বানের পানি মোর বাড়িডা নিয়া গেল’ ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে বিপাকে মানুষ

আব্দুল আউয়াল ঠাকুরগাঁও প্র‌তিনি‌ধি:
বানের পানি মোর বাড়িডা নিয়া গেল। একটা বাঁশের খুঁটিও নাই। কিছুই বাঁচাবার পারি নাই। ছুয়ালাক নেহেনে কোনো মতন স্কুলের ঘরটাত আছি। গরুলা রাস্তাত বান্ধে থুইচি। হাস-মুরগিলা ভাসে গেইছে।’
এভাবেই কষ্টের কথা গুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমাজান খোঁর ইউনিয়নের সুফিয়া খাতুন।
তিনি আরো বলেন, ‘কয়েকদিন পেট ভরে কিছু খাবা পারু নাই। খাবার নাই, খাবাও মেনায় না। ছুয়ালা সারাদিন কান্দেছে। হামাক এগনা সাহায্য কর না গে। পানি কমুছে কিন্তু বাড়িডাই তো নাই, কুন্ডে থাকিমো। তাই স্কুল ঘরে থাকেছি।’
ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যা পরবর্তীতে এমন হাজারো মানুষের দুর্ভোগ ও কষ্টের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। আকস্মিক বন্যার পরে ঠাকুরগাঁওয়ে পানি কমার সাথে সাথে পরিস্থিতি উন্নতি হতে শুরু করেছে। তবে বসতবাড়ি বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত ও ভেসে যাওয়ার কারণে এখনো ঘরে ফিরতে পারছেন না বানভাসি মানুষ। তারা খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট এবং টয়লেটের বিড়ম্বনাসহ নানা সমস্যা নিয়ে গ্রামের ও শহরের বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।
অপর দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের কিছু বানভাসি মানুষ  ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি ঠিক করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কিন্তু পুনর্বাসনের জন্য নগদ অর্থের সংকটে বিপাকে পড়েছেন বন্যায়  ক্ষতিগ্রস্ত অসহায় মানুষজন। অনেকেই অর্থের কারণে বসতবাড়ি ঠিক করতে না পারায় গাছ তলায় বা অস্থায়ী আশ্রয় কেন্দ্রে দিন পার করছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন বন্যা কবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক এলাকায় আস্তে আস্তে পানি নামতে শুরু করায় বের হয়ে এসেছে ভাঙ্গা ঘরবাড়ির ধ্বংস স্তূপ ও ভেঙ্গে যাওয়া রাস্তাঘাট। গবাদিপশুর খাদ্যেরও চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যায় ভেসে যাওয়া বাড়ি ঘরে মানুষ ফিরতেও পারছে না।
ত্রাণ ও পূনবার্সন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি তথ্য অনুযায়ী মাত্র কয়েক দিনের বন্যায় জেলার ৪০টি ইউনিয়নের ২ শতাধিক গ্রাম ও ২০ হাজার পরিবারের দেড় লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অপরদিকে নদী ভাঙনে আড়াই হাজার বসতভিটা সম্পূর্ণ ও ২০ হাজার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরবর্তী অসহায় মানুষের ত্রাণ অব্যাহত রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি ঘর ও পুনর্বাসনের জন্য ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তালিকা প্রস্তুতি চলছে।
ঘর-বাড়ি  ক্ষতিগ্রস্ত সাদেকুল, সিরাজুল, মাহেরুনসহ অনেক অসহায় মানুষ জানিয়েছেন, এবারের বন্যায় পরনের কাপড়টুকু পর্যন্ত রক্ষা করতে পারি নাই। সব ভাসিয়ে নিয়ে চলে গেছে। নিঃস্ব হয়ে গেছে অনেকেই। আবার অনেকেই টাকার অভাবে  ঘর-বাড়ি ঠিক করতে পারছি না। তাই স্ত্রী, সন্তানদের এভাবে ফেলে আমরা কর্মজীবী মানুষ কাজেও যেতে পারছি না। ঠিক মত কয়েকদিন ধরে পেট ভরে খেতেও পাচ্ছি না। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া  ঘর-বাড়ি আমাদের পক্ষে ঠিক করা কখনই সম্ভব না।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক আব্দুল আওয়াল জানান, আমরা আশা করছি আমাদের কাছে যে পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী আছে আমরা সেগুলো দিয়ে দুর্যোগ পরবর্তী সমস্যা মোকাবেলা করতে সক্ষম হব। বর্তমানে বন্যায়  ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ঘর-বাড়ি নিয়ে খুব বিপাকে রয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তের পুনর্বাসনের জন্য সরকারি ভাবে ব্যবস্থা করা হবে।

পুরোনো সংবাদ

ঠাকুরগাঁও 1613551377560915781

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item