রোহিঙ্গা মায়ের যে ছবি কাঁপিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিবেক


 মনে হলো মায়ের কোলে ঘুমাচ্ছে শিশুটি। পরম মমতায় মা চুমু খাচ্ছেন। কিন্তু তিনি আনন্দিত নন, শোকগ্রস্ত। কাঁদছেন। কেন কাঁদছেন? আর শিশুটি! সে এখন মায়ের কোল থেকে মৃত্যুর কোলে। শিশুটি এখন পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্গত, করুণ, যন্ত্রণাময় এক জনপদের চিত্র যেন। মিয়ানমারে নির্মূল হতে যাওয়া একটি জাতির চেহারা নিয়ে বাংলাদেশে হাজির হয়েছে। মৃত শিশুটি বাংলাদেশে প্রবেশ করে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের বিধ্বস্ত, ধ্বংসপ্রায়, মৃত্যুপুরীর অবস্থাকেই যেন তুলে ধরল। এ ছবি কাঁপিয়ে দিল বিশ্ববিবেক।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীদের নিপীড়ন চলছে। তারা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিচ্ছে, হত্যা করছে, ধর্ষণ করছে। অত্যাচার থেকে বাঁচতে শিশুটিকে নিয়ে তার মা স্বামীর সঙ্গে মংডু থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছিলেন। বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে আসার সময় নাফ নদে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারিয়েছে শিশুটি।

সন্তানকে বাঁচাতে না পেরে মা হামিদা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। নাফ নদের তীরে বিলাপ করতে থাকেন। এই দৃশ্য ধারণ করেছেন মার্কিন বার্তা সংস্থা এপির চিত্রগ্রাহক। তার ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হয় শিশুর মরদেহ ও বিপন্ন মানবতার আর্তনাদ। সাইবার স্পেসের মুক্ত পরিসর এই ছবিকে ছড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বজুড়ে। গতকাল শুক্রবার ভাইরাল হয় ছবিটি। ছবিটি দেখে দুঃখে ভারাক্রান্ত মানুষ। এটি যেন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মৃত্যুপুরীর বাস্তবতাকে নতুন করে আরেকবার সামনে এনেছে।

হামিদা বেগম তার সন্তানের নাম রেখেছিলেন আবদুল মাসুদ। বয়স ১ মাস ৫ দিন। স্বপ্নময় সন্তানের বিদায় মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সামরিক স্থাপনায় সন্ত্রাসীদের হামলার পর দিন থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম পল্লীতে একযোগে আক্রমণ শুরু করে সেই দেশের সেনাবাহিনী ও সন্ত্রাসীরা। বর্বরতা ও পৈশাচিকতার শিকার হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গা নাগরিক মিয়ানমার ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। অন্যদের মতোই মংডু এলাকার আবদু সালাম ও তার স্ত্রী হামিদা বেগম টেকনাফের একটি সীমান্ত দিয়ে নাফ নদ হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য ছোট্ট নৌকায় উঠেন। এ সময় হামিদা বেগমের কোলে ছিল সন্তান আবদুল মাসুদ। কিন্তু ধারণ মতার বেশি লোক ওঠায় মাঝপথে ডুবে যায় নৌকাটি।

শিশুটিকে কোলে নিয়ে মা–বাবা দুজনই শেষ পর্যন্ত এপারে পা রাখেন। কিন্তু প্রিয় সন্তান যে আর বেঁচে নেই! সেই কষ্ট কীভাবে চেপে রাখবেন মা? এই অবস্থায় সন্তানকে কোলে নিয়ে মা কপালে বার বার চুমু খাচ্ছিলেন।

এই দৃশ্য দেখে অনেকে মনে করেছিলেন শিশুটি বেঁচে আছে। হয়ত একটানা দৌড়ের উপর থাকায় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু না, শিশুটি তো চোখ খুলছেই না। পৃথিবীতে আসার ৩৫ দিনের মাথায় তাকে চলে যেতে হয়েছে পরপারে। নাফ নদের পাড়েই বুক চাপড়ে কান্না করছিলেন মা। আর তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন স্বামী।

নাফ নদের পাড়ে টহলরত বিজিবির এক কর্মকর্তা এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রাণ হাতে নিয়ে মিয়ানমার থেকে এপারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বর্তমানে বেশি আসছেন নৌ পথে। ছোট নৌকায় অনেক মানুষ ওঠার কারণে নাফ নদে প্রায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় নৌকাডুবিতে মারা পড়লেও তাদের মরদেহ পাওয়া যায় না।

জাতিসংঘের হিসাবে, প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে। মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর চলমান রোহিঙ্গা নিধন অভিযান শুরুর পর থেকেই মিলতে থাকে বেসামরিক নিধনযজ্ঞের আলামত। প্রতিনিয়ত বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে থাকে বাতাসে। মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে শূন্যে ছুড়তে থাকে সেনা ও রাখাইন সন্ত্রাসীরা। কখনো কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। আহত শরণার্থী হয়ে তারা ছুটতে থাকে বাংলাদেশ সীমান্তে। 

পুরোনো সংবাদ

এক ঝলক 6015781712850132648

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item