একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, না খেয়ে মারা যাবে না-দিনাজপুরে প্রধানমন্ত্রী

মোঃ আব্দুস সাত্তার, দিনাজপুর প্রতিনিধি ॥
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে বন্যা, দুর্যোগ থাকবে। সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না এবং না খেয়ে মারা যাবে না। সবাইকে ঘর-বাড়ী নির্মাণ করে দেয়া হবে। আমরা সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
রোববার ২০ আগষ্ট দিনাজপুর জিলা স্কুল মাঠে বন্যার্তদের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্তরবঙ্গে হাহাকার ছিল, মঙ্গা লেগেই থাকতো। আওয়ামী লীগ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দুর করে। উত্তরবঙ্গে যেন মঙ্গা না থাকে আমরা তার ব্যবস্থা করি। ২০০১ সালে বিএনপি জোট সরকার ক্ষমতায় আসলে উত্তরবঙ্গে আবারো মঙ্গা দেখা দেয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশ থেকে খাদ্য কেনা শুরু করেছি। দেশে পর্যপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। আপনারা চিন্তা করবেন না। আওয়ামী লীগ বিজিবি, সেনাবাহিনী, পুলিশবাহিনী সবাই ত্রান বিতরণ করছে। জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়েছেন, আমরাও গৃহহারা মানুষের ঘর-বাড়ী করে দিচ্ছি। বন্যায় যাদের ঘর-বাড়ী নষ্ট হয়েছে, তাদের ঘর-বাড়ী করে দেয়া হবে। একটি মানুষও যাতে না খেয়ে মারা না যায়, গৃহহীন না থাকে আমরা তার ব্যবস্থা করছি। কৃষকের ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার জন্য সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, আমি বাবা, মা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। আমার আর হারাবার কিছু নেই। আমার বাবা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। আমি দেশের মানুষের জন্য আমার জীবন উৎসর্গ করেছি। প্রয়োজনে আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমিও জীবন দেব।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে গ্রুপ তৈরী করে ত্রান বিতরণ করা হচ্ছে। যাতে সুষ্ঠুভাবে ত্রান বিতরণ হয় সেদিকে নেতারা খবর রাখছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যা-দুর্যোগ এসব থাকবে। এসবের সাথে মোকাবেলা করেই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। সেই পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। যাতে করে এদেশের একটি মানুষও না খেয়ে মারা না যায়।
প্রধানমন্ত্রী এনজিওদের উদ্দেশ্যে বলেন, যারা আপনারা ঋণ দিয়েছেন তারা সাপ্তাহিক কিস্তি তোলার জন্য বন্যার্ত মানুষদের জুলুম করবেন না। এটা এনজিওদের প্রতি আমার নির্দেশ থাকবে। তিনি বলেন, ৫০ লাখ পরিবারকে চাল দিচ্ছি। আপনারা যাতে ১০ টাকা কেজি চাল খেতে পারেন তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
১৯৯৫ সালে দিনাজপুরে ইয়াসমিন হত্যার ঘটনা ঘটেছিল, সারা দিনাজপুরে আগুন জ্বলছিল। তখন খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি আপনাদের খবর নিতে আসেননি। আমি সেদিন আপনাদের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ছিলাম। সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপির সঞ্চালনায় দিনাজপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে ত্রাণ বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
অতঃপর গতকাল রোববার দুপুরে দিনাজপুরের বিরল উপজেলার তেঘরা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমপি কর্তৃক বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের প্রাক্কালে এক সমাবেশে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারীভাবে আমরা যা ত্রাণ দিচ্ছি, তা তো দিচ্ছিই। পাশাপাশি সমাজের বিত্তশালীদেরও ত্রাণ প্রদানে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সরকার সব সময় জনগণের কল্যাণে কাজ করে। এই সরকার বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা, শিক্ষাবৃত্তিসহ বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজ করেছে। বর্তমানে সারাদেশে ১ কোটি ৭৩ লাখ ছাত্র-ছাত্রী বৃত্তি পাচ্ছে। সারাদেশে বিনামূল্যে বই বিতরণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বন্যায় যেসব স্কুল-কলেজ নষ্ট হয়েছে, সেসব সরকারের পক্ষ থেকে ঠিক করে দেয়া হবে। যেসব ছাত্র-ছাত্রীর বই বন্যায় নষ্ট হয়েছে তাদের আবারও বিনামূল্যে বই দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। যাদের ঘর-বাড়ী নষ্ট হয়েছে তাদেরকে ঘর-বাড়ী তৈরী করে দেয়া হবে। যাদের ঘর-বাড়ী নেই তাদেরকে খাস জমিতে ঘর-বাড়ী বানিয়ে দেয়া হবে। বাংলাদেশের কোন মানুষ আর গৃহহারা থাকবে না। তিনি বলেন, দেশে ৮ হাজার পোষ্ট অফিসকে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। যাতে এর সুফলও মানুষ পেতে পারে। পোষ্ট অফিসে টাকা সঞ্চয় করা যায়। গ্রামের মানুষ যেন সে সঞ্চয়টুকু করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুব শীঘ্রই ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি শুরু হবে। আর অতি দরিদ্র মানুষের জন্য ভিজিডি’র মাধ্যমে চাল বিতরণ করা হবে। মোট কথা মানুষের জন্য যা যা করা দরকার সব আমরা করবো। বন্যা পরবর্তী কোন রোগের প্রাদুর্ভাব যাতে না হয় সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
বক্তব্য রাখেন, কৃষি মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডঃ মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.এইচ মাহমুদ আলী এমপি, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, খাদ্য মন্ত্রী কামরুল ইসলাম, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল (অবঃ) নজরুল ইসলাম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, সাবেক মন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন এমপি, নুরুল ইসলাম সুজন এমপি, মনোরঞ্জন শীল গোপাল এমপি, শিবলী সাদিক এমপি, সাবেক মন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায়, দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম, পুলিশ সুপার হামিদুল আলম প্রমুখ।

২০০৮ সালে নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে আবারো আমরা উত্তরবঙ্গ থেকে মঙ্গা দুর করি। গত আট বছরে কোন মঙ্গা হয়নি।

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 5794986427618460571

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item