মায়ের স্মৃতিচারণে অশ্রুসিক্ত প্রধানমন্ত্রী

ডেস্ক-
মায়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এমন আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এই স্মরণ সভায় মায়ের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘ঘাতকের দল যেভাবে আমার মায়ের ওপর গুলি চালিয়েছে, সেটা কখনো ভাবতে পারিনি। আমার মনে হয়, ঘাতকের দল জানত এ দেশের স্বাধীনতার পেছনে আমার মায়ের অবদান। আমার কষ্ট আমার মা সারাজীবন কষ্ট করে গেলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার আব্বা মায়ের মতো একজন সাথী পেয়েছিলেন বলেই তিনি তার জীবনে সংগ্রাম করে সফলতা পেয়েছিলেন। আমি সবার কাছে দোয়া চাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ছোট বেলায় একটানা দুই বছরও বাবাকে কাছে পাইনি। আমার মা টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম। সম্পর্কে আত্মীয় আমার বাবার। মাত্র তিন বছর বয়সে আমার নানা মারা যান। আমার নানার খুব ইচ্ছে ছিল আমার মা ও খালাকে লেখাপড়া করাবেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিন্তু দুর্ভাগ্য নানা যখন মা-খালাকে নিয়ে আসবেন তখন কলেরায় আক্রান্ত হন। অসুস্থ হয়ে মারা যান। আমার মায়ের দাদা তখন সিদ্ধান্ত নিলেন, তার দুই নাতিকে বাড়ির দুই ছেলের কাছে বিয়ে দেবেন।’

মায়ের শৈশব স্মৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পিতা-মাতা হারা একটি ছোট শিশু মানুষ হয়েছে একটা পরিবেশে। আবদার করার কেউ নেই, সেটা উনি ছোট্ট বেলা থেকে বুঝে গিয়েছিলেন। আব্বার জীবনটাই ছিল রাজনীতি নিয়ে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গ্রামের বাড়িতে থাকতাম দাদা-দাদির সঙ্গে। আমার ছোট ভাই কামালের জন্মের দুই মাস পর আব্বা গ্রেফতার হয়ে গেলেন। আমার আম্মার ছিল প্রচণ্ড ধৈর্য। বায়ান্ন সালে আব্বা যখন জেলে অনশন শুরু করেন, তখন আম্মা অস্থির হয়ে যান। দাদাকে বলেন ঢাকায় এসে আব্বার সঙ্গে দেখা করবেন। দাদা আমাদেরকে নিয়ে নৌকায় করে ঢাকায় আসেন। এসে জানা যায়, আব্বাকে ফরিদপুর জেলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মা ফরিদপুর জেলে গিয়ে আব্বার সঙ্গে দেখা করলেন। অনশন করে আব্বার তখন মরার মতো অবস্থা। এই সংগ্রামে পাশে সব সময় ছিলেন আমার মা। ৫৪ সালের নির্বাচনের পর আমাদের ঢাকায় নিয়ে আসা হলো। সেই সুখ বেশি দিন সইলো না। ৯২-এর ‘ক’ ধারা জারি করা হলো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখনো ছোট বেলার স্মৃতি মনে পড়ে। আমার মা, আমার দাদি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। মালপত্র নিয়ে আমরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি। আমার মায়ের কোনও চাহিদা ছিল না। আমাদের ফ্রিজ বিক্রি করে দিলেন। সোফা সেট বিক্রি করে দিলেন। হাতের গহনা বিক্রি করে দিলেন। ফ্রিজ বিক্রি করার জন্য বললেন, ঠাণ্ডা পানি খেলে ঠাণ্ডা লাগে, তোমরা খেও না। সোফা বিক্রি করার জন্য বললেন, ছোট বাসা।’

