তিস্তা বিপদসীমায়॥ভারী বর্ষনে নীলফামারী জেলা প্লাবিত॥২০ লাখ মানুষের চরম দুর্ভোগ

ইনজামাম-উল-হক নির্ণয়, নীলফামারী ১২ আগষ্ট॥
ভারী বর্ষন ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। আজ শনিবার সকাল ৬টা থেকে নীলফামারীর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার (৫২ দশমিক ৪০) ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর শোঁ শোঁ শব্দ আর গর্জন তিস্তা অববাহিকা কাঁপিয়ে তুলেছে।
অপর দিকে এক নাগাড়ে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে নীলফামারী জেলা সহ পাশ্ববর্তি এলাকা সমুহ। নদীর পানি উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করেছে। শুধু নদী লাগোয়া সকল গ্রাম নয়। অবিরাম বর্ষনের কারনে মাঠঘাট, বাড়িঘর, সড়ক, ফসলী জমি সব কিছু তলিয়ে গেছে। সেই যে গত বুধবার (৯ আগষ্ট) হতে বৃস্টি শুরু হয়েছে তা থামবার নাম নেই। চলছেতো চলছে। জেলার প্রতিটি নদী এখন বিপদসীমায়। অবিরাম বর্ষনে জনজীবন থমকে গেছে। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল কমে গেছে। মানুষজন জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি হতে বের হচ্ছেনা। ভারী বর্ষন ও নদীর পানি উপচে লোকালোকে প্রবেশ করায় এ জেলার ২০ লাখ মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কৃষকদের মতে জেলার ৫০ হাজার হেক্টর আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে।
গত ২৪ ঘন্টার বৃষ্টি নীলফামারী জেলার গত কয়েক বছরের রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। নীলফামারী সদরে ১৯৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং বৃস্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। জেলা শহরের প্রতিটি পাড়া মহল্লার পথঘাট ও বাসা বাড়ি বৃস্টির পানিতে তলিয়ে গেছে।
এ ছাড়া এ জেলার ডোমারে ২২৩, ডিমলায় ১৫০, জলঢাকায় ২০৭, সৈয়দপুরে ২৫০ ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ২৪৫ মিলিমিটার বৃস্টিপাত রেকর্ড করেছে জেলা কৃষি বিভাগ।
অপর দিকে গত ২৪ ঘন্টায় তিস্তা অববাহিকার ডালিয়া পয়েন্টে ১৮৬ মিলিমিটার বৃস্টিপাত হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানানো হয়েছে।
কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে তিস্তা নদী ছাড়াও পানি বিপদসীমা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বুড়ি তিস্তা, চারালকাটা, বুড়িখোড়া, যমুনেশ্বরী, খড়খড়িয়া, দেওনাই, খেড়–য়া, শালকি, নাউতারা, কুমলাই, ধুম, ধাইজান, চিকলি, আউলিয়া খানা, ইছামতি ।
শহরের বাবুপাড়া মহল্ল¬ার ফরিদা ইয়াসমিন জলি জানান, ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে রাস্তাঘাট সব তলিয়ে গেছে। বাসার ভেতরেও পানি প্রবেশ করেছে। এতে দুর্ভোগ বেড়েছে।
শহরের মিলনপল্ল¬ী এলাকার পাভেল রহমান জানান, পানিতে রাস্তা-ঘাট তলিয়ে রয়েছে।  বাড়ি-ঘরও হুমকির মুখে পড়ছে। শহরের সবুজপাড়া,মানিকের মোড় পাড়ার আব্দুর রশিদ জানান, যে হারে অবিরাম বৃস্টিপাত চলছে তাতে বাড়ির ঘরে পানি প্রবেশ করবে যে কোন সময়। শহরের পানি নিষ্কাশনের ড্রেনগুলো উপচে পড়ছে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার (১১ আগষ্ট) রাত থেকে আজ শনিবার সারাদিন বৃষ্টির কারনে শহরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাঠ ভর্তি পানি।
এদিকে শহরের বড় মাঠের চিত্র অন্য। নদীর মতো হয়ে গেছে মাঠটি।
কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেনীর বিজ্ঞান শাখার ছাত্র কাজী সাত জানান, সকালে যখন কলেজ আসি তখন পানি হাটুর নিচে ছিলো। এখন পানি হাটুর উপরে উঠে আসছে।
জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মোহম্মদ ইদ্রিস জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারনে কৃষি বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আজ শনিবার সাপ্তাহিক সরকারী ছুটি থাকলেও সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঠে নামানো হয়েছে। আবাদী জমিতে যে সব স্থানে পানি প্রবাহে বাধা সৃস্টি রয়েছে। তা অপসারন করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। প্রয়োজনে জমির আইল কেটে পানি নিস্কাশনের নির্দেশ দেয়া হয়।
