কিশোরগঞ্জে আগাম জাতের ধান কাটাই মাড়াই উৎসব চলছে

শামীম হোসেন বাবু,কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি-
নীলফামারীতে আগাম ধান উৎপাদনের পর কাটাই মাড়াই শুরু হয়েছে। এতে কৃষকের ঘরে উৎসব শুরু হয়েছে। চালের বাজারের দুঃসময়ে নতুন ধান উঠায় এ যেন সু-খবর  বয়ে এনেছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে জেলার কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় চাঁদখানা ইউনিয়নের উত্তর চাঁদখানা গ্রামে নতুন ধান কাটাই মাড়াইয়ের উৎসব চোখে পড়ে। আর এ জন্য ওই ধানের আনুষ্ঠানিক কাটামাড়াইয়ের মাঠ দিবস করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।
মাঠ দিবসের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক (সরেজমি উয়িং) আব্দুল হানান, রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক শাহ্ আলম, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস, অতিরিক্ত উপ-পরিচালক কেরামত আলী, কিশোরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামূল হক।
এর আগে ওই গ্রাম ঘুরে দেখাগেছে আগাম জাতের ধান উঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে কৃষকদের। কৃষকেরসাথে ব্যস্ততা দেখাগেছে কৃষি শ্রমিকদের। কৃষকরা বলছেন, চালের বাজারে দুঃসময়ে আগাম ধান উঠাতে পেরে আমরা আনন্দিত। পাশাপাশি আগাম ধান উঠায় ওই জমিতে আলুসহ ভুট্টা আবাদ করা সম্ভব হবে।
শুধু উত্তর চাঁদখানা গ্রাম নয় ওই উপজেলার সদর ইউনিয়ন, পুটিমারি, বাহাগিলি, নিতাইসহ অন্যান্য ইউনিয়নে দেখা গেছে বিস্তির্ণ এলাকার কৃষি জমিতে আগাম জাতের আমন ধানের আবাদ। বেশীরভাগ ধানের ক্ষেত ধারণ করেছে সোনালী রং।
উত্তর চাঁদখানা গ্রামের কৃষক আকবর আলী (৪৫) জানান, এবার তিনবিঘা জমিতে আগাম জাতের ধান আবাদ করেছেন তিনি। ধান লাগানোর ৯০ দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার শুরু করেছেন ওই ধানের কাটা মাড়াই। গত চার বছর ধরে ওই তিন বিঘা জমিতে আগাম ধান আবাদের পর আগাম আলু, এরপর ভুট্টা অথবা গমের আবাদ করে অনেক লাভবান হয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, আলু লাগেবার আগোত ধান ওঠে। ধান কাটি এলা জমিত আগাম আলু লাগাইম, পড়িথাকা জমির চাইতে ধানের জমিত আলু বেশী হয়। আলু অঠেয়া ভুট্টা লাগাইম। আগাম আলুর আবাদোত বেশী লাভ হয়।
তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে ওই জাতের ধানের আবাদে খরচ হয় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা, ফলন পাচ্ছি অন্তত ১৫ মন করে। বর্তমান বাজারে প্রতিমন ধানের দাম প্রায় সাড়ে সাতশ টাকা। এরপর গরুর খাদ্য হিসেবে ধানের খড় বিক্রী হবে প্রতি আটি দুই টাকার উর্দ্ধে। এতেও আয় আসবে প্রায় তিন হাজার টাকা।
একই গ্রামের কৃষক কৃষক দুলাল হোসেন (৩৫) ধান আবাদ করেছেন তিন বিঘা ধমিতে। বৃহস্পতিবার তিনিও শুরু করেছেন কাটামাড়াই।
তিনি বলেন, আগাম ধানের আবাদে কৃষকদের ভাগ্য খুলেছে। ধান চাষের পর একই জমিতে আগাম আলুর আবাদ করতে পারছি। সেখানেও লাভ হচ্ছে, এরপর আরো একটি ফসল ফলাতে পারছি আমরা।”
উপজেলার পুটিমারী ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক দুলাল হোসেন জানান, এবার ২২ শতক জমিতে আগাম জাতের ধানের আবাদ করছেন তিনি। ৯০ দিনপর ধান পাকায়  ১০ দিন আগে কাটা এবং মারাই করে বিঘাপ্রতি ১৬ মন ধান পেয়েছেন।
একইভাবে ওই এলাকার কৃষক আবির হোসেন (৪৫), ফুল হকসহ (৪০) অনেকে ওই আগাম জাতের ধান ইতিমধ্যে কাট-মারাই করেছেন। সে জমিতে এখন তারা আলু আবাদের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
গ্রামের কৃষি শ্রমিক ফরহাদ হোসেন (৪০) বলেন, আগোত আশ্বিন মাসোত কাম (কাজ) ছিল না । এলা আগুরি (আগাম) ধান, এরপর আলুর আবাদ আসিয়া হামেরা কাম পাছি। ২৫০ টাকা দিন মজুরিত কাম করেছি। ওমারাও (কৃষক) ভালো আছে, হামেরাও কাম করি বাঁচি আছি।
অপর কৃষি শ্রমিক পলিন চন্দ্র রায় (৪৫) বলেন, আগুরি ধান, আলুর আবাদ আসিয়া কামাইলের (কৃষি শ্রমিক) ঘরোত একনা অভাব দুর হইছে। আগোত এইলা দিন খুব অভাবোত গেইছে।
কিশোরীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, এবার উপজেলায় ১৪ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আগাম জাতের চায়না ও উচ্চ ফলনশীল সাড়ে চার হাজার হেক্টর জমিতে রয়েছে। গত চার সেপ্টম্বর থেকে এ  পর্যন্ত ৩৫৫ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে।
প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১৫ থেকে ১৭মন পর্যন্ত। ধান কাটার পর এসব জমি আগাম আলু আবাদের জন্য প্রস্তু হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, জেলায় আসন আবাদ হয়েছে এক লাখ ১২ হাজার ৮০১ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে গামান আবাদ হয়েছে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। এখন আবাদ উঠতে শুরু করেছে। ওই ২০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন হবে ৯০ হাজার মেট্রিকটন। চালে ওই পরিমান দাড়াবে ৬০ হাজার মেট্রিকটন। যা চালের উদ্ধমুখির বাজারে একটি বড় প্রভাব ফেলবে।

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 10728848677567025

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item