তিনি বলেন, ‘১৯৬০ সালে আব্বা জেল থেকে বেরিয়ে আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি নিলেন। ওই সময় মা মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে বলতেন, ‘আইয়ুব খান আমার জীবনে স্বর্ণ যুগ এনে দিলো।’ কারণ নিয়মিত চাকরি করছেন আব্বা। আমাদের জীবন কিছুটা স্থিতিশীল ছিল।’’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আব্বার সবচেয়ে প্রিয় ফিলোসফার ছিলেন বার্টেন্ড রাসেল। আমার তিন ভাইয়ের নাম কিন্তু ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে রেখেছিলেন মা। কামাল আতাতুর্কের নামে কামাল, কামাল আব্দুল নাসেরের নামে জামালের নাম আর বার্টেন্ড রাসেলের নামে রাসেলের নাম।’

তিনি বলেন, ‘৬০ সালে আব্বা যখন মুক্তি পেয়ে আসলেন, তখন দুটি খাতা দেয়নি। মা বারবার সেই খাতাগুলো খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু পাননি। সেই দুটি খাতার একটি বর্তমান এসবি’র দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমাকে উদ্ধার করে দিয়েছেন। সেখান থেকেই কারাগারের রোজনামচা বইয়ের প্রথম দুটি পাতা লেখা হয়েছে। আমার মনে হয়েছিল, আজকে যদি মা থাকতেন কত খুশি হতেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার মা কিন্তু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আব্বাকে সাহায্য করেছেন। ছয় দফা দেয়ার পর আব্বা একেকটা জেলায় যেতেন, বক্তৃতা দিতেন। আরেক জেলায় গেলে গ্রেফতার করা হতো। মুক্তি পেয়ে আরেক জেলায় গিয়ে বক্তৃতা দিতেন। আরেক জেলায় গেলে গ্রেফতার করা হতো। এভাবে কতবার যে আব্বাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ৬৬-সালে আব্বাকে গ্রেফতার করার পর ৭ জুন হরতাল ডাকা হয়। সেই হরতালকে সফল করতে সকল কাজ করেছিলেন আমার মা। আমার মা আসলে একজন গেরিলা।’ 

তিনি বলেন, ‘ছয় দফার পর যিনিই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতেন তাকেই গ্রেফতার করা হতো। তখন আমার মায়ের পরামর্শে মহিলা সম্পাদিকা আমেনা বেগমকে সেক্রেটারি করা হলো।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আব্বা কী চান, সেটা আমার মা বুঝতেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেয়ার আগে পাকিস্তানি গোয়েন্দা বাহিনী আমার মাকে অনেকবার ইন্টারোগেশন করেছে। কোনোভাবে তাকে মামলায় জড়ানো যায় কিনা। কিন্তু আমার মা অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবিলা করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আব্বাকে কোনোদিন সংসারের বিষয় নিয়ে মা বিরক্ত করতেন না। শুধু সংসার নয়, সংগঠনের বিষয়গুলো আমার মা দেখতেন। ছাত্রলীগ সরাসরি মা দেখতেন। আমাদের তো সারাটা জীবন ধাক্কা খেয়ে খেয়ে চলতে হয়েছে।’

দেশের ক্রান্তিকাল যখন কোনো সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার দরকার পড়ত তখন আমার মা আব্বাকে সাহায্য করতেন। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে মা আব্বাকে সবকিছু থেকে কিছুক্ষণের জন্য আলাদা করে রাখতেন। বলতেন ১৫ মিনিট শুয়ে রেস্ট নাও। অনেকে অনেক কথা বলবে, কিন্তু তোমাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। গোটা দেশ তোমার দিকে তাকিয়ে। তোমার মনে যে কথাটা আসবে সেই কথাটাই বলবে। 

পুরোনো সংবাদ

প্রধান খবর 931365860990786722

অনুসরণ করুন

সর্বশেষ সংবাদ

Logo

ফেকবুক পেজ

কৃষিকথা

আপনি যা খুঁজছেন

গুগলে খুঁজুন

আর্কাইভ থেকে খুঁজুন

ক্যাটাগরি অনুযায়ী খুঁজুন

অবলোকন চ্যানেল

item