রংপুর-৬, পীরগঞ্জ আসন আ’লীগ-জাপা’র স্থানীয় সংসদ প্রার্থী নেই!

পীরগঞ্জে শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ী  ও জাপা চেয়ারম্যান এরশাদের নির্বাচনী আসন হওয়ায় স্থানীয় নেতারা উচ্চাশা প্রকাশ করেন না

মামুনুর রশিদ মেরাজুল, পীরগঞ্জ (রংপুর) থেকে ঃ
সংসদীয় আসন ২৪, রংপুর-৬, পীরগঞ্জ রাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্ব বহন করলেও স্থানীয়ভাবে আ’লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি বা অন্য কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে কোন নেতাই এবারে পীরগঞ্জবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা দেননি। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শ্বশুরবাড়ী এবং তার ও জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের নির্বাচনী আসন। এ আসনে জাপা ২ যুগ রাজত্ব করেছিল। আবার ৩৫ বছর পর আ’লীগ আসনটি উদ্ধার করেছে। সরাসরি কেন্দ্র থেকে এখানকার রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারন হওয়ায় কোন নেতারই উচ্চাশা বা স্বপ্ন নেই। তবে দু’বারের সাবেক সংসদ সদস্য ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল নুরু মন্ডল আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র এবং জাপা’র নুর আলম যাদুর নাম আপাততঃ শোনা যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ আসনে সংসদ সদস্য প্রার্থী হলে উল্লেখিত সম্ভাব্য দু’প্রার্থীর অবস্থান কি হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিয়ের উকিল বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান এ আসনে দেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর সরকারের মন্ত্রী হন। পীরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী এবং জাপা চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের নির্বাচনী আসন হওয়ায় এখানে তারা এমপি নির্বাচিত হলেই উপনির্বাচন হয়। ফলে স্থানীয়ভাবে আ’লীগ-জাপা থেকে তুখোড় নেতা গড়ে উঠেনি। এমনকি কেউ সরাসরি সংসদ প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাও পোষন করেন না। যে কারণে এবারে ঈদুল আজহায় কেউই পীরগঞ্জবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানাননি বলে জানা গেছে। আশপাশের সংসদীয় আসনগুলোতে ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থীরা ডিজিটাল ব্যানার-পোষ্টারে ছেয়ে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এখানে বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় তারাও জনগণের মাঝে দায়িত্বশীল ভুমিকা গড়ে তুলতে পারেনি। তবে জাপা থেকে দু’বার নির্বাচিত সাবেক সাংসদ নুরু মন্ডল বিএনপিতে ফিরে গিয়ে সংসদ প্রার্থীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি বিএনপি থেকে সংসদ সদস্যের মনোনয়ন পাবেন কিনা, তা নিশ্চিত নয়। কারণ অপরপক্ষে রংপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলামও সংসদ সদস্য পদের মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করবেন বলে জানা গেছে। তবে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে সাইফুল ইসলাম এখনো নুরু মন্ডলকে ডিঙ্গিয়ে যেতে পারেননি বলে জনশ্র“তি রয়েছে।
সুত্র আরও জানায়, ১৯৭৭ এর সংসদ নির্বাচনে বিএনপি থেকে মতিউর রহমান চৌধুরী, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ এর নির্বাচনে আব্দুল জলিল প্রধান জাপা থেকে দু’বার এমপি হন। ১৯৯১ এর নির্বাচনে জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ এমপি নির্বাচিত হন। পরে উপনির্বাচনে জাপা নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন এমপি হন। ওই সময় উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরু মন্ডল জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারী বিএনপির নীল নক্সার নির্বাচন প্রতিহত করতে স্থানীয় জাপা ও আ’লীগের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সক্রিয় ভুমিকা পালন করেন। পরে তিনি লাঙ্গলের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে এরশাদের ছেড়ে দেয়া আসনে নুরু মন্ডল উপনির্বাচনে জাপা প্রার্থী হয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাসুর অধ্যাপক আব্দুল ওয়াহেদ কানু মিয়াকে পরাজিত করেন। এরপর ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে জাপা প্রার্থী নুরু মন্ডল আ’লীগ প্রার্থী শেখ হাসিনাকে পরাজিত করেন। জাপা থেকে দু’বার সাংসদ হয়ে নুরু মন্ডল আবারো বিএনপিতে ফিরে গিয়ে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী হলে শেখ হাসিনার কাছে পরাজিত হন। আর ৩৫ বছর পর আসনটি আ’লীগের হাতে আসে। এরপর উপনির্বাচনে আ’লীগ প্রার্থী শিল্পপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ বিজয়ী হন। ওই সময় স্থানীয় আ’লীগে একাধিক গ্র“পের কারণে ক্ষমতায় থাকা দলটিতে সমন্বয়হীনতা ছিল বলে নেতাকর্মীদের সুত্রে জানা গেছে। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনা বিজয়ী হন। পরে উপনির্বাচনে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এমপি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদের স্পীকার হন। এ পর্যন্ত যারা সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের অনেকেই দলবদল করেছেন বা দলীয় ঘরে ফিরে গেছেন। উপজেলা জাপার সম্পাদক নুর আলম যাদু বলেন, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাপা ৩’শ আসনেই প্রার্থী দিবে। আর রংপুর-৬, পীরগঞ্জ আসনে এরশাদ স্যার আমাকেই মনোনয়ন দিয়েছে। এখানে আগের মতই লাঙ্গলের ইমেজ রয়েছে। তিনি আরও দাবী করেন, আমিই উপজেলাবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা দিয়ে ব্যানার দিয়েছি। সাবেক সাংসদ ও উপজেলা চেয়ারম্যান নুরু মন্ডল বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। দলের যেকোন সিদ্ধান্ত মেনে নেব। তবে স্থানীয়ভাবে আমার চেয়ে জুনিয়র কাউকে মনোনয়ন দিলে আমি ভেবে দেখবো। যদি বিএনপি’র মনোনয়ন না পান, তবে কি অন্য কোন দলের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা করবেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আগাম কোন কথা বলা ঠিক না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আ’লীগ ও জাপা নেতা জানান, আসনটিতে হেভিওয়েট প্রার্থীরা সরাসরি নির্বাচন করেন। তাই আমরা দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু করতে পারবো না জন্যেই সংসদ প্রার্থী হওয়ার কথা প্রকাশ করি না। আমাদের এমপি হওয়ার চিন্তা বা স্বপ্ন নেই। পাশপাশি তারা এটাও স্বীকার করেন, আমরা জনগণের জন্য অবাধে কাজ করতে না পারায় জনপ্রতিনিধিত্ব মুলক আচরন করার মতও অবস্থান তৈরী করতে পারিনি। উপজেলা আ’লীগের সম্পাদক ও পৌর মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম বলেন, এমপি প্রার্থী হিসেবে আমরা সজীব ওয়াজেদ জয়কেই চাই।
উল্লেখ্য, নুর মোহাম্মদ মন্ডল বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা রয়েছেন। বর্তমানে পীরগঞ্জে বিএনপির রাজনীতি নুরু ও সাইফুল গ্র“পে বিভক্ত হয়ে আছে।

পুরোনো সংবাদ

রংপুর 4198897579460817874

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item