা ভাষায় গালমন্দ করে। এতে করে ছাত্রী পরিবার ও গ্রামবাসী ঘটনাটির বিষয়ে জানতে পারেন।
এদিকে,  এ ঘটনা জানার পর গ্রামবাসী ও বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা দুশ্চরিত্র,লম্পট প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন।  গত ১১ সেপ্টেম্বর তারা বিদ্যালয়ে এসে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের বিচার ও তাকে প্রধান শিক্ষক পদ থেকে প্রত্যাহারের দাবিতে  জানিয়ে বিদ্যালয়ে এসে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় বিদ্যালয়ে এক বিশৃংখল পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। আর সব ধরনের অপ্রীতির ঘটনা এড়াতে সৈয়দপুর থানার পুলিশ সদস্যরা ছুঁটে আসেন। অন্যদিকে, এ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. বজলুর রশীদ, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রেহেনা ইয়াসমীন,উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নুরুন্নাহার শাহজাদী, কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মো. আব্দুল গফুর সরকারসহ অন্যান্য সদস্যরা বিদ্যালয়ে আসেন। তারা বিদ্যালয়ে এসে ঘটনার বিষয়ে কলেজ ছাত্রীর মুখে বিস্তারিত শুনে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপের আশ্বাস দেন। এ সময় তাদের আশ্বাস পেয়ে বিদ্যালয়ে আসা অভিভাবকরা ও এলাকাবাসী শান্ত হয়ে ফিরে যান।
এ ঘটনার পর গত ১১ সেপ্টেম্বর রাতে প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে সৈয়দপুর থানায় একটি ধর্ষন মামলা হয়েছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কর্তৃক ধর্ষনের শিকার কলেজ ছাত্রীর বাবা মো. আবু ছালেক বাদী হয়ে ওই মামলা দায়ের করেছেন।
 সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আমিরুল ইসলাম, কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকে বিরুদ্ধে ধর্ষনের মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুরে উপজেলার কামারপুকুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে তাঁর ০১৭১৬১৭৭২৩৩ নম্বর মুঠোফোনে কথা হয় কালের কন্ঠের এ প্রতিনিধির। তিনি বলেন, ঘটনাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটি একটি পরিকল্পিক ও সাজানো ঘটনা। আমি ওই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে এলাকার একটি স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে না ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। এর আগেও আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আনা হয়েছিল। কিন্তু সে সব কোন কাজে আসেনি। এবার তারা একটি ছাত্রীকে লেলিয়ে দিয়ে আমার নামে মিথ্যে অপবাদ দিয়ে আমার ক্ষতি করতে চাইছেন। ওই ছাত্রীর সঙ্গে যে আমার কোন প্রেম ভালবাসার সম্পর্ক রয়েছে তার কোন তথ্য প্রমাণ নেই। বরঞ্চ ওই ছাত্রী বিভিন্ন সময়ে মুঠোফোনে কল দিয়ে আমাকে বিরক্ত করতো। যা আমি ইতোমধ্যে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতিসহ অন্যান্যদের অবহিত করেছি।