কিশোরগঞ্জে দারিদ্রতাকে জয় করে ঘুরে দাড়িয়েছে ৭৩২ নারী, অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীদের অংশগ্রহন বাড়ছে

মোঃ শামীম হোসেন বাবু, কিশোরগঞ্জ,(নীলফামারী)সংবাদদাতাঃ নীলফামারী কিশোরগঞ্জ উপজেলায় পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় উত্তরাঞ্চলের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করন কর্মসুচী (উদকনিক) থেকে প্রশিক্ষন ও ঋন নিয়ে  অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ গ্রহনের মাধ্যমে দরিদ্রতার গ্রানি মুছে দিয়ে ঘুরে দাড়িয়েছে ৭৩২ জন নারী।  শতরঞ্জি ,দর্জির কাজ,  এ্যামবয়ডারি, নকশিকাঁথা ,হস্তশিল্প ,গরু,ছাগল পালন ব্যবসা বানিজ সহ বিভিন্ন কমকান্ডে নারী অংশ গ্রহনের মধ্য দিয়ে জয় করছেন দবিদ্রতা ।শুধু স্বাবলম্বী নয় টাকা রোজগারের প্রতিষ্ঠান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন অনেকে।এছাড়াও সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে নারীর অংশগ্রহন বেড়েছে অনেক। সরেজমিন ও পল্লী ও উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, সরকার দরিদ্র নারীদের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য ২০০৭ সাল থেকে কাজ করছে উত্তরাঞ্চলে দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করন কর্মসুচীর মাধ্যমে । প্রধানমন্ত্রীর দারিদ্র  বাংলাদেশ বিনির্মানের লক্ষে অসহায়, বিধবা , তালাকপ্রাপ্ত, স্বামী পরিত্যাক্ত, ও দরিদ্র গ্রামীণ জনগোষ্টিকে প্রশিক্ষনের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করাই এ কর্মসুচির একমাত্র লক্ষ । পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে অসহায় নারীদের তালিকা করে ৪ টি ট্রেডে নারীরা বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষন নিচ্ছে। ৬০ দিন মেয়াদি প্রতিটি ট্রেডে একটি কওে ব্যাচে  ৪৮ জন করে নারী প্রশিক্ষনার্থী প্রশিক্ষন নিচ্ছে।
উপজেলার চাঁদখানা ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের মেহের নেগার বিয়ের ছয় বছর পর স্বামী দুলাল হোসেন মারা যায়। দুটি পুত্র সন্তান নিয়ে তিনি অথৈয় সাগড়ে হাবুডুবু খাচ্ছিল। ছোট্ট সোনামনিদের মুখে দুবেলা শুখে ভাত তুলে দিতে পাছিলেননা তিনি । সন্তানদের সুখের জন্য একজন মা কত যে কষ্ট করতে পারে তাঁর বাস্তব উদাহরন মেহেরনেগার। স্বামীর মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া এক বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন। চৈত্র বৈশাখের কাঠ ফাটা রোদে ফসলের মাঠে নিরানীসহ ফসল কর্তনের কাজ একাই করে সন্তানদের মুখে ভাত তুলে দিয়েছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড (বি আর ডি বি) থেকে ২০০৭ সালে উত্তরাঞ্চলে দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করন কর্মসুচীর দ্বিতীয় ব্যাচে দর্জির প্রশিক্ষন নিয়ে তিনি এখন মাসে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা আয় কওে সংসার চালানোর পাশাপাশি দুই ছেলেকে পড়াশুনা করাচ্ছেন।
নিতাই ইউনিয়নের কুঠিয়ালপাড়া গ্রামের রুমা বেগমের দিন এনে দিন খাওয়ার সংসার ছিল। তিনিও ওই দারিদ্র নিশ্চিত করন কর্মসুচী থেকে পঞ্চম ব্যাচে প্রশিক্ষন নিয়ে এ্যামবয়ডারী কাজ শিখে মহিলাদের ভ্যানিটি ব্যাগ তৈরী করে ভ্যাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি  কিশোরগঞ্জ উপজেলায় পল্লী উন্নয়ন বোর্ডের অফিসে প্রশিক্ষন নেই। আবার সেখান থেকে ১০ হাজার টাকা লোন নিয়ে এ্যামবয়ডারির মালামাল কিনে মেয়েদেও ভ্যানিটি ব্যাগ তৈরী করা শুরু করি। প্রতিটি ব্যাগ ৭শ টাকা থেকে একহাজার টাকা করে বিক্রি করি। আমি আমার স্বামীর পাশাপাশি সংসাওে সাহায়তা করতে পারছি।
গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের মোতমাইননা বেগম সংসারে ঠিকমত উনুন জ্বলতোনা। মোতমাইননা বেগম বলেন, সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য আমার পাশের গ্রামের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসুচি থেকে  প্রথম ব্যাচের প্রশিক্ষনার্থী বাবলি আপার মাধ্যমে আমি অফিসে গিয়ে আমার নাম দিয়ে আসি। অফিস থেকে তারা আমাকে ডাকলে আমি  নকশি কাঁথার উপর প্রশিক্ষন নিয়ে কাজ শুরু করি। আমিও দশ হাজার টাকা লোন নিয়ে মালামাল কিনি। আমার তৈরিককৃত পণ্য বিক্রি করে যা লাভ হয় তা দিয়ে আমি সংসারের কাজ করি। এভাবে যদি আমি পণ্য তৈরী অব্যাহত রাখতে পারি তাহলে আমার সংসারের স্বচ্ছলতা ফিরে আসবেই।উপজেলা পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ও উত্তরাঞ্চলে দারিদ্রদের কর্মসংস্থান কর্মসুচীর প্রডাকশন ম্যানেজার এইচ এম রায়হান বলেন, ২০০৭ সালের ১ লা জুন হতে ২০১৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এ উপজেলায় প্রথম পর্যায়ে ২৮৮ জন নারী বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষন নিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৭ সালের এখন পর্যন্ত মোট ৪৩২ জন নারী প্রশিক্ষন নিয়েছে। ৭২০ জন প্রশিক্ষনার্থীর মাঝে এ কর্মসুচি থেকে মোট ১৬৬ জন প্রশিক্ষনার্থীকে সরকারীভাবে ১৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ঋন বিতরন করা হয়েছে।
উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর  হোসাইন বলেন, উত্তরাঞ্চলের ৩৫ উপজেলায় বি আর ডি বির  আওতাধীন উদকনিক প্রকল্পের প্রশিক্ষন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। প্রশিক্ষন গ্রহন করে কিশোরগঞ্জ উপজেলায় প্রায় ৭০ ভাগ সুবিধাভোগী স্বকাজে নিয়োজিত। উদকনিক প্রকল্পটি দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিস্তৃত করলে গোটা দেশের গরীব গ্রামীণ জনগোষ্টি এর সুফল পাবে এবং দারিদ্র বিমোচনে অগ্রনী ভুমিকা পালন করবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মেহেদী হাসান বলেন, দরিদ্র জনগোষ্টিকে প্রশিক্ষিত করে স্বাবলম্বী করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে। তাছাড়া প্রশিক্ষিত নারীদের উৎপাদিত পণ্য যেমন ভ্রানিটি ব্যাগ, পাপস, নকশি কাঁতা সহ অন্যান্য পণ্য স্থানীয় ব্যাবসায়ীদের মাধ্যমে বিক্রি করার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। আগামীতে তাদের পণ্যগুলো রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় বাজার জাত করনের ব্যাবস্থা অব্যাহত রয়েছে।




পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1591860978361620224

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item