এদিকে জেলা প্রশাসক মোহম্মদ খালেদ রহীম জানান, প্রশাসনের সকল স্থরের সরকারি কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। “কোথায় কী ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে তা নিয়ে রিপোর্ট তৈরির কাজ করা হচ্ছে।
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা ব্যরাজ ডালিয়া পানি উনয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সর্তকীকরণ কেন্দ্র সুত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার (১১ আগষ্ট) তিস্তা অববাহিকায় ডালিয়া পয়েন্টে ২৪ ঘন্টায় বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ১৩২ মিলিমিটার। একই সুত্র মতে গত বুধবার ১৫৮ ও বৃহস্পতিবার ১৬৪ মিলিমিটার বৃস্টি হয়েছিল তিস্তা অববাহিকায়। ফলে গত ৯৬ ঘন্টায় ৬৪০ মিলিমিটার বৃস্টিপাত হয়েছে। আজ শনিবার সকাল সারে  ১০ টা পর্যন্ত বৃস্টিপাত অব্যাহত ছিল। এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে তিস্তা ব্যারজের ৪৪টি জলকপাট সার্বক্ষনিক খুলে রাখা হয়েছে।
জেলা সদরের খোকসাবাড়ি ইউনিয়নের ইছামতি শাখা নদীর পানি উপচে ওই ইউনিয়নের কুমারপাড়া গ্রামটিকে তলিয়ে দিয়েছে। গ্রামের শতাধিক বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ও আবাদী জমির উপর দিয়ে প্লাবনের পানির ¯্রােত বয়ে যাচ্ছে। বন্যা কবলিত পরিবারগুলোকে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় দেয়া হয়েছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান বদিউজ্জামান।
 এ ছাড়া  ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের পূর্বখড়িবাড়ি মৌজার তিনটি গ্রামের এক হাজার  পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে।  ১৫ টি পরিবারের বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ৫০ পরিবার বসতঘর সরিয়ে নিয়েছে বলে জানায় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন।
ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের ঝাড়শিঙ্গেশ্বর গ্রামে ৭৪৫টি পরিবারের ঘরবাড়িও তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান। খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নের কিছামত গ্রামে ২৩০টি পরিবারের বসদঘরেরভেতর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম লিথন। জলঢাকা উপজেলার খুটামারী ইউনিয়নের বুড়িখোড়া নদীর পানি উপচে জেলেপাড়া গ্রামের ৫৫টি পরিবারের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে বলে জানান ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ শামীম।
ডিমলা উপজেলার ছোটখাতা কুমলাই মৎস্য খামার চাষী সমবায় সমিতির সভাপতি রফিকুল ইসলাম সরকার বলেন, টানা বর্ষন ও উজানের ঢলের কারনে তার সমিতির ৪শ একর পুকুরের ৫ লক্ষাধিক টাকার মাছ ও  ঝুনাগাছ চাপানি ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, তার এলাকার পুকুরের ২ লক্ষাধিক টাকা মাছ ভেসে গেছে। নাউতরা ইউনিয়নের নাউতরা নদীর বাঁশের সাকো ভেঙ্গে পড়ার এলাকাবাসীকে চরম দুভোগে পড়তে হচ্ছে। নাউতরা ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম লেলিন বলেন, জরুরী ভিত্তিতে চলাচলের জন্য নৌকা ব্যবহার করা হচ্ছে।
নীলফামারীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) শাহিনুর আলমের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের সকল সহকারী কমিশনার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগন সহ সকল সরকারী বিভাগের লোকজন মাঠে নেমে পরিস্থিতি পর্যক্ষন ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরপণ করছেন। তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজার রহমান জানান চারদিনে অবিবরাম বর্ষনের পানি ছাড়াও উজানের ঢলে  তিস্তা নদীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। #

পুরোনো সংবাদ

নীলফামারী 1471070979801858648

